সময়ের ব্যবধানে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশ থেকে হাজার হাজার তাবলিগ অনুসারী বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে অংশ নেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। প্রতিবছর ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আল্লাহওয়ালাদের পদভারে জেগে ওঠে তুরাগ তীর। সেই ১৯৪৬ সাল থেকে আমাদের দেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন ক্ষুদ্র একটি মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষে এত বড় একটি মহাসম্মেলন করার সুযোগ পাওয়া এবং সফলভাবে আঞ্জাম দিতে পারাটা সহজ কথা নয়। এটা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্য ও গর্বের।
মুসলমান হয়েও যারা ইসলামী অনুশাসন পালনে উদাসীন, ইসলামের বিধিনিষেধ জানার ও অনুধাবনের আগ্রহ যাদের কম, তাদের আখেরাতমুখী করতেই মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) দাওয়াত ও তাবলিগের এ সুমহান ধারা প্রবর্তন করেন। প্রকৃত অর্থেই সাধারণ মানুষের জন্য এটা অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। তাবলিগের মাধ্যমে আজ হাজার হাজার পথভোলা মানুষ আলোর সন্ধান পাচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমা একটি শিক্ষা কেন্দ্র। এখানকার প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ শিক্ষা নেয়ার মতো। ইজতেমার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো শৃঙ্খলা। সবার মুখে জিকির। নেই কোনো ঝগড়া-বিবাদ। ভ্রাতৃত্ববোধ, ধৈর্য ও ঐক্যের বাস্তব চিত্র দেখা যায় ইজতেমার মাঠে। সবাই ভাগাভাগি করে নেন একে অন্যের কষ্ট। কোনো শোরগোল নেই। ধনী-দরিদ্রের কোনো ভেদাভেদ নেই। মুসলমানদের আদর্শ ও শিক্ষা কত সুন্দর, তার কিছুটা নমুনা দেখা যায় ইজতেমা ময়দানে। বিশ্ব ইজতেমায় লাখ লাখ মুসলমান কোরআন ও হাদিসের অনুসরণে জীবনযাপনের নতুন প্রেরণা লাভ করেন। ইসলাম নির্দেশিত পথে জীবন নির্বাহের দীক্ষা নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যান। এ শিক্ষা আমাদের জীবনে ধরে রাখতে হবে।
বিশ্ব ইজতেমা আমাদের জাতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভিতকেও মজবুত করেছে। আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সবাই এসে বিশ্ব ইজতেমায় শামিল হন। শত পথ ও মতের মাঝে ইজতেমাই এখন সবচেয়ে বড় মাধ্যম, যেখানে এক কাতারে এসে দাঁড়ায় গোটা বাংলাদেশ। আমাদের জাতীয় জীবনে বিশ্ব ইজতেমা এখন বৃহত্তর ঐক্যের প্রতীক।
শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ গঠনে বিশ্ব ইজতেমা বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশ ও জাতির পরিচয় উঁচু করে তুলে ধরছে। কোনোভাবেই তা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
এবারের বিশ্ব ইজতেমা এমন সময় হচ্ছে যখন আমাদের দেশ অগি্নগর্ভ। রাজপথ উত্তপ্ত। প্রধান দুই দল মুখোমুখি। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমার কথা মাথায় রেখে দুই পক্ষেরই নমনীয় হওয়া উচিত বলে মনে করি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না দিয়ে সফলভাবে সমাপ্ত হোক এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
বিশ্ব ইজতেমা থেকে আহরিত জ্ঞান আমাদের জীবনে আলো দিয়ে যাক সারা বছর এ কামনা করি। তাবলিগের এ কার্যক্রম অনন্তকাল অব্যাহত থাকুক। আরও গতিশীল হোক। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ুক সারা পৃথিবীতে।
মাহফুজুল হক, প্রিন্সিপাল, জামেয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
অনুলিখন : ইহসানুল হক
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়