ইজতেমায় শনিবারের বাদ ফজর বয়ান
মাওলানা ইসমাইল গুদরা (পাকিস্তান)
মুহতারাম দোস্ত-বুজুর্গ! জগতের মানুষ শান্তি চায়। শান্তির আশায় তারা হন্যে হয়ে ছুটে ফিরছে এদিক-ওদিক। আকাশছোঁয়া প্রাসাদ। সম্পদের পাহাড়। নারী, বাড়ি, গাড়ি_ কোনোকিছুতেই শান্তির ছোঁয়া নেই। জীবন তাদের অতিষ্ঠ, অস্থির। আল্লাহপাকের দ্বীন ব্যতিরেকে দুনিয়ার কোনোকিছুতেই শান্তি আসবে না। দুনিয়ার আসবাবপত্র শান্তি-সুখের মাধ্যম নয়, প্রকৃত শান্তি ও কামিয়াবি একমাত্র প্রিয় নবী (সা.) এর নুরানি তরিকায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আগমনের আগে জাহেলিযুগের মানুষ নারী, মদ নিয়ে ব্যস্ত থাকত, কিন্তু তাতে তাদের জীবনে শান্তির লেশমাত্র ছিল না। জান, মাল, ইজ্জত-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা ছিল না। সর্বত্র অরাজকতা ও ত্রাসের রাজত্ব ছিল। মানবতা সেদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল মুক্তিকামী একজন মানুষের। সে অপেক্ষার অবসান হলো। জাহিলিয়াতের অাঁধার দূর করে মানবতার পূর্বদিগন্তে উদিত হলো মুক্তির রবি। শান্তির সমুজ্জ্বল মশাল নিয়ে এ ধরাপৃষ্ঠে আগমন করেন মানবতার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। তাঁর ঈমানি মেহনতে আরবের মানুষ খুঁজে পেল শান্তির ঠিকানা। তিনি বিশ্বনবী। তাঁর দাওয়াতি প্রোগ্রাম বিশ্বব্যাপী। সাহাবায়ে কেরাম দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলেন বিশ্বময়। সাহাবাদের দাওয়াতি মেহনতে আমরা দ্বীন পেয়েছি। বিশ্বনবী (সা.) এর ঘোষণা ছিল, 'আমার একটি কথাও যদি তোমার জানা থাকে, তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।' হুজুর (সা.) এর এ নির্দেশ পালন করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে শুধু দাওয়াত ও তাবলিগের কারণে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা হলে শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণে তোমাদের পাঠানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং মন্দকাজ থেকে বারণ করবে।' (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। মানুষের কল্যাণ দাওয়াতের কাজে নিহিত। দাওয়াত দ্বারা ঈমান-আমল পক্ব হয়। ঈমান-আমল পক্ব হওয়ার চেয়ে বড় কল্যাণ আর কী হতে পারে? দাওয়াতের মাকসাদ_ সমগ্র পৃথিবীতে দ্বীন আবাদ করা।
মুহতারাম দোস্ত-বুজুর্গ! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুখ-শান্তি লাভের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, 'তোমরা আল্লাহ তায়ালার মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও, যার পরিধি হচ্ছে আসমান-জমিনব্যাপী। মোত্তাকিদের জন্য তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।' (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩)। আখেরাতের জন্য আমল করলে দুনিয়ার জীবনেও শান্তি আসবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "যেসব পুরুষ বা নারী ঈমানের পর নেক আমল করবে, আমি তাদের 'হায়াতে তাইয়িবা' তথা শান্তি-সুখের জীবন দান করব। আর আখেরাতে রয়েছে তাদের জন্য উত্তম বিনিময়।' (সূরা নাহল : ৯৭)।
মুহতারাম উপস্থিতি! আজ মানুষের জীবনে সমস্যার অন্ত নেই। এ সমস্যার সমাধান একমাত্র ঈমানি মেহনতে। ঈমান কী? সবকিছু আল্লাহ থেকে হয়, গাইরুল্লাহ থেকে কিছুই হয় না_ এ বিশ্বাস অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা। তবে ঈমানের জায়গা অন্তর হলেও জবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা ঈমান প্রকাশ পাবে। এজন্য হাদিসবিশারদরা ঈমানের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে_ অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলের মাধ্যমে ঈমানের প্রকাশ ঘটানো। আমল ব্যতীত ঈমান মজবুত হয় না। আর দাওয়াত ছাড়া ঈমানি জিন্দেগি অর্জিত হয় না। মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) বলতেন, 'দাওয়াতের দ্বারা মানুষের ইবাদত ঠিক হবে, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত ঠিক হবে। ঈমানি জিন্দেগি ও আখলাকে নববি হাসিল হবে। দাওয়াত বন্ধ হলে দুনিয়া থেকে রহমত ও বরকত উঠে যাবে এবং গোমরাহিতে ছেয়ে যাবে। আর দাওয়াত চালু থাকলে রহমত-বরকতের দরজা খুলে যাবে এবং আমাদের জীবনের পেরেশানি ও অস্থিরতা বিদূরিত হবে। আজ দেখা যায়, পরিবারের মুরবি্ব নিজে নামাজ পড়ে কিন্তু বিবি, বাচ্ছাদের নামাজের কথা বলে না। দাওয়াত বাইরে যেমন থাকবে, ঘরেও দাওয়াত চালু রাখতে হবে। নাজাতের জন্য শুধু নিজের ঈমান-আমলের সংশোধন যথেষ্ট নয়। ইসলাম অন্যের ঈমান-আমলের ফিকির করতে নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষত আপন ছেলেমেয়ে, ভাই-বন্ধু, পরিবারের লোকদের ঈমান-আমলের দাওয়াত দিতে হবে।' আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।' (সূরা তাহরিম : ৬)। আল্লাহর এ নির্দেশ আমরা অবলীলায় পরিত্যাগ করছি। অথচ নামাজ, রোজার মতো দাওয়াতের কাজও আল্লাহ পাকের ফরজ বিধান। দোস্ত-বুজুর্গ! দুনিয়ার জীবন আমরা হেলায়-খেলায়, আনন্দ-ফুর্তিতে শেষ করে দিচ্ছি। অথচ এ সংক্ষিপ্ত জীবন আখেরাতের অনন্ত সুখ-শান্তি উপার্জনের জন্য। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দুনিয়া আখেরাতের ক্ষেতস্বরূপ। এখানকার ধন-দৌলত আখেরাতে কাজে আসবে না। যা কাজে আসবে তা হচ্ছে নেক আমল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'ধনসম্পদ ও জনসম্পদ পার্থিব জগতের শোভা মাত্র। আল্লাহর দরবারে উত্তম প্রতিদান হিসেবে বহাল থাকবে শুধু নেক আমল।' (সূরা কাহফ : ৪৬)।
অনুলিখন : মাওলানা মাহবুবুর রহমান নোমানি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়