ড. বদরুল হাসান কচি
কেউ মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীরা সম্পত্তির অংশ পায়। মুসলিম আইন অনুযায়ী তিন শ্রেণির উত্তরাধিকারী রয়েছে। এরা হলোÑঅংশীদার, অবশিষ্টভোগী ও দূরবর্তী আত্মীয়।
অংশীদার: এই অংশীদারদের সংখ্যা ১২। এরা নির্ধারিত পরিমাণ সম্পত্তির অংশ পায়।
অবশিষ্টভোগী: এরা সম্পত্তিতে কোনো নির্দিষ্টভাবে অংশগ্রহণ করে না। মূল অংশীদাররা পাওয়ার পর অবশিষ্টভোগীরা সম্পত্তি পাবে।
দূরবর্তী আত্মীয়: মৃত ব্যক্তির কোনো অংশীদার এবং অবশিষ্টভোগী না থাকলে দূরবর্তী আত্মীয়রা সম্পত্তি পাবে।
অংশীদাররা কে কতটুকু অংশ পাবে
স্বামী: মৃত স্ত্রীর সন্তানাদি যত নিচের দিকে হোক না কেন, কেউ না থাকলে স্বামী মৃত স্ত্রীর ১/২ অংশ পাবে। যদি মৃত স্ত্রীর সন্তানাদি থাকে তাহলে ১/৪ অংশ পাবে।
স্ত্রী: মৃত ব্যক্তির স্ত্রী এক বা একাধিক থাকুক তাদের সম্পত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা উল্লেখ করা যায়। যথা-ক) মৃত ব্যক্তির সন্তানসন্ততি বা তার নিচে কেউ না থাকলে স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে। খ) অপরদিকে মৃত ব্যক্তির সন্তানসন্ততি বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে।
আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক বিধবা স্ত্রী থাকে, তবে সব বিধবা স্ত্রীই উপরোক্ত ১/৪ বা ১/৮ অংশ হতে যে রকমই হয়, সমান হারে তাদের অংশ ভাগ করে পাবে।
পিতা: পিতার এই অংশ তিনটি অবস্থায় দেখানো হলো। ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র কিংবা তার চেয়ে নিচে কেউ থাকলে পিতা মাত্র ১/৬ অংশ পাবে। খ) পুত্র না থাকলে কন্যা বা তার নিচে কেউ থাকলে পিতা ১/৬ অংশ এবং অবশিষ্টভোগী হিসেবে সম্পত্তি পাবে। গ) পুত্র, কন্যা বা পুত্রের পুত্র বা তার নিচে কেউ না থাকলে পিতা আসাবা বা অবশিষ্টাংশভোগী হবে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবে।
মাতা: মৃত ব্যক্তির সন্তানসন্ততি থাকলে মা মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন। যদি মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকে এবং দুই বা ততোধিক ভাই-বোন থাকে তাহলেও ১/৬ অংশ মা পাবেন। তবে মৃত ব্যক্তির সন্তানাদি না থাকলে এবং একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকলে মা ১/৩ অংশ পাবেন। আবার মৃত ব্যক্তির পিতা থাকলে এবং তার স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তির ১/৩ অংশ মা পাবেন।
কন্যা: মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত কন্যার অংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে তিন অবস্থায় বণ্টন করা হয়। যেমন- ক) মৃত ব্যক্তির কন্যা একজন থাকলে এবং পুত্র না থাকলে সে ১/২ (অর্ধেক) ভাগ সম্পত্তি পাবে । খ) দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে এবং কোনো পুত্র না থাকলে তারা ২/৩ (তিন ভাগের দুই) ভাগ সমানভাগ পাবে। গ) মৃত ব্যক্তির পুত্র থাকলে কন্যা/কন্যারা অংশীদার হিসেবে সম্পত্তি না পেয়ে পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অর্থাৎ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পুত্র যা পাবে কন্যা তার অর্ধেক পাবে। কন্যা কখনো পিতা-মাতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না।
