কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। এ বিশ্ব ভূমণ্ডলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পানির বিকল্প নেই। শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরং আল্লাপাক যে ইবাদতের মহান উদ্দেশে আমাদের সৃষ্টি করেছেন, সেটি তার কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো পবিত্রতা। পবিত্রতার প্রথম উপকরণ হচ্ছে পানি। তাই মানুষ হিসাবে পানি শুধু আমাদের জীবনধারণের জন্য নয় বরং ইবাদতগুজার প্রকৃত মুসলমান হতেও পানির গুরুত্ব অপরিসীম।
আজকের পৃথিবীতে কল-কারখানার উত্পাদন এবং নানা কারণে পানি দূষিত হচ্ছে, পাশাপাশি আমরাও দিন দিন এ অমূল্য নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার এবং সংরক্ষণ থেকে উদাসীন হয়ে যাচ্ছি। অথচ চৌদ্দশ’ বছর আগে থেকেই ইসলাম আমাদের এ মহান নেয়ামতের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়ে এর ব্যবহারে নির্দেশনা দিয়ে আসছে।
আল্লাহ পাক যখন এ আকাশ-মাটি সৃষ্টি করলেন এবং তারপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করতে চাইলেন তখন প্রথমেই তিনি পানি সৃষ্টি করলেন। এ পানির মধ্যেই তিনি মানুষ এবং সব সৃষ্টজগতের প্রাণের সূচনা করেছেন। সূরা আম্বিয়ার ৩০নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, আর আমি তো পানি থেকেই সব প্রাণবান বস্তুকে সৃষ্টি করেছি।
যে ক’টি নেয়ামত ছাড়া এ ভূমণ্ডল অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে পারে, সেগুলোর মধ্যে পানি অন্যতম মূল্যবান। এ মহান নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে আল্লাহপাক কোরআন শরিফে সর্বমোট ৪৬ বার পানির কথা উল্লেখ করেছেন।
পানি আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত। আর আল্লাহ তার নেয়ামতগুলো অপচয় করা থেকে আমাদের নিষেধ করেছেন। অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমাদের দেশ এবং বর্তমান পৃথিবীর গবেষকরা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান অভাব এবং দূষিত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কিত, অথচ এসবের মূলে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে পানি ব্যবহারে আমাদেরই অপচয় এবং উদাসীনতা। বর্তমান আধুনিক পৃথিবীতে পানির জন্য এ হাহাকার তো আমাদেরই কর্মফল।
প্রিয়তম রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে পানি পান করার আদব শিখিয়েছেন। এগুলো শুধু সুন্নত নয় বরং এর প্রতিটিতে নিহিত রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধান। মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমার পানির পাত্রকে ঢেকে রাখ এবং বাসনগুলোকে উল্টে রাখ। আরেক হাদিসে তিনি সরাসরি পানির বড় পাত্র থেকে সরাসরি মুখ লাগিয়ে গড়গড় করে পান করা থেকে নিষেধ করেছেন বরং ছোট গ্লাস বা পেয়ালায় ঢেলে তারপর দেখে পান করার জন্য আমাদের শিখিয়েছেন।
অপ্রয়োজনে পানি নষ্ট করা যেমন পানির অপচয়, তেমনি প্রয়োজন পূরণের সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করাও পানির অপচয়। আজকাল প্রায় সব মসজিদে এমনকি গ্রামের মসজিদেও মুসলি্লদের অজুর জন্য টেপের ব্যবস্থা থাকে। দেখা যায় মুসল্লিরা টেপ ছেড়ে রেখে অজু করছেন। অজুতে যতক্ষণ মুখমণ্ডল ধোয়া হতে থাকে, ততক্ষণ টেপ থেকে পানি ফুল স্প্রিডে পড়তেই থাকে। মাথা, কান, ঘাড় মাসাহ করার সময় এবং দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সময়ও একই অবস্থা। ফলে টেপ থেকে এক ব্যক্তি অজু করলে যে পানি খরচ হয় সেই পানি বদনায় ভরলে পাঁচ ব্যক্তি অনায়েসে অজু করতে পারেন। এভাবে অজু করলে প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় চারগুণ পানি বেশি অপচয় হয়। শুধুই কি পানির অপচয়? সঙ্গে আছে বিদ্যুতের অপচয়।
ইসলাম অপচয়কে হারাম করেছে, এমনকি সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে সরাসরি সাগর থেকে অজু করলেও বেশি পানি অজুতে খরচ করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। সেখানে ইবাদত-বন্দেগির অন্যতম অনুষঙ্গ নামাজ ও অজুর সময় পানি ও বিদ্যুৎ অপচয় কতটা যুক্তিসঙ্গত তা ভাবার বিষয়। এটা কি নামাজের জন্য দেহ পবিত্র অর্জন করতে গিয়ে আত্মাকে এভাবে অপবিত্র করার নামান্তর নয়? সারাদেশের মসজিদে এভাবে অজুর কারণে যে পরিমাণ পানি অতিরিক্ত নষ্ট হচ্ছে, তা হেফাজত করতে পারলে মোট পরিমাণে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ও বিদ্যুতের অনেকটাই হেফাজত হতো। বিষয়টির দিকে মসজিদ কমিটির বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। সবচেয়ে উত্তম হবে অজুর জন্য বদনার ব্যবস্থা করা অথবা হাউজের ব্যবস্থা করা। তাহলে পানি ও বিদ্যুতের এ অপচয় রোধ হবে। একান্তই যদি কোথাও টেপের ব্যবস্থা করতেই হয়, তবুও সেখানে কিছু বদনারও ব্যবস্থা রাখা। মুসলি্লদের বদনায় অজু করতে উৎসাহিত করা কমিটির দায়িত্ব। মুসলি্লদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিষয়টি অজুখানায় বড় করে লিখেও রাখা যেতে পারে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়