সুনন্দা হত্যায় আইপিএলের যোগসূত্র!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,কানাইঘাট নিউজ: চার ঘণ্টারও বেশি সময় পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে কখনও হেসে কথা বলেছেন, কখনও বা জিজ্ঞাসু অফিসারের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে উত্তর দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শশী থারুর। সোমবার রাত আটটা থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত স্ত্রীর মৃত্যু প্রসঙ্গে দিল্লির বসন্ত বিহার থানায় বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) বহু প্রশ্নের ধৈর্য ধরে উত্তর দিয়েছেন শশী। সুনন্দার সঙ্গে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখে পুলিশ এবার নজর দিচ্ছে আইপিএল কেলেঙ্কারির দিকে। থারুর-পত্নীর খুনে আইপিএল-এর কোনও ভূমিকা ছিল কি না, তা জানতে ফের ডাকা হতে পারে প্রাক্তন মন্ত্রীকে। মঙ্গলবার তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন দিল্লি পুলিশ কমিশনার। দিল্লি পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আইপিএল নিয়ে এত দিন পর্যন্ত যা যা তথ্য হাতে এসেছে, তার সবই প্রাসঙ্গিক। এ নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ চলবে।’ আইপিএল-দুর্নীতির জেরেই ২০১০ সালে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছিল থারুরকে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তদানীন্তন প্রতিমন্ত্রী তারুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, আইপিএলে কোচি দল কেনার ক্ষেত্রে মন্ত্রী হিসেবে প্রভাব খাটিয়েছেন এবং এর জেরে কোচি দলের ৭০ কোটি রূপি মূল্যের ১৯ শতাংশ অংশীদারি পায় সুনন্দার সংস্থা রাঁদেভু স্পোর্টস। সুনন্দা তখনও থারুর বন্ধু। তাঁদের বিয়ে হয়নি। সে সময়ে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন সুনন্দা। পরে তিনি রাঁদেভু স্পোর্টস থেকে সরে যান। ৭০ কোটির অংশীদারিও ছেড়ে দিয়ে শেষ বারের মতো থারুরকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন। শেষমেশ অবশ্য অনিয়মের অভিযোগে কোচি দলকেই বাতিল করে দেয় বিসিসিআই। তবে দিল্লির পুলিশ স্পষ্ট করে জানায়, সুনন্দা- হত্যায় মামলায় শশী থারুরকে একজন সাক্ষী হিসেবেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, কোনও সন্দেহভাজন হিসেবে নয়। শশীকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আগে-পরে কী হয়েছিল, খুনের দিন কী কী হয়েছিল, সংবাদমাধ্যমে যা যা প্রকাশ্যে এসেছে এমন অনেক কিছু নিয়ে কথা হয়েছে।’ পুলিশের দাবি, শান্ত ভাবে বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন। মেনে নিয়েছেন, স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা হচ্ছিল। তবে গত বছর শুরুর দিকে সুনন্দার মৃত্যুর পর শশী তদন্তকারীদের বলেছিলেন, দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। কিন্তু আমরা সুখী দম্পতি ছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদের আগের দিন শশী থারু আইনজীবীর একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে দাবি একটি সূত্রের। সেখানেই তিনি ঠিক করে নেন, কোন প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর কী হবে। পুলিশের এক সূত্রের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্ন যা শশীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তার মধ্যে রয়েছে, ১) চিকিৎসক দেননি, অথচ সুনন্দার ঘরে কেন অ্যালপ্রাক্স পড়েছিল? ২) সুনন্দার দেহে ১৫টি আঘাতের চিহ্ন কেন? আপনি কি ওঁকে আঘাত করেছিলেন? ৩) সুনন্দা সাড়া দিচ্ছেন না দেখেও কেন তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি? পুলিশকেও কেন তখনই ডাকা হয়নি? ৪) মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ নিয়ে এইমসের অধিকর্তার কাছে কেন মেল পাঠানো হয়েছিল? ৫) আপনি কেন বলেছিলেন সুনন্দার লুপাস হয়েছে, তাঁর এমন কিছু তো হয়নি? ৬) পাক সাংবাদিক মেহর তরারকে কী ভাবে চেনেন? দুবাইয়ে কি আপনি ওঁর সঙ্গে থাকতেন? পুলিশের ওই সূত্রের দাবি, কেটি (যাঁকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন ক্যাথি বা ক্যাথরিন) নামে এক মহিলা সম্পর্কেও শশীকে জেরা করা হয়। শশীর ব্যক্তিগত সহকারী পুলিশকে বলেছিলেন, কেটি নামের ওই মহিলাকে নিয়ে সুনন্দার সঙ্গে প্রায়শই বাদানুবাদ হত থারুর। শশী কিছু নির্দিষ্ট বিবিএম মেসেজ মুছে ফেলেছিলেন। কিন্তু সুনন্দা সেগুলি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। পুলিশ সেটিরও কারণ জানতে চেয়েছে।

খবর বিভাগঃ দেশের বাইরে

শেয়ার করুন