অমৃত মলঙ্গী
এক.
আচ্ছা রুবেলের কী হবে? ও কি বিশ্বকাপে খেলতে পারবে? যদি না পারে তবে কী হবে? বিশ্বকাপ শব্দটি শুনলেই এখন ক্রিকেট ভক্তদের মনে এই প্রশ্নগুলো সবার আগে আসছে। কেননা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে রুবেলের মতো পেসার বড় দরকার। তবে যতই দরকার হোক তার চেয়ে ঢের দরকার ন্যায় বিচার। অন্যথায় দলের ভেতর আরো রুবেলের জন্ম হবে। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলের কথা বলতে যেয়ে রুবেল প্রসঙ্গ টানার যৌতিকতা এড়ানো যায় না। বাগেরহাটের নাগেরবাজার এলাকার এই ক্রিকেটারই এখন বাংলাদেশ দলের বড় মাথাব্যথা।
মাথাব্যথা হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। দলের অধিনায়ক মাশরাফিও পেসার। চূড়ান্ত দলে আছেন তাসকিন, আল-আমিনও। মূল একাদশে মাশরাফির সঙ্গে দুই জন পেসার থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সে ক্ষেত্রে রুবেল ছিলেন অন্যতম ভরসা। এখন যদি রুবেলকে দল না পাওয়া যায়, তবে চিন্তার ভাজ চওড়া হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া মাশরাফিকে নিয়ে একটা পরিচিত ভয় সবসময়ই থেকে যায়-ইনজুরি!
দুই.
ওপেনার নিয়ে নির্ভার থাকা যাবে তো? তামিমের সঙ্গে ওপেন করার কথা এনামুলের। বাংলাদেশ দলের যত চিন্তার নাম এই ওপেনিং জুটি। এই যায়গায় এখন পর্যন্ত কম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। একমাত্র তামিম ছাড়া নিজের যায়গা কেউ পাকাপোক্ত করতে পারেননি। সেই তামিমকে নিয়েও এবারের বিশ্বকাপে চিন্তামুক্ত থাকা যাচ্ছে না। ইনজুরির করাল গ্রাসে পড়ে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন তিনি। কতটা সু¯’ হয়ে ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি ডাক্তাররাও! এদিকে ইমরুল কায়েসকেও দলে রাখা হয়নি।
তিন.
জুবায়ের নেই। সে জন্য নাকি কোচের মন ভরেনি। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় লেগস্পিনাররা এমনিতেই কার্যকর হয়। দেশটিতে প্রতিটি প্রাদেশিক দল একজন লেগস্পিনার খোঁজে। শুধু আমরা খুঁজিনি! কোচ নাকি বলেছিলেন জুবায়েরকে রাখতে। তবে নির্বাচকরা সে পথে না হাঁটলেও, একেবারে মুখ ভার করে বসে নেই শ্রীলঙ্কান হাথুরেসিংহে, ‘ যে খেলোয়াড়দের আমি পেয়েছি, তাতে আমি খুশী। এটা ঠিক যে, একজন কোচ হিসেবে যাকে যাকে চাইবো, সবাইকে পাওয়া সম্ভব না। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা হয়েছে। আমি খুশী কারণ, যাদের চেয়েছিলাম, তার মধ্যে অনন্ত ১২-১৩ জন খেলোয়াড়কে পেয়েছি। এখন আমি একটা নির্দিষ্ট গেমপ্লান করতে পারবো। অবশ্যই দল নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকবে। তারপরও আমি বলবো, দলটার মধ্যে ভালো একটা মিশ্রণ আছে।’
চার.
অভিজ্ঞ রাজ্জাককে কি দরকার ছিল? চূড়ান্ত দল ঘোষণার পর কেউ কেউ এই প্রশ্ন করেছেন। তবে রাজ্জাকের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যখন তাদের সামনে এসেছে, তখন তারাও চুপ মেরে গেছেন।
পাঁচ.
মিডল অর্ডারে নাসির কি ফিরে পাবেন সেই চেনা রূপ? নাসিরকে নিয়ে এই প্রশ্নটা করছেন না এমন ক্রিকেট-বোদ্ধা খুঁজে পাওয়া দায়। নাসির দলে ঢোকার পর থেকে নিজেকে যেভাবে চিনিয়েছেন তাতে দলে তার স্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। তবে গত দুই বছর বাংলাদেশ দলের মতো নাসিরও কেমন ম্লান হয়ে গেছেন। এবারের বিশ্বকাপে তিনি দলে থাকবেন কি না তা নিয়েও অনেকে শঙ্কায় ছিলেন। হয়তো নাসিরও। শেষমেশ দলে সুযোগ পেলেও, মিডল অর্ডারে তিনি আস্থার প্রতিদান দিতে না পারলে সমস্যার মাত্রাটা কোথায় যেয়ে থামে সেটাই দেখার বিষয়।
ছয়.
