অমৃত মলঙ্গী: ‘পরদেশি’ বলতেই কিছুটা নাখোশ হলেন। ‘স্বদেশী’ শুনতেই তার ভালো লাগে। মাঝে মাঝে তাকে দুঃখ দিয়ে জনা কয়েক ‘পরদেশি’ বলে বসেন। জামাল কিছু বলেন না। জোর করে মুখে হাসি আনেন।
মা-বাবা বাংলাদেশি। জামাল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেলেও, জন্ম হয়েছে তার ডেনমার্কে। ডেনমার্কের জীবন, ফুটবল, আর বাংলাদেশ নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ ফুটবলের যে নবজাগরণ দেখা গেছে, তাতে এই জামালের অবদান অনেকখানি। মাঝমাঠে মামুনুলের সঙ্গে খেলেছেন শৈল্পিক ফুটবল। হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা।
ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে খেলতে আসার সেই প্রথম দিনগুলো জামালের জন্য অতটা সহজ ছিল না। বাংলাদেশের আবহাওয়া, খাবার সর্বপরি মানুষের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে।
‘লোকে বলত এখানে অনেক ঠাণ্ডা। তুমি থাকতে পারবে না। আমি শুধু হাসতাম। বলতাম, ঠাণ্ডা তোমরা এখনো দেখনি’, স্মৃতিচারণ করেন জামাল, ‘খাবার নিয়েও আমার বেশ সমস্যা হয়। আমি ভাত তেমন খেতে পারি না। ওখানে থাকতে সকালে দই অথবা ফল খেতাম। তারপর রুটি, সালাদ।’
যদি বাংলাদেশে না আসতেন তবে কী করতেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল বলেন, ‘খেলতাম এবং শিক্ষকতা করতাম। ইতিহাস এবং ইংরেজি পড়াতাম। বাংলাদেশে এখনো শিক্ষকতা শুরু করিনি।’
জামাল ফুটবল পাগল হলেও, তার মা-বাবার এ বিষয়ে অতটা আগ্রহ নেই। টুর্নামেন্ট শেষে ফোনে কথা হয়েছে। তাদের সিরিজ সেরা হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তারা খুশি হয়েছেন। ব্যস, এতটুকুই।
ছোটবেলায় পরিবার চাইত জামাল ডাক্তার অথবা আইনজীবী হবেন। বাবা-মায়ের কথামতো জামাল পড়ালেখা মনোযোগ দিলেও, খেলার কথা ভুলে যাননি।
এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম ফুটবল মাঠে যান তিনি। তখন তার বয়ষ ৭ থেকে ৮ বছর।
এরপর জামালের জীবনে ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা। তখন তিনি ১৭ বছরে। জামালের শরীরে গুলি লাগে। সৌভাগ্য বশত জীবনে বেঁচে যান তিনি। সেই থেকে ছেদ পড়ে তার ফুটবল স্বপ্নে, ‘ভাবতাম হয়তো কোনোদিন পেশাদার ফুটবলার হতে পারব না। বাধ্য হয়ে খেলা ছেড়ে আমাকে স্কুলে মন দিতে হয়েছিল।’
গুলি লাগর সেই দুঃস্বপ্নের কথা উল্লেখ করে জামাল বলেন, ‘আমি বাবার দোকানে ছিলাম। বাইরে দুইজন গোলাগুলি করছিল। হঠাৎ একজন লুকাতে আমাদের দোকানে প্রবেশ করে। অন্যজন তখনো গুলি ছুঁড়ছিল। তখন গুলি আমার গায়ে লাগে।’
জামাল খেলার উদ্দেশ্যে প্রথম ঢাকায় আসেন ২০১১ সালে। ট্রায়াল থেকে সেবার তাকে বিমুখ হয়ে ফিরতে হয়। সেই দিনের কথা মনে করে জামাল বলেন, ‘তখন বাংলাদেশে প্রচণ্ড গরম ছিল। আমি ডিহাইড্রেশনে ভুগছিলাম। লোকে বলছিল, ছেলেটা একদমই খেলতে পারে না।’
সেই থেকে বাপের ভিটায় খেলার স্বপ্ন ম্লান হতে থাকে জামালের। কিন্তু ত্রাতা হয়ে আসেন জাতীয় দলের আরেক ফুটবলার মিশু। জামালকে দেশে আসতে বলেন তিনি। মিশুর অনুরোধে জামাল আবার ইউরোপিয়ান ফুটবল ছেড়ে বঙ্গ ফুটবলে খেলার লড়াই চালিয়ে যান।
-----ঢাকাটাইমস
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়