পুত্র: পুত্রের অংশ নির্দিষ্ট করা নেই। পুত্র অবশিষ্টভোগী হিসেবে সম্পত্তি পায়। পুত্র সব সময় মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পাবে। মা, বাবা, স্ত্রীর অংশ দেওয়ার পর পুত্রের অংশ নির্ধারিত হয়। তবে ছেলে সব সময় মায়ের সম্পত্তির দ্বিগুণ পাবে। অন্য অংশীদারদের উপস্থিতির ওপর পুত্রের অংশ কমবেশি নির্ধারিত হয়।
দাদা: মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান অথবা পুত্রের সন্তান (যতই নিম্নগামী হোক না কেন) থাকলে দাদা ১/৬ অংশ পায় এবং এরা কেউ না থাকলে দাদা অবশিষ্টভোগী হিসেবে সম্পত্তি পাবে। অর্থাৎ পিতা যে অবস্থায় যা পায় দাদা সে অবস্থায় তাই পাবে, কিন্তু পিতা জীবিত থাকলে দাদা কিছুই পাবে না।
দাদি/নানী: মৃত ব্যক্তির যদি মাতা বা পিতা না থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবে। দাদির ক্ষেত্রে পিতা-মাতার মধ্যে কেউ বেঁচে না থাকলে সম্পত্তি পাবেন না। নানীর ক্ষেত্রে মা না থাকলে ১/৬ অংশ পাবেন। যদি দাদি ও নানী বেঁচে থাকেন তাহলে ১/৬ অংশ দুজনের মধ্যে ভাগ হবে।
আপন বোন: মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকলে অথবা পিতা, দাদা বা ভাই না থাকলে বোন একজন হলে সম্পত্তির ১/২ অংশ এবং একাধিক হলে ২/৩ অংশ পাবে। আপন ভাই থাকলে বোনেরা অবশিষ্টভোগী হিসেবে পাবে ২:১ আনুপাতিক হারে। মৃত ব্যক্তির কন্যা অথবা পুত্রের কন্যা থাকলে বোন অবশিষ্টভোগী হিসেবে অংশ পাবে।
পুত্রের কন্যা: পুত্রের কন্যার সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্রে চারটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায় : ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র বা একাধিক কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা সম্পূর্ণরূপে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা না থাকলে পুত্রের কন্যা একা হলে ১/২ অংশ এবং একাধিক হলে ২/৩ অংশ সম্পত্তি পায়। গ) মৃত ব্যক্তির যদি একমাত্র কন্যা তাকে, তবে পুত্রের কন্যা একা বা একাধিক যাই থাকুক একা বা সবাই শুধুমাত্র ১/৬ অংশ পাবে। একাধিক হলে এই ১/৬ অংশ সবাই সমানভাবে পাবে। ঘ) মৃত ব্যক্তির পুত্রের পুত্র থাকলে, পুত্রের কন্যা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে তার বা তার সঙ্গে ২:১ সম্পত্তি লাভ করবে।
বৈমাত্রেয় বোন (যেখানে পিতা একজন কিন্তু মাতা দুজন): মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় বোন একজন থাকলে সে ১/২ অংশ প্রাপ্ত এবং একাধিক বৈমাত্রেয় বোন একত্রে ২/৩ অংশ সমানভাগে পায়। মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় ভাই বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে বৈমাত্রেয় বোন তার সঙ্গে অবশিষ্টাংশভোগী বা আসাবা হবে এবং ভাই যত পাবে বোন তার অর্ধেক অংশ ২:১ হারে সম্পত্তি পাবে।
বৈপিত্রীয় ভাই-বোন (যেখানে পিতা দুজন কিন্তু মাতা একজন): মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের কন্যা ইত্যাদি কেউই বর্তমান না থাকলে ও একজন বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকলেও সে ১/৬ অংশ এবং একাধিক বৈপিত্রেয় ভাই-বোন একত্রে ১/৩ অংশ সমানভাবে পাবে। বৈপিত্রেয় ভাই-বোনেরা সমান অংশ পায়। এক্ষেত্রে ভাই-বোনের অংশের অনুপাত ২:১ না হয়ে ১:১ হবে।
সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়