হাবীবুল্লাহ আল মাহমুদ:
নিদ্রা মস্তিষ্কের খাদ্য। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, তেমনি মস্তিষ্কের সঠিক চলনক্ষমতা বজায় রাখতে নিদ্রার প্রয়োজন হয়। নিয়মিত নিদ্রা না হলে মানুষের জীবন-কর্মে নেমে আসে অসারতা ও অস্বস্তি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'আমি তোমাদের জন্য নিদ্রাকে বানিয়েছি ক্লান্তি ঘোচানোর উপায় হিসেবে।' (সূরা নাবা : ৯)।
আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর ফলেই জগতের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে দিন ও রাতের পালাবদল হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার আর দিনকে বানিয়েছেন দেখার জন্য।' (সূরা মোমিন : ৬১)।
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে, 'এবং তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে রাত ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং তোমাদের কর্তৃক তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে সেসব লোকের জন্য, যারা কথা শোনে।' (সূরা জুমা : ২৩)।
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনের অনুষঙ্গ নিদ্রার জন্য উত্তম দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। অর্থাৎ ঘুমের জন্য সর্বোত্তম ও সবচেয়ে উপযোগী হলো রাত। কারণ দিনের কোলাহল ও কলরব থেকে রাতের প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাতের অাঁধার ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসমান থেকে নেমে আসে নিঝুম নীরবতা ও নির্জনতা। ফলে এ সময়টায় নিরবচ্ছিন্ন ও প্রশান্ত ঘুম হয়। সতেজ হয়ে ওঠে দেহ ও মস্তিষ্ক।
নিদ্রা গ্রহণের প্রস্তুতি : মোমিনের প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকনির্দেশনায়। এতেই মানবজীবনের কল্যাণ ও সফলতা। সামান্য থেকে সামান্য কর্মের মাধ্যমে মোমিন অর্জন করে নেয় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সর্বোত্তম স্থান জান্নাত। সে লক্ষ্যে নিদ্রা গ্রহণের প্রস্তুতিমূলক সুন্নতের মধ্যে রয়েছে-
ক. রাসূল (সা.) এশার নামাজের পর অনর্থক গল্প না করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমানোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। (বোখারি : ৫৪৭)।
খ. অজু করে নিদ্রায় যাওয়া। কারণ নিদ্রা হলো মৃত্যুর ভাই। মানুষ জানে না রাতের নিদ্রা তার শেষ নিদ্রা কিনা। কাজেই যদি নিদ্রা অবস্থায় মৃত্যু হয় আর তখন অজু অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে এ মৃত্যু হবে অত্যন্ত সুন্দর। আর এটাই মোমিনের একান্ত কাম্য। (বোখারি : ৬৩১১)।
গ. নিদ্রা গ্রহণের আগে বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নেয়া। (বোখারি : ৬৩২০)।
ঘ. মিসওয়াক করা। খাদ্যদ্রব্য ও পানির পাত্র ঢেকে রাখা।
চ. বাতি নিভিয়ে নিদ্রায় যাওয়া। (বোখারি : ৫৬২৩)।
ছ. ঘরের দরজা ভালোভাবে বন্ধ করে ঘুমানো।
জ. নিদ্রা গ্রহণের আগে পরিহিত কাপড় পরিবর্তন করে নিদ্রার কাপড় পরিধান করা।
ঝ. কিছু পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত করা। (বোখারি : ৩২৭৫)।
ঞ. নিদ্রার দোয়া পড়ে বিছানায় যাওয়া। (বোখারি : ৬৩১৪)।
নিদ্রা গ্রহণের পদ্ধতি : রাসূল (সা.) এর আমল থেকে জানা যায়, তিনি নিদ্রায় ডানপার্শ্ব হয়ে শয়ন করতেন এবং ডান হাত ডান চোয়ালের নিচে রাখতেন। উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করেছেন। এতে মহান আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হোন। (বোখারি : ৬৩১৪)।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতেও অধিক সময় উপুড় কিংবা বাঁপার্শ্ব হয়ে নিদ্রা গ্রহণে হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
রাসূল (সা.) নিদ্রার জন্য শক্ত বিছানা পছন্দ করতেন। শক্ত বিছানা নানা রোগ প্রতিরোধ করে। বিশেষত নিয়মিত শক্ত বিছানা গ্রহণ করলে কোমরের ও মেরুদন্ডের ব্যথার সম্ভাবনা কম থাকে।
প্রাসঙ্গিক কিছু নির্দেশনা : অনেকে নিদ্রার মধ্যে কোনো ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখায় কিংবা মানবিক কোনো কারণে অাঁতকে ওঠে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো আউজুবিল্লাহ পড়ে বাঁদিকে সামান্য থুতু নিক্ষেপ; অর্থাৎ থুতু নিক্ষেপের মতো করে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া। এতে আর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না।
আজকাল অনেকে অনিদ্রা রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকার পরও নিদ্রা মেলে না। আবার অনেকে নিয়মিত ট্যাবলেট গ্রহণ করে থাকেন। এতে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো- কোরআন তেলাওয়াত করা। ভালো কোনো বই কিংবা দ্বীনি ফিকিরে আত্মমগ্ন হওয়া। ইনশাআল্লাহ এতে যথাসম্ভব দ্রুত নিদ্রায় যাওয়া সম্ভব। যদি এতে ফায়দা না হয়, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়