Friday, March 6

পিঠব্যথার কারণ ও প্রতিকার


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: পিঠব্যথা সমস্যা যে কারো জন্যই খুব যন্ত্রণাদায়ক। পিঠব্যথা সম্বন্ধে জানতে হলে প্রথমে মেরুদণ্ড সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। মেরুদণ্ড একটি মাত্র হাড় নয়, ৩৩টি হাড়ের সমন্বয়ে গড়া। প্রতিটি হাড় কার্টিলেজের কুশন দিয়ে পৃথক রয়েছে। এই কুশনকে বলে ডিস্ক। এ কারণে মেরুদণ্ড সামনে-পেছনে বাঁকানো সম্ভব। মেরুদণ্ড নিখুঁতভাবে সোজাসুজি বা সিধা নয়। পাশ থেকে দেখলে এর স্বাভাবিক আকৃতি হলো ইংরেজি অক্ষর s (এস)-এর মতো। পিঠব্যথা প্রতিরোধের প্রধান শর্ত হলো যেকোনো কাজ করার সময় মেরুদণ্ডের এই আকৃতি অক্ষুণ্ন রাখা। পেট ও পিঠের মাংসপেশিগুলো মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট দেয় এবং নড়াচড়ায় সহায়তা করে। পিঠব্যথার কারণ পিঠব্যথার কারণগুলো মেরুদণ্ড এবং তার সহায়তাকারী মাংসপেশিগুলো থেকে উৎপন্ন হতে পারে, অথবা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো যাদের স্নায়ু সরবরাহের কিছু শাখা পিঠে বিস্তৃত সেখান থেকেও পিঠব্যথা হতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায়ও পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে। পিঠব্যথার সাধারণ কারণগুলো হলো- * মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রাখতে সহায়তাকারী পেট ও পিঠের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হওয়া। * মেরুদণ্ডের হাড়ের দুর্বল স্থাপন, যার কারণে মেরুদণ্ডের s আকৃতি ঠিক থাকে না। * দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে, দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা একই অবস্থানে থাকলে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণে মাংসপেশিতে টান পড়ে, মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয়। * হঠাৎ শরীর মারাত্মক ঝাঁকি খেলে কিংবা শরীর বাঁকা হলে। এতে মাংসপেশিতে টান পড়ে এবং পেশি ছিঁড়ে যেতে পারে। কোনো ভারী জিনিস ওঠানোর সময় এ অবস্থা হতে পারে। * মেয়েদের মাসিকের সময় জরায়ুর সঙ্কোচনের কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। পিঠব্যথা কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় পিঠব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে সর্বদা মেরুদণ্ডের আকৃতি স্বাভাবিক রাখতে হবে। এর জন্য যা করতে হবে তাহলো- * দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। যদি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে একটি পা প্ল্যাটফর্মের ওপরে কিংবা টুলের ওপরে রেখে দাঁড়াতে হবে। * চেয়ারে বসে কাজ করার সময় কিংবা চেয়ারে বসে থাকার সময় যদি চেয়ারটি আপনার পিঠকে ঠিকমতো সাপোর্ট দিতে না পারে তাহলে চেয়ার ও আপনার পিঠের মধ্যকার ফাঁকা জায়গাটা পূরণে কুশন ব্যবহার করুন। * ঘুমানোর সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন। যেমন- * শক্ত তোশক বা জাজিমের ওপর ঘুমান। * মুখ নিচের দিকে রেখে ঘুমাবেন না। * চিৎ হয়ে ঘুমাবেন। * যদি পাশ ফিরে ঘুমাতে চান, তাহলে সে পাশে একটা হাঁটু সামান্য বাঁকা করে ঘুমাবেন। পিঠব্যথা প্রতিরোধে পেট ও পিঠের মাংসপেশিকে সবল করার উপায়- নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে পেট ও পিঠের মাংসপেশি সবল হয়। এসব ব্যায়ামের প্রতিটি ১০ বার করতে হবে। মাংসপেশির সবলতা বাড়লে ব্যায়ামের পরিমাণ আরো বাড়ানো যাবে। যদি কোনো ব্যায়ামে ব্যথা হয় তাহলে ওই ব্যায়াম বন্ধ করে দিতে হবে। ১. হাঁটু বাঁকা করে চিৎ হয়ে শুতে হবে। পেটের মাংসপেশিগুলো সঙ্কুচিত করে পিঠকে মেঝের বিপরীতে চাপ দিতে হবে। মনে মনে পাঁচ পর্যন্ত গুণে তারপর শিথিল করতে হবে। ২. হাঁটু বাঁকা করে চিৎ হয়ে শুতে হবে। যত দূর পারা যায় মাথা ও কাঁধ ওপরের দিকে তুলতে হবে। মনে মনে পাঁচ পর্যন্ত গুণে তার পর শিথিল করতে হবে। ৩. উপুড় হয়ে শুতে হবে। ডান পা সোজা রেখে যত দূর সম্ভব ওপরে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় হাঁটু কিছুতেই ভাঁজ করা যাবে না। মনে মনে পাঁচ পর্যন্ত গুণে তার পর ধীরে ধীরে পা নামাতে হবে। এরপর বাঁ পা একই রকম করতে হবে। প্রতি পায়ের জন্য পাঁচবার এটি করতে হবে। কারো একবার পিঠব্যথা হলে ব্যথা সেরে যাওয়ার পর আবার যাতে এ ধরনের ব্যথা না হতে পারে, সেই লক্ষ্যে ব্যথা প্রতিরোধ করার জন্যও এসব ব্যায়াম করা যেতে পারে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়