মো. রেজাউল করিম:
ঢাকা : টাঙ্গাইলবাসীর অনেক দিনের প্রত্যাশার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেন টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই ১০ জানুয়ারি, শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজটি উদ্বোধন করেন। এছাড়া জামালপুর, পটুয়াখালি, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও রাঙ্গামাটিতে নব নির্মিত ৫টি মেডিকেল কলেজ ও সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে রংপুর, বগুড়া, যশোর, চট্টগ্রাম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে প্রতিষ্ঠিত ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৪ সালে জেলায় প্রথম ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপনের পর দাবি উঠে একটি মেডিকেল কলেজের। সেই দাবির ৪১ বছর পর জেলায় চালু করা হল সরকারি মেডিকেল কলেজ।
১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল মান্নান ২৯.৭ একর (হাসপাতাল সীমানার ভেতর ২৫.২ একর ও সীমানার বাইরে ৪.৫ একর) জমিতে স্থাপন করেন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল সদর হাসপাতাল। সেই সময় থেকেই টাঙ্গাইলবাসী দাবি করে আসছিলো একটি সরকারি পরিপূর্ণ মেডিকেল কলেজের।
পর্যায়ক্রমে জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল।
২০১২ সালের ৩০ জুন টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরের একটি জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারলে টাঙ্গাইলে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরই সরকার উদ্যোগ নেয় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রশাসনিক অনুমোদন পায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ। পরে ৭ আগস্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারকে মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়।
তার আগে ১৬ জুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়। ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষায় উত্তীর্নদের ভর্তি কার্যক্রম চলে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কলেজের প্রথম শিক্ষাবর্ষ ২০১৪-২০১৫ বর্ষে ভর্তি হয় ৫১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৭ জন। এছাড়াও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল (বর্তমান টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) এর চিকিৎসকরা সেবা দান করবেন। কলেজের নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসিকের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
মেডিকেল কলেজ হওয়াতে দরিদ্র রোগীদের ঢাকা যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না বলে মনে করেন চিকিৎসক ও নার্সরা। আগে একটু জটিল রোগীদের এখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ বা ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হতো। এতে করে রোগীদের বাড়তি খরচ হতো। কিন্তু এখন মেডিকেল কলেজ হওয়াতে সে সমস্যা আর থাকবে না। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় নতুন নতুন অনেক যন্ত্রপাতি চলে আসছে। চিকিৎসা সেবার মানও হবে অনেক উন্নত।
মেডিকেল কলেজ হওয়াতে জেলার চিকিৎসা সেবা অনেক উন্নত হবে বলে মনে করেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) টাঙ্গাইল শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. শহীদুল্লাহ কায়সার।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আলী খান বলেন, টাঙ্গাইলবাসীর অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের জন্য নির্মিত ভবনেই আপাতত চলবে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম।
পরবর্তীতে হাসপাতাল চত্বরের বাইরে ৪.৭ একর যে ভুমি রয়েছে সেখানে স্থাপন করা হবে মেডিকেল কলেজের পূর্নাঙ্গ ক্যাম্পাস। প্রধানমন্ত্রী আরও ১০টি মেডিকেল কলেজের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের পাশাপাশি টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের প্রথম বর্ষের ক্লাশ শুরু হবে।
--ঢাকাটাইমস
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়