মুন্সীগঞ্জ: গত দেড় মাস ধরে দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি হরতালও চলছে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি অনেকটা স্থবির হয়ে গেলেও থেমে নেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। পুরোদমেই চলছে এই প্রকল্পের প্রাথমিক কর্মযজ্ঞ।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় দেশি-বিদেশি প্রায় ছয় হাজার সামরিক-বেসরমারিক লোক কাজ করছে। আড়াই কিলোমিটার মাঝের চরের প্রায় ৬০০ মিটার কাটা হয়ে গেছে। এছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল পাইল ড্রাইভিংয়ের হ্যামার তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জার্মানিতে। ইতোমধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ের একমাস আগেই আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে এই হ্যামার মাওয়া প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছাবে। এই হ্যামার প্রায় তিন হাজার টন ওজনে পাইল পুঁততে পারবে। পৃথিবীর একমাত্র জার্মানির মাংচ নামের প্রতিষ্ঠান এই হ্যামার তৈরি করে থাকে। তাই সেখানে তৈরি হচ্ছে এই বিশেষ হ্যামার। পাইলগুলো ১২০ মিটার মাটির নিচে পুঁতবে এই হ্যামার।
৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতুটি নির্মিত হবে। ১৫০ মিটার পর পর থাকছে পিলার। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পাড়ে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরও ২৪টি পিলার করা হবে। মোট ৬৬ পিলারের জন্য ৬৬ পয়েন্টে মাটি পরীক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে। মূল সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ডিজাইন করার সময় ১৩টি পয়েন্টে মাটি পরীক্ষা করা হয়। তাই মূল সেতুর বাকি ২৯ পয়েন্টে এখন মাটি পরীক্ষা কাজ চলছে। মূল সেতুর ৪০টি পিলারে ৬টি করে ২৪০টি এবং দু’পারের দুটিতে ১২টি করে ২৪টি অর্থ্যাৎ ২৬৪টি পাইল করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া, নেপাল এবং বাংলাদেশের পরামর্শক দল কাজ করছে সেতু বাস্তবায়নে। পদ্মা সেতুর সুপারভিশন কনসালটেন্ট ‘কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন’ নেতৃত্বে ৬টি প্রতিষ্ঠানের এই পরামর্শক দল সেতুর প্রকল্পস্থলে কর্মরত।
সেতু দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, চীন ও জামানীর কর্মযজ্ঞ ক্রমেই সরিয়ে আনা হচ্ছে প্রকল্পস্থল মাওয়ায়। তাই শিগগিরই মূল সেতুর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হবে।
দু’পাড়ের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডেই এখন চলছে হুলস্থুল কাজ। মাওয়া প্রান্তের কুমারভোগে এবং ওপারের শরীয়তপুরের মাঝিকান্দিতে এখন চলছে ওয়ার্কসপ, কংক্রিট তৈরির জন্য ব্যাচিং প্ল্যান তৈরিসহ নানা রকমের কাজ। মাওয়া, কুমারভোগ, জাজিরা কিংবা মাঝিকান্দি এরই মধ্যে যারা আসেননি, তারা এখানে আসলেই বিস্মিত হবেন। পাল্টে গেছে অনেক চিত্র। এখন কতবড় কর্মযজ্ঞ এখানে চলছে, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। প্রতিদিনই এই কাজের গতিও যেন বেড়ে যাচ্ছে। সেতুর ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিরও দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে লোকবল বাড়ানো হয়েছে।
ক্রমেই ভাড়ি যন্ত্রপাতিরও সমাবেশ ঘটছে প্রকল্প স্থলে। ২০১৮ সালের পরিবর্তে পদ্মা সেতুর কাজ এখন ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
পদ্মা সেতুর কন্সালটেন্ট ও পরিবেশবিদ ড. নাহিদ আমিন ও ড. নাজিম উদ্দিন শুক্রবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের ও নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) সারফুল ইসলাম এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন।
পরিবেশবিদরা সেতুর শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়সহ পরিবেশগত অন্যান্য বিষয় সস্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা এবং তাদের কাজের সময় দুর্ঘটনা এড়ানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে তারা খোঁজ নেন।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়