কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
যে ডায়েটিং ওষুধ নিয়মিত গ্রহণে নারীদের পোশাক ২ সাইজ কমে যেতে পারে তেমনই একটি ডায়েটিং ওষুধ গতকাল ইউরোপের হেলথ ওয়াচডগের অনুমোদন পেয়েছে। এর নাম লুরাগ্লুটাইড। ডেনমার্কের ওষুধ কোম্পানি নোভো নর্ডিস্ক লিরাগ্লুটাইড নামের এই ওষুধটি তৈরি করেছে।
ডাক্তাররা একে স্থুলতায় আক্রান্ত রোগীদের জীবন পুরোপুরি বদলে দিতে সক্ষম একটি ডায়েটিং ওষুধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই স্থুলতায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রেও এটিকে ওষুধ হিসেবে গ্রহণে পরামর্শ দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।
স্লিমাররা এই ডায়েটিং ওষুধ গ্রহণে অভ্যস্থ হলে ক্যালোরি গ্রহণ কমানো এবং বেশি বেশি ব্যায়াম করার চেয়ে আরও সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
মেদ কমাতে ব্যবহৃত সাধারণ ওষুধের চেয়ে দ্বিগুন শক্তিশালি এই নতুন ডায়েটিং ওষুধ। এতে একই সঙ্গে রক্তচাপ কমবে কিন্তু ক্যালোরি বাড়বে আবার ডায়াবেটিসও হবে না। এটি এমনকি মস্তিষ্কে সুখানুভুতির উপাদান হিসেবেও কাজ করবে।
নতুন ডায়েটিং ওষুধে অলৌকিক ফল
গতকাল ইউরোপীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এটিকে মানব সাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করে একটি রুলিং জারি করেছে। ওই রুলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নোভো নর্ডিস্ক জানিয়েছে, ওষুধটি ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনেও যেন থাকে তার অনুমোদনের জন্যও আবেদন করবে তারা।
তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ব্রিটেনের জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নাইস এই ওষুধটিকে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য অত্যধিক ব্যয়বহুল বলে বিবেচনা করতে পারে।
লুরাগ্লুটাইড একদিন সেবনে খরচ পড়বে ২ দশমিক ২৫ ইউরো। যা বিদ্যমান ডায়েটিং ওষুধ ওরলিস্টাট সেবনে যে খরচ পড়ে তার দ্বিগুন।
প্রতিদিন সকালে নাস্তার আগে রোগীরা এই ওষুধটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে পাকস্থলিতে গ্রহণ করার মাধ্যমে সেবন করবে। ওষুধটি ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কাজ করে।
লুরাগ্লুটাইড নামের এই ওষুধটি ‘স্যাক্সেন্ডা’ এই ব্র্যান্ড নামে বাজারে ছাড়া হবে। ওষুধটি ইতোমধ্যেই ডায়াবেটিস নিরাময়ের জন্য স্বল্প ডোজে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্ত্রের একটি হরমোনের উপর ভিত্তি করে ওষুধটি মস্তিষ্কে এমন সিগনাল পাঠাবে যে মনে হবে পেট ভর্তি আছে। ফলে একজন মানুষ প্রতিদিন সাধারণত যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন তার চেয়ে ১০ শতাংশ কম খাদ্য গ্রহণ করবেন। পরীক্ষামূলকভাবে ওষুধটির প্রয়োগে দেখা গেছে স্থুলতায় আক্রান্ত যেসব নারী-পুরুষ নিয়মিত এই ওষুধটি সেবন করেছেন তারা ১২ মাসের মধ্যেই ৮.৭ (১৯.২ পাউন্ড) কেজি ওজন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। খাবার গ্রহণ কমিয়ে বা শরীরচর্চা বাড়িয়ে তারা যে পরিমাণ ওজন কমাতে পারতো তার তুলনায় দ্বিগুনহারে- প্রায় এক স্টোন বা ১৪ পাউন্ড বেশি ওজন কমেছে তাদের।
নতুন ডায়েটিং ওষুধে অলৌকিক ফল
আর এক তৃতীয়াংশ রোগীর ২৩ পাউন্ড বা ১০.৪৩ কেজি ওজন কমেছে। তার মানে ১৯৬ পাউন্ড বা ৮৮.৯ কেজি ওজনের একজন নারী এক বছর এই ওষুধটি সেবন করলে তার জামা ২ সাইজ ছোট হয়ে আসবে। এছাড়া ওষুধটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও খুবই কার্যকর। ফলে এই ওষুধটি সেবনকারীদের আলাদা করে ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেতে হবে না।
পরীক্ষায় আরো দেখা গেছে, ওরলিস্ট্যাট সেবনে যে পরিমাণ ওজন কমে লিরাগ্লুটাইড সেবনে তারচেয়ে দ্বিগুন হারে ওজন কমছে।
ওরলিস্ট্যাটের মতোই শুধুমাত্র স্থুলতা রোগে আক্রান্ত এবং হাই ব্লাড প্রেশার আছে এমন রোগীদের জন্যই ওষুধটি সেবনযোগ্য।
গ্লাসগো বিশ্ব বিদ্যালয়ের মানব পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক মাইক লিন বলেন, ওষুধটি অসাধারণ নিরাপদ। অন্তত গত ২ থেকে ৩ বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওষুধটির মারাত্মক কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাইনি আমরা। তবে ওষুধটি খুবই ব্যয়বহুল।
ওষুধটির একমাত্র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল, বমির উদ্রেক হওয়া। তবে কয়েক সপ্তাহ পর তাও দূর হয়ে যায়। তবে কতদিন ধরে ওষুধটি সেবন করতে হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে আজীবন ধরেও ওষুধটি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়তে পারে।
তিনি জানান, স্থুলতা রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতো তার এমন কিছু রোগী ওষুধটি সেবন করে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে পুনরায় পায়ে হেটে চলতে সক্ষম হয়েছেন।
কিন্তু অ্যাবারডিনের রবার্ট গর্ডন বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্থুলতা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আয়ান ব্রুম বলেন, আমি মনে করি না ওষুধই স্থুলতা রোগের একমাত্র সমাধান। সমাজ না বদলালে এবং সরকার ও খাদ্য শিল্পের মধ্যকার সম্পর্ক এমনকি স্বয়ং খাদ্য শিল্পের চরিত্রে বদল না ঘটলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
আগামী দুই মাসের মধ্যেই ওষুধটি বাজারজাত করার জন্য ইউরোপীয় কমিশন লাইসেন্স প্রদান করবে। নোভো নর্ডিস্ক জানিয়েছে, এ বছরের মধ্যেই যুক্তরাজ্যসহ পুরো ইউরোপজুড়েই তারা ওষুধটি বাজারজাত করবে।
গত দুই দশকে ইউরোপে স্থুলতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। আর যুক্তরাজ্য ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থুলকায় জাতিতে পরিণত হয়েছে। স্থুলতার ফলে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৯ বছর করে কমে যেতে পারে। এছাড়া এতে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়