হজরত সাইয়েদ মুহাম্মাদ নোমান বারকাতী (রহ.) ১৯১৮ সালের ৬ মার্চ (১৩৩৬ হিজরির ১৭ রমজান) ভারতের বিহার প্রদেশের রাঁকাঢ় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাইয়েদ মুহাম্মাদ হাকিম আবদুল মান্নান (রহ.) ও মা সৈয়দা সাজেদা। তিনি চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তিনি কলকাতা মাদরাসা আলিয়া (ইংলিশ সেকশন) থেকে পাঁচটি বিষয়ে স্টার মার্কসহ কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব সার্জারি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় সমভাবে পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।
১৯৪৭ সালে তিনি তার বড় ভাই হজরত মুফতি আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) সাহেবের সঙ্গে কলকাতা থেকে ঢাকায় হিজরত করেন। পরবর্তীকালে তিনি বড় ভাই মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.) এর সুযোগ্য একান্ত সহচর ও খলিফা ছিলেন। উল্লেখ্য, মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.) ছিলেন বায়তুল মোকাররমের (১৯৬৪-১৯৭৪) সর্বপ্রথম খতিব।
সাইয়েদ নোমান বারকাতী (রহ.) তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকার কলুটোলার মসজিদে মুফতিয়ে আযম পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এক অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি ওই মসজিদে প্রতিদিন এশার নামাজের পর খতমে খাজেগান পরিচালনা করতেন, যা মহান আল্লাহর রহমতে এখনও জারি আছে। বড় ভাই মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.) যখন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ নোমান বারকাতী (রহ.) কে মসজিদে 'মুফতিয়ে আযম' এর খতিবের দায়িত্ব প্রদান করেন।
১৯৭৮ সালে হজরত নোমান বারকাতী ঢাকার তৎকালীন প্রধান ঈদগাহে অর্থাৎ পুরানা পল্টন ঈদগাহে ঈদের নামাজের ইমামতি করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই ঈদের নামাজে শরিক হন। উল্লেখ্য, একই ঈদগাহে হজরত নোমানের বড় ভাই, হজরত মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.) ১৯৫৫ সাল থেকে বায়তুল মোকাররমের খতিবের দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত ঈদের নামাজের ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।
আশেকে রাসূল হিসেবে বক্তৃতা ও ওয়াজে প্রিয়নবী (সা.) এর প্রতি নোমান বারকাতী (রহ.) এর অপরিসীম ভালোবাসা সর্বদাই প্রতিফলিত হতো। সূরা আদ-দোহায় যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন_ 'হে রাসূল, আপনার প্রতিপালক আপনাকে অদূর ভবিষ্যতে এমন নেয়ামত দান করবেন যার দ্বারা আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।' এ আয়াতের তফসির করার সময় হজরত সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ নোমান বারকাতী (রহ.) আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলতেন, 'পৃথিবীর মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যস্ত আর আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সন্তুষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। তিনি আজীবন প্রতি সোমবার বাদ আসর নিজ গৃহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন। তার জীবন নবী করিম (সা.) প্রতি প্রেমের অসংখ্য নজিরে ভরপুর। তিনি তার সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের সদস্যদেরও নামাজি ও ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন।
নোমান বারকাতী (রহ.) সর্বদা পরম মাওলার জিকির-আজকারে মশগুল থাকতেন। এমনকি তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল বন্দেগিও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন। তিনি জামাতে নামাজ পড়াকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও ঝড়-বৃষ্টি, তুফানের বালাই না করে নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতেন।
হজরত নোমান সর্বদাই নবীর সুন্নাহকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করতেন। তার প্রিয় তরকারিও ছিল কদু (লাউ) যা রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছেও অত্যন্ত পছন্দনীয় ছিল। নোমান বারকাতী (রহ.) এর একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি সর্বদাই অজু অবস্থায় থাকতেন। প্রচন্ড শীতের সময় যখন অজু করা কষ্টকর ব্যাপার হত তখনও তিনি তায়াম্মুম করে পবিত্র থাকতেন। এমনকি ঘুমানোর আগেও তিনি তায়াম্মুম করে ঘুমাতেন। মূলত সম্পূর্ণ জীবন ছিল ইসলামের আলোকে আলোকিত। তিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং প্রিয়নবী (সা.) সুন্নাহকে অনুসরণ করতেই তার পূর্ণ জীবন ব্যয় করেন। এই মহান সাধক ২০০৫ সালের ২ জুন (১৪২৬ হিজরি ২৩ রবিউস সানি) আবে জমজম পান করা অবস্থায়, কালেমা উচ্চারণ করতে করতে পরম মাওলার দাওয়াতে লাব্বাইক বলে ইহধাম ত্যাগ করেন। আজিমপুর বড় দায়রা শরিফের পারিবারিক কবরস্থানে তারই ছোট ভাই গোফরান বারকাতীর পাশে তাকে দাফন করা হয়।
মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ নাইমুল ইহসান বারকাতী
পরিচালক, মুফতি আমীমুল ইহসান একাডেমি।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়