Wednesday, January 14

নেয়ামতে ভরা শীতকাল


সৈয়দ শামছুল হুদা: ঋতুর পরিবর্তন মহান আল্লাহর এক দান নিদর্শন। মৌসুমের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে মানুষের রুচি ও জীবনযাত্রায়। আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতিতে এমন পরিবর্তন এনে দেন, যা উপভোগ করে আল্লাহপ্রেমিক বান্দা তাঁর গুণকীর্তনে মেতে ওঠে। শীতকালীন ভ্রমণ : পবিত্র কোরআনে শীতকাল নিয়ে সূরা কোরাইশে আলোচনা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, 'কোরাইশদের আগ্রহের কারণে, শীতকালে এবং গ্রীষ্মকালে তাদের ভ্রমণবিলাসের কারণে, তাদের উচিত এ পবিত্র ঘরের (কাবা ঘর) উপাসনা করা, যিনি তোমাদের ক্ষুধায় অন্ন এবং ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেন।' (সূরা কোরাইশ : ১-৪)। এ সূরায় শীতকালে ভ্রমণের কথা বলা হয়েছে। মক্কার অধিবাসীরা শীতকালে দূর দেশগুলোতে ভ্রমণ করত, আমাদের দেশেও শীত এলে শিক্ষা সফর বেড়ে যায়, সমুদ্র উপকূলগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ে। ভ্রমণপিপাসুরা বেরিয়ে পড়ে। শীতকালীন পিঠা : শীতে নবান্ন আসে, গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে ওঠে নতুন চাল। বাড়ি বাড়ি ধুম পড়ে যায় পিঠা খাওয়ার। অভিজাত পরিবার থেকে শুরু করে অসহায় দরিদ্র- সবাই শীতের পিঠা খেতে তৎপর হয়ে ওঠে। শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় শীতের পিঠার উৎসব হয়। নানা ধরনের পিঠা আমাদের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে পরিতৃপ্ত করে। বিশেষ করে খেজুর গুড়ের পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, ছিটা পিঠা ইত্যাদি আমাদের কাছে খুব পরিচিত। শীতকালে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অনেকে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শীতকালীন শাকসবজি : শীতকাল এলে যেমন পিঠার উৎসব হয়, তেমনি নানা শাকসবজি উৎপাদিত হয়, যা অন্য সময়ে পাওয়া যায় না। শীতের তরকারি খুবই সুস্বাদু। শীতকাল এলেই দেখা যায় বাহারি তরকারিতে সবজি দোকানগুলো থরে থরে সাজানো থাকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, পালংশাক, মুলা শাক, গাজর ইত্যাদি নানা ধরনের সুস্বাদু তরকারি খেয়ে আমাদের রসনা পরিতৃপ্ত হয়। একই তরকারি শীতকালে যত স্বাদ, অন্য সময়ে সেটা এতটা সুস্বাদু হয় না। প্রতিটি মৌসুমের ভিন্ন ভিন্ন ফল রয়েছে, সবজি রয়েছে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিছু সবজির মধ্যে রয়েছে ঔষধি গুণ। শীতকালে যেসব পীড়া দেখা দেয়, সেগুলোর চিকিৎসাও সেই সময়ের ফলমূলের মধ্যে রয়েছে। সবই আল্লাহর দান : এসবই নিপুণ স্রষ্টা ও দয়াময় দাতা আল্লাহর সৃষ্টিবৈচিত্র্যের নিদর্শন এবং অসামান্য দানের নমুনা। আল্লাহর কয়েকটি বাণী এখানে স্মরণীয়। আল্লাহ এরশাদ করেন, 'বলো তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোম-ল ও ভূম-ল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেই। অতএব আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়।' (সূরা নামল : ৬০)। আরেক আয়াতে তিনি বলেন, 'আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্্গত করেছি। এটা জ্ঞান আহরণ ও স্মরণ করার মতো ব্যাপার প্রত্যেক অনুরাগী বান্দার জন্য। আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা দ্বারা বাগান ও শস্য উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়।' (সূরা কফ : ৭-১১)। অন্য সূরায় এরশাদ হয়েছে, 'তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর আমি এর দ্বারা সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙুরের বাগান, জয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য করো যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্বতার প্রতি লক্ষ্য করো। নিশ্চয় এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্য।' (সূরা আনআম : ৯৯)। আমাদের কর্তব্য হবে আল্লাহর এসব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং কোনো নেয়ামত নষ্ট না করা। খাদ্যে-সবজিতে ভেজাল দিয়ে আল্লাহর নেয়ামত শুধু ধ্বংস করাই হয় না অন্যকে কষ্ট দেয়ার মতো গর্হিত গোনাহও করা হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়