Thursday, February 12

কানাইঘাটে উৎপাদিত সুপারি নিয়ে বিপাকে চাষীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা অবরোধ ও হরতালে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় এবং পথে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানীর কারণে কানাইঘাট এলাকার হাজার হাজার একর জমির উৎপাদিত সুপারি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। কানাইঘাট কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের ১০ হাজার হেক্টর জমিতে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সুপারি চাষ করে আসছে কৃষকরা। যেখান থেকে বছরে ৫ কোটি টাকার সুপারি বিক্রি করেন প্রান্তিক চাষীরা। প্রতিবছর কাঁচা ও শুকনো সুপারি প্রান্তিক চাষিরা কানাইঘাট, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্থের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারলেও এবার ঘটেছে বিপত্তি। পথে পথে আইনশৃংখলা বাহিনীর হয়রানী এবং চলমান হরতাল ও অবরোধে ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলার সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে তজম্মুল আলী জানান, তার নিজস্ব ২০ একর জমিতে ৭ হাজার সুপারিগাছ রয়েছে। প্রতিবছর এসব গাছের ফলন থেকে ৭ লক্ষ টাকার সুপারি বিক্রি করা গেলেও এবার পাইকার না আসায় অর্ধেকও বিক্রি করতে পারেননি। লক্ষীপ্রাসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মঈন উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নে সোনাতন ১ম ও ২য় খন্ড, নুনছড়া ১ম ও২য় খন্ড, বাউরবাগ ২য় খন্ড এবং বড়বন্দ ২য় খন্ড এ ৭ গ্রামের ১০ হাজার কৃষকের মূল আয়ের উৎস সুপারি চাষ। কিন্তু সুপারি নিয়ে কানাইঘাট থানার বাইরে বের হলেই জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ জৈন্তাপুর, সিলেট জেলা ডিবি ও এসএমপি পুলিশ গাড়ি আটকিয়ে বৈধ কাগজ পত্র থাকার পরও ব্যবসায়ী ও কৃষকদের হয়রানী করে। এ অবস্থায় অযাচিত এ হয়রানীর কারণে পাইকাররা এখন আর কানাইঘাটের সুপারি ক্রয় করতে আসছেন না। কানইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মো. জাকারিয়া জানান, গত বছরের ২৫ নভেম্বর উপজেলা আইনশৃংখা কমিটির সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সুপারি চাষীদের এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। সভায় বাংলাদেশী সুপারি বাজারজাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতিপত্র ও বাজার ছাড়পত্র সহ সুপারি বিক্রি করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এভাবেই এখন সুপারি বিক্রি করছেন কানাইঘাটের প্রান্তিক চাষীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী সিদ্দিক আহমদ অভিযোগ করেন, সিলেট বা দেশের অন্য স্থানের পাইকাররা কানাইঘাটে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে সকল কাগজপত্র সহ সুপারির চালান সিলেট অথবা দেশের যে কোন স্থানে নেয়ার পথে সিলেট সেক্টরের ৫ ব্যাটালিয়নের বিজিবি এবং কানাইঘাট থানা সহযোগিতা করলেও কানাইঘাট থানার বাইরে বের হলেই পুলিশ এবং অন্য ব্যাটালিয়নের বিজিবি তা আটক করে উৎকোচ দাবি করে। টাকা না দিলে সুপারির চালান ও বৈধ কাগজ ছিড়ে ফেলে আটক করে কোর্টে চালান করে দেয় বলে অভিযোগ তার সুরাইঘাট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাওলানা আহমদ হোসেন জানান, সিলেট শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃংখলা বাহিনীর এ ধরণেরর সুপারি আটকের ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ব্যবসায়ীরা হয়রানি থেকে বাঁচতে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। এমন হয়রানীর পর পুলিশ, বিজিবি ও সরকার দলীয় নেতাদের বাসায় ব্যবসায়ীরা ধর্না দিলেও এ হয়রানী থেকে তারা রেহাই পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে সুপারি চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়