এবার ভায়রা প্রসঙ্গ- মুশফিক, রিয়াদ। রিয়াদের ধারাবাহিকতা নিয়ে চিন্তা থাকলেও মুশফিককে নিয়ে সেটা নেই। যত চিন্তা ওই ইনজুরি নিয়ে। প্রাকটিসে ফুটবল খেলতে যেয়ে ইনজুরিতে পড়েছিলেন মুশফিক। তবে তিনি জানিয়েছেন, খেলার মতো অবস্থায় তিনি ফিরে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে শতভাগ সু¯’ হয়ে উঠবেন। তাই যেন হয়! সেই সঙ্গে তার আত্মীয় (স্ত্রীর বড় বোনের বর) রিয়াদও যেন ছাড়িয়ে যেতে পারেন নিজের সাম্প্রতিককালের পারফরম্যান্স। তাহলে তাদের জীবনসঙ্গিনীদের পাশাপাশি দেশবাসীও আনন্দে ভাসতে পারবেন।
সাত.
এত সব চিন্তার মাঝে একটা নামই একটু স্বস্তি এনে দিচ্ছে-সাকিব আল হাসান। সেই স্বস্তির পালে বাড়তি হাওয়া দিয়েছে তার বিগব্যাশ যাত্রা। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার এই জনপ্রিয় ঘরোয়া লিগে সাকিবের খেলা মানে বাংলাদেশ দলের কিছু বাড়তি পাওয়া। সাকিবের সঙ্গে মমিনুলও হতে পারেন নির্ভরতার উপলক্ষ। তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে ব্যাটিং লাইনআপ।
আট.
এদিকে নবাগত সৌম্যর ওপর অতটা ভরসা না করলেও, একটু স্বস্তি দিচ্ছেন তিনিও। তরুণ সৌম্য রানে আছেন। ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় তিনি ব্যাট করতে পারেন। এছাড়া পেস বোলিং অপশন হতেও পারেন। বাংলাদেশ অবশ্যই তাকে ব্যাটসম্যান হিসেবে চাইবে। তারপরও ওই কন্ডিশনে তিনি যদি বলে কিছু ভূমিকা রাখতে পারেন সেটা বোনাস হবে। এছাড়া তাইজুল, সাব্বির এবং আরাফাত সানিকে নিয়ে আশায় থাকা যেতে পারে। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তারা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিদেশের মাটিতেও এমন কিছু হোক।
শেষ কথা.
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী? এই প্রশ্নের উত্তর খোজার আগে বাংলাদেশকে পা দিতে হবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তাছাড়া বাংলাদেশ যে গ্রুপে আছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মতো বাঘা বাঘা নামও রয়েছে। এদের সঙ্গে আবার আছে স্কটল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। এই দলকে হারাতে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার কাজটা একটু সহজ হতে পারে। তবে চিন্তার নাম সেই পুরনো রোগ-খেই হারিয়ে ফেলা! তাছাড়া বিশ্বকাপের মতো আসরে, ভিন্ন কন্ডিশনে কাউকে ছোটো করে দেখার সুযোগ নেই। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। সময় বেশি নেই। তাই প্র¯‘তির কথাও চলে আসে অবধারিতভাবে। বাংলাদেশের প্র¯‘তির মূল ফোকাসটা থাকবে ব্রিসবেনে। সেখানে ১২-১৪ দিন সময় পাবেন মাশরাফিরা। ওই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য এটাই হবে তাদের মূল চ্যালেঞ্জ।
অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনের পাশাপাশি উইকেট নিয়েও বাংলাদেশ চিন্তিত। ধারণা করা হচ্ছে আইসিসির ইভেন্ট হওয়ায়, শতভাগ বাউন্সি উইকেট নাও হতে পারে। তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এই ধারনার কথা ভেবে স্বস্তিতে থাকারও কোনো উপায় নেই। কেননা তাদের মাঠগুলোর ব্যাপারে কিউরেটরই মোটামুটি শেষ কথা, এখানে বোর্ড বা অন্য কারো তেমন কিছু বলার থাকে না।
তাই উইকেট কেমন হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা মানে বোকার স্বর্গে বাস করা। তবে এতটুকু বলা যায় পেসারদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে সব দেশেরই। সব চিন্তা পেছনে ফেলে বাংলাদেশ কোন দিকে কতটুকু তাকিয়ে, কত পথ পাড়ি দিতে পারবে, তা সময়ই বলে দিবে। সে পর্যন্ত না হয় অপেক্ষায়ই থাকা যাক!
বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, আল-আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন, আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়