Tuesday, February 3

চট্টগ্রামে নাশকতায় ঘরছাড়া ১০ হাজার নেতাকর্মী!


ইব্রাহিম খলিল: চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে ঘরছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের ১০ হাজার নেতাকর্মী। পুলিশের ধারণা এরাই নাশকতার কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল ও অবরোধে নাশকতার দায়ে মহানগর এলাকায় ১৭টি এবং জেলার ১৫ উপজেলায় ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে নাশকতায় উপজেলা ও মহানগরে চার হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ২০ দলীয় জোটের প্রায় সাত থেকে ৮ হাজার নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাত রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি আসামি। যাদের গ্রেপ্তারের জন্য একাধিকবার অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে কিছু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সিংহভাগ নেতাকর্মী। চট্টগ্রামে নাশকতায় ঘরছাড়া ১০ হাজার নেতাকর্মী! সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে তারাই টানা অবরোধ ও হরতালে নাশকতায় লিপ্ত। তিনি বলেন, পালিয়ে বেড়ানোর সুবাদে এসব নেতাকর্মী অগ্নিসংযোগ, পেট্টলবোমা নিক্ষেপসহ নানা রকম ভয়ানক নাশকতা ঘটিয়ে চলেছে। যার কারণে পুলিশও তাদের খোঁজে পাচ্ছে না। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন। এরপরও পুলিশ নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সিএমপি সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় অবরুদ্ধ করার ঘটনায় বন্দরনগরীর কাজীর দেওড়িতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ২০টির বেশি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পরে ৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় কোতোয়ালি থানার এসআই একরামউল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। সংঘর্ষের ঘটনায় মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, উত্তর জেলার আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। চট্টগ্রামে নাশকতায় ঘরছাড়া ১০ হাজার নেতাকর্মী! মামলায় ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০০ জনকে। মামলাটি বর্তমানে সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পরিচালিত হচ্ছে। এই মামলায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জামিন পেলেও বাকিরা কারাগারে। অনেকে আত্মগোপনে। অজ্ঞাত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে অনেকেই এখন রাত হলে বাড়িতে থাকছেন না। একইভাবে অপর এক অভিযোগে চকবাজার থানায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয় আরো একটি মামলা। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ২০০ জনকে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা জানান, অজ্ঞাত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বেশির ভাগই বাড়ির বাইরে থাকছেন। কেউ কেউ শহর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে পুলিশ সন্দেহের তালিকায় রাখায় কেউই বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছেন না। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা রাস্তায় নামার আগেই পুলিশের মামলা তৈরি থাকে। গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সত্যিই নিন্দনীয়। বর্তমান সরকার একের পর এক মামলা দিয়ে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বাড়িছাড়া করেছে। এসব লোকজন রাত হলে পরিবারের কাছে ফিরতে পারে না। কারণ পুলিশ এসে তাদের ভয় দেখিয়ে থানায় তুলে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলাগুলোতে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে এখন বন্দীদের ঠাঁই নেই। সেখানে অধিক বন্দীর কারণে ঠাসাঠাসি ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এক হাজার ৮০০ বন্দীর জায়গায় মাত্র ১০ দিনে তা হয়ে গেছে ২৮০০। দমন-নিপীড়ন করে বিরোধী দলের ওপর হয়রানি কখনোই শুভ নয়। তবে কেবল নগর নয়, শহরের বাইরে উপজেলাগুলোতেও দায়ের করা হয়েছে একের পর এক অজ্ঞাত মামলা। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ালেও নাশকতার সাথে জড়িত নন। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আধিপত্য বিস্তারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পেট্টলবোমা, ককটেল মেরে মানুষ খুন করছে। যা শান্তিপূর্ণ হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালনের সুবাদে ২০ দলীয় জোটের ঘাড়ে তুলে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। আর পুলিশকে দিয়ে মামলার আসামি বানিয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যাবে না। ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অনেক সময় আসামি কিংবা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায় না। তাদেরকে ধরতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পরে যাচাই বাছাই শেষে গ্রেপ্তার করা হয়। ----- ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়