জহির উদ্দিন বাবর:
মসজিদ মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান এবং ইসলামি সমাজের প্রাণকেন্দ্র। সাধারণভাবে এটি মুসলমানদের ইবাদতের স্থান হিসেবে পরিগণিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর কার্যক্রম ব্যাপক ও বিস্তৃত। এটি একাধারে মুসলমানদের ইবাদত, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং শক্তি-সাহসের উৎস। বস্তুত ইসলামি সমাজব্যবস্থা মসজিদকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের ইবাদত ও শাসনব্যবস্থা পরিচালনার মূল কেন্দ্রও ছিল মসজিদ।
ইসলামি সমাজে মসজিদের ভূমিকা অপরিসীম। প্রথমত মসজিদ আল্লাহর ইবাদতের সর্বোত্তম স্থান। রাসুল (সা.) বলেন, ‘উৎকৃষ্টতম বসার স্থান হলো মসজিদ।’ মসজিদে মুসলমানরা শুধু ইবাদতই করে না বরং ধর্মীয় আইন-কানুন, মাসয়ালা-মাসায়েল ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এককাতারে সবাই দাঁড়ানোর কারণে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের উন্মেষ ঘটে। এখানে বৈষম্যের কোনো সুযোগ থাকে না। মসজিদে পারস্পরিক সালাম, কুশল ও শ্রদ্ধা বিনিময় হয়। এতে পারস্পরিক আন্তরিকতা, স্নেহ ও ভালোবাসা জন্মায়। মানুষের মধ্যে সাম্য ও একতা সৃষ্টিতেও মসজিদের ভূমিকা অনন্য।
মসজিদকে কেন্দ্র করেই মুসলিম সমাজে মক্তব চালু হয়েছে। ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম। মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবার হাজির হওয়ার মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা লাভ হয়। মুসল্লিদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগাতেও মসজিদের ভূমিকা রয়েছে। মসজিদকে কেন্দ্র করে সামাজিক নানা কল্যাণমূলক কাজও আঞ্জাম দেয়া হয়। সমাজের শান্তি, শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য পরিবেশ বজায় রাখতে আহ্বান জানানো হয় মসজিদ থেকে। রাসুল (সা.) মসজিদে নববীতে মানবজীবনের সব দিকের মতো অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকনির্দেশনাও দিতেন। মদিনা রাষ্ট্র পুরোটাই পরিচালিত হতো মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে। এমনকি রাসুল (সা.) মসজিদ থেকেই জেহাদের আহ্বান জানাতেন এবং দিকনির্দেশনা দিতে।
এককথায় মুসলমানদের জীবনের পরতে পরতে মসজিদের ভূমিকা বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমানে কোরআন-হাদিসের জ্ঞান থেকে দূরে সরে পড়া এবং পশ্চিমা শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ায় মসজিদকে শুধুই ইবাদতখানা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। মসজিদ আর আগের মতো সেই ভূমিকা রাখছে না। মসজিদের ইমামদের নীতি-নৈতিকতা ও স্বকীয়তাও আর আগের মতো নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রকে পথনির্দেশনার মতো ক্ষমতাও নেই কোনো মসজিদের। কোরআন-হাদিসের সেই জীবন্ত মসজিদ আর এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। এখনকার মসজিদগুলোর বাহ্যিক চাকচিক্য আগের চেয়ে বেড়েছে বহুগুণ কিন্তু বাড়েনি এর উপকারের ধারা। সমাজকে প্রভাবিত করার মতো কোনো দিকনির্দেশনা জারি হচ্ছে না মসজিদের মিম্বরগুলো থেকে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়