Monday, January 26

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অলস সময় নষ্ট নয়


যুবায়ের আহমাদ: মানুষের জীবনধারণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যবসার গুরুত্ব আদিকাল থেকেই স্বীকৃত। অর্থনীতির বলয়ে আবর্তিত মানবজীবনে ব্যবসাকে ইসলাম ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। একদিকে যেমন ওজনে কম দেয়া, মুনাফাখোরীর পথ বন্ধ করে সততা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে, অন্যদিকে হারাম কোনো জিনিসকে ব্যবসার উপকরণ বানানোর সুযোগও রাখেনি। মোমিনদের আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত রাখে, এমন ব্যবসা নিষিদ্ধ। ঈমানদার ব্যবসায়ীদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, সালাত কায়েম এবং জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না।' (সূরা নূর : ৩৭)। গ্রামগঞ্জে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, দোকানে চলছে টেলিভিশন। মসজিদে চলছে একামত। সিনেমা কিংবা নাটক দেখতে দেখতেই ছুটে যাচ্ছে জামাত। কখনও নামাজ কাজা হয়ে যাচ্ছে। টেলিভিশনের গুরুত্বের কাছে উপেক্ষিত হচ্ছে নামাজ। কোথাও কোথাও দেখা যায়, চায়ের দোকানে দিন-রাত চলছে টিভি, চলছে ভারতীয় ছায়াছবি, অসামাজিক কিংবা নির্লজ্জপনার অনুষ্ঠান। অনেক প্রয়োজনীয় কাজও যেন হার মানে টিভির কাছে। টিভি দেখতে গিয়ে ইবাদত বিঘ্নিত হওয়া অথবা ইসলাম অনুমোদিত নয় এমন কোনো অনুষ্ঠান দেখা এবং দেখানো উভয়টিই অন্যায়। দর্শক এবং যে দোকানদার তা দেখার সুযোগ করে দেবেন উভয়ই ইসলামের দৃষ্টিতে গোনাগার। হাশরের ময়দানে দোকানদারকেও দাঁড়াতে হবে আসামির কাঠগড়ায়। কেননা, গোনাহের কাজে কাউকে সহযোগিতা করাও ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।' (সূরা মায়েদা : ২)। একটু অবসর পেলেই চায়ের দোকানে আড্ডায় কিংবা টিভির সামনে ব্যয় করা হয় সময়। অথচ অবসর সময় মানুষের জন্য একটি নেয়ামত। অবসরে শয়তান আমাদের অনর্থক আড্ডায় কিংবা অনর্থক কথাবার্তায় প্ররোচিত করে। আড্ডায় বসে হয়তো কখনও মনের অজান্তেই বলে ফেলছি মিথ্যা কথা। হয়ে যাচ্ছে কারও দোষচর্চা, গিবতের মতো কবিরা গোনাহ। কোরআনুল কারিমে অনর্থক আড্ডা ও কথাবার্তায় নিরুৎসাহিত করে সূরা মোমিনুনের ৩নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'মোমিন তো তারাই, যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত।' অবসর সময় যেন অবহেলায় নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে নবীজি সতর্ক করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, 'দুইটি মহামূল্যবান নেয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ উদাসীন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হচ্ছে_ সুস্থতা ও অবসর সময়।' (বোখারি)। শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে নিজেদের দৈনন্দিন কাজগুলো করেছি কিনা সেদিকে নজর দেয়া উচিত। দোকানে বসে টেলিভিশন দেখা কিংবা আড্ডা না দিয়ে সন্তানকে একটু সময় দেয়া, সন্তানের নীতি-নৈতিকতার দিকে খেয়াল রাখার মাধ্যমেও আমরা জীবনের মহামূল্যবান সময়টুকু কাজে লাগাতে পারি পরকালের পাথেয় সংগ্রহে। দুনিয়ার জীবনটি মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের সমষ্টি বৈ কিছুই নয়। দিন-রাতের অবিরাম পালাবদলে জীবন ফুরিয়ে যায়। মৃত্যু এসে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় জীবনের সব রঙিন স্বপ্ন। নির্ধারিত সময় শেষে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় অনিবার্য। পরকালের শস্যক্ষেত দুনিয়ার জীবনের সামান্য সময়েই একজন মানুষের চিরন্তন সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করে। পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করতে হয় এই সামান্য জীবনেই। আমার জীবন থেকে হেলায় দিনগুলো কেটে গেল, কিন্তু আমল কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে? পাথেয় সংগ্রহ করেছি কতটুকু তা সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ভাবতে হবে। সূরা হাশরের ১৮নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, 'হে মোমিনরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করে তা ভেবে দেখা।' রাসূলুল্লাহ (সা.) অলস সময় কাটানো মোটেও পছন্দ করতেন না। ব্যবসা, শ্রম বিক্রি কিংবা দাওয়াতি কাজ যাই হোক; হোক ঘরে কী বাইরে, সারা জীবনই তিনি থাকতেন কর্মব্যস্ত। অলস সময় না কাটিয়ে পরকালের পুঁজি সংগ্রহে সতর্ক করেছেন সবাইকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি যে নিজের হিসাব গ্রহণ করে এবং মৃত্যুর পরের প্রস্তুতি নেয়।' (তিরমিজি)। অনেকেই এমন আছেন, যারা নামাজের নিত্যপ্রয়োজনীয় মাসয়ালা জানেন না। পড়তে পারেন না শুদ্ধ করে কোরআন শরিফ। একটু চেষ্টা করলেই হয়তো আপনি এ অবসরেই শিখে ফেলতে পারেন কোরআন তেলাওয়াত। অন্তত নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় নূ্যনতম সূরাগুলো। অধ্যয়ন করা যায় হাদিস ও ফিকহে একান্ত প্রয়োজনীয় অধ্যায়গুলো। প্রতিদিন পাঁচটি আয়াতের অনুবাদ, তাফসির পড়ে কোরআনের অমীয় বাণী অনুধাবনে, আল্লাহ তায়ালার জিকিরেও সময়টুকু কাজে লাগানো যায়। লেখক : খতিব, বায়তুল ফালাহ মসজিদ বাবর আলী গেট, কুষ্টিয়া।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়