ঢাকা: চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে সরকার।এ জন্য সংলাপের পথও খুঁজছে এই শাসক দলটি। তবে তার আগে সরকার বোঝার চেষ্টা করছে যে, বিএনপি আসলে কি চাইছে এবং তাদের আসল দাবি-দাওয়াইবা কী। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করা যায় কি না ভাবছে তা নিয়েও। তবে এর পাশাপাশি পেট্রলবোমা হামলাকারীদের রুখতে চলমান অভিযান চালানোর পক্ষে সরকার। এ ব্যাপারে সরকার কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, আমরা সংলাপ যে চাইছি না তা না। তবে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপিসহ অনান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলাচনা করা যায় কিনা বা গেলেও তা কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, তবে এর মানে এই নয় যে বিএনপি-জামায়াত যে সহিংসতা করছে তা তাদেরকে করতে দেয়া হবে। এর বিরুদ্ধে অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের অরাজকতা মোকাবেলায় প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে। তবে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, যদি তারা এসব হামলা বন্ধ না করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যমান সংকট থেকে বের হয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে ভেতরে ভেতরে কথাবার্তা চলছে বলে জানা গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পেলেই কেবল এ বিষয়টি নিয়ে আগানো হবে।সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলকে বসার জন্য ডাকবেন। তবে জামায়াতকে এই সংলাপে ডাকা হচ্ছে না সূত্রটি জানিয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে.কর্নেল (অব) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং সংলাপে বিশ্বাসি।জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসার জন্য সবসময় তৈরি।
তিনি আরো বলেন, চলমান সংকট নিরসনে বিদেশি কূটনীতিক, দাতাসংস্থা, স্থানীয় বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের সদস্যগন, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাই চাচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংলাপে বসুক। এদের সবার পরামর্শ বাদ দেয়ার কোনো উপায় নেই। তাই সংলাপ অসম্ভব নয়।
ফারুক খান বলেন, আলোচনার আগে বিএনপি-জামায়াত জোটকে অবশ্যই এসব নাশকতা বন্ধ করতে হবে। তাদের হরতাল-অবরোধ বন্ধ করতে হবে। নাহলে এ অবস্থায় সরকার কখনোই সংলাপে বসবে না।
এ প্রসঙ্গে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য জানান, গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে কাল। সেখানে সংলাপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই সরকার খালেদা জিয়ার ব্যাপারে নরম অবস্থান নিয়েছে। খালেদা জিয়া চাইলে তাদের যে কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন।
যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হামলা ও নাশকতার জন্য হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তবে সরকার বলেছে এই মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদষ্য নূহ-উল-আলম লেনিল বলেছেন, আমরা সংলাপের বিরোধী নই। তবে তার আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।তবে তিনি সংলাপ নিয়ে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, এ ভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি থেকে তাদেরকে সরে আসতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্র্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনোই সংলাপের বিপক্ষে নয়। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হবে না। সংলাপের আগে বিএনপিকে সহিংসতার পথ থেকে সরে আসতে হবে। তাদেরকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। পরিবহার করতে হবে হরতাল-অবরোধের রাজনীতি। এসব থেকে সরে আসলেই সংলাপ নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যদিও ৬ জানুয়ারি থেকে চলা অবরোধে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোক সহিংসতার কারণে মারা গেছেন। আর মঙ্গলবার কুমিল্লায় সাত জন পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়