আন্তর্জাতিক ডেস্ক,কানাইঘাট নিউজ:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবতাবাদী সংগঠনগুলো মিলে ব্লাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে এক আন্দোলন শুরু করেছে।
প্যারিসে শার্লি হেবদো পত্রিকার ওপর হামলার পর এসব সংগঠন মনে করছে, ধর্মীয় অনুভূতিকে সুরক্ষা দিয়ে বিভিন্ন দেশে যেসব আইন আছে তা বিলোপের আহ্বান জানানোর এটাই সময়। কিন্তু বাস্তবতা হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে জনসমর্থন আছে।
শার্লি হেবদো পত্রিকার ওপর হামলার মূলে ছিল ইসলামের নবী মুহাম্মদের কার্টুন প্রকাশ। ইসলাম ধর্মের কিছু শাখায় নবীর ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে ঠিকই, কিন্তু ব্লাসফেমি নামে এই বিশেষ অপরাধের কথা অন্য অনেক ধর্মে এবং নানা দেশের আইনেই আছে।
ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে অনেকে বলেন, ধর্মীয় অনুভুতি এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য এটা প্রয়োজন। এর বিরোধীরা মনে করেন এতে বাকস্বাধীনতা খর্ব হয় এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করতেও একে ব্যবহার করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এন্ড এথিক্যাল ইউনিয়নের (আই এইচ ই ইউ) পরিচালক বব চার্চিল বলেন, এটা কোন সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ নয়, বা তারা কোন ধরণের বৈষম্যকে উৎসাহিত করতে চান না।
তিনি আরও বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে ঘৃণা উস্কে দেবার বিরুদ্ধে যেসব সংগত আইন আছে সেগুলো আমাদের লক্ষ্যবস্তু নয়। তবে পরিবর্তন এবং সংস্কারের পক্ষে সংখ্যায় অপেক্ষাকৃত কম হলেও অনেকে আছেন - কিন্তু তাদের কণ্ঠ অনেক সময়ই শোনা যায় না।’
বিভিন্ন দেশে ব্লাসফেমি:
ধর্মের অবমাননার জন্য বাংলাদেশে আসিফ মহিউদ্দিনের জেল হয়েছে, সৌদি আরবে রাইফ বাদাওয়িকে চাবুক মারা হয়েছে। পাকিস্তানের আসিয়া বিবি ২০১০ সাল থেকে ফাঁসির আসামী।
আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিশর, ইরান, সুদান -এমন অনেক দেশে ধর্মীয় সংক্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। পিউ গবেষণা সংস্থা বলছে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় এ ধরণের আইন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ আইনের সমর্থকও সবচেয়ে বেশি এ অঞ্চলে।
৫৬টি ইসলামী দেশের সংগঠন ওআইসি বহুবার চেষ্টা করেছে ধর্মের অবমাননা নিষিদ্ধ করার একটি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের ব্যাপারে জাতিসংঘের সমর্থন পেতে। তাদের মহাসচিব আইয়ান আমিন মাদানি বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে ইসলামের শিক্ষার সংঘাত ঘটছে।
এ ছাড়া মায়ানমারে ডিসেম্বর মাসে হেডফোন পরা বুদ্ধের একটি ছবি বিতরণ করার ফলে ধর্মীয় অবমাননার দায়ে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
ইউরোপে ব্লাসফেমি:
ডেনমার্কে দন্ডবিধির ১৪০ ধারায় ব্লাসফেমির কথা আছে। তবে