Tuesday, February 10

মিসওয়াক ও আধুনিক বিজ্ঞান


মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম: ইসলাম ধর্মের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো পবিত্রতা। তার মধ্যে মিসওয়াক ও অজু- বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিধান। এ বিধান পালনের মাধ্যমে যেমনিভাবে মানবদেহের বিভিন্ন উপকার সাধিত হয়; ঠিক তেমনিভাবে মানবদেহকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রাচীরের মতো সহায়তা করে থাকে। মিসওয়াক মানুষের মুখের ভেতর জমে থাকা জার্মগুলোকে বের করে দিয়ে মুখকে রাখে সতেজ ও নির্মল। তেমনিভাবে অজু মানুষের শরীরের ময়লা দূর করে মানবদেহে আনে সতেজতা ও অদম্য স্পৃহা। তাই ইসলামে এ দুইটি বিষয়কে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করে তা পালনের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) নামাজের আগে অজুর সময়, ঘুম থেকে ওঠে, বাড়িতে প্রবেশের সময়, দিনের প্রথম ও শেষ ভাগে, আহারের আগে ও পরে মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- নিশ্চয়ই রাসূল (সা.) বলেছেন, 'আমার উম্মতের যদি কষ্ট না হতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করার হুকুম করতাম।' (বোখারি : ৫৪৫)। এ প্রসঙ্গে অপর এক বর্ণনায় এসেছে- আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, 'রাসূল (সা.) যখন নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি মিসওয়াক করতেন।' (মুসলিম : ৬১৪)। এছাড়া রাসূল (সা.) যখন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য জাগতেন, তখন মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, 'রাসূল (সা.) যখন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য জাগতেন, তখন মিসওয়াক ব্যবহার করতেন।' (মুসলিম : ৬১৬)। কোনো লোক মিসওয়াক করলে তার মুখ পবিত্র থাকে এবং তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূল (সা.) বলেছেন, 'মিসওয়াক মুখ পবিত্র রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি আনয়ন করে।' (ইবনে মাজাহ : ২৮৯)। এভাবে হাদিসের আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে, 'আবু মুসা আল-আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেছেন, 'আমি নবী করিম (সা.) এর কাছে গেলাম, তখন তাঁর মুখে মিসওয়াক ছিল।' (মুসলিম : ৬১৫)। আমরা মুসলমান, আমাদের কাছে রয়েছে ১৪০০ বছর আগের মহানবীর শিক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে দ্বীন, দুনিয়ার কামিয়াবি। উল্লেখ্য, মিসওয়াকের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে আছে মুখের দুর্গন্ধ দূর করা, হৃৎপিন্ডের ঝিল্লির পুঁজ নিরাময়, দন্ত চিকিৎসা, মুখের স্বাদ বৃদ্ধি, গালের ঘা নিরাময়, দাঁতের হরিদ্রাভ দূরীকরণ, বিভিন্ন রোগজীবাণু রোধ ও মস্তিষ্ক প্রসারিতসহ অন্য নানাবিধ উপকারিতা। এ প্রসঙ্গে হেকিম এসএম ইকবাল বলেন, আমার কাছে একজন রোগী এলো, যার হৃৎপিন্ডের ঝিল্লিতে জমা হয়েছিল অনেক পুঁজ। এর জন্য লোকটি চিকিৎসাও নিচ্ছিল; কিন্তু কিছুতেই সে লাভবান হচ্ছিল না। অবশেষে অপারেশনের মাধ্যমে পুঁজ বের করা হলো, কিছুদিন পর আবার পুঁজ জমা হয়ে গেল। আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পেলাম, তার দাঁতের মাড়িতে ক্ষত আছে, তাতে পুঁজ ভর্তি। আর দাঁতের মাড়ির পুঁজই তার হৃৎপিন্ডে জমা হচ্ছে। আমি চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে পিলু গাছের মিসওয়াক দিয়ে দিলাম। ফলে অতি অল্পদিনেই তিনি ভালো হয়ে গেলেন। (হেকিম এসএম ইকবাল, মাসিক জাহান, পৃ. ১৩)। লেখক : সহকারী অধ্যাপক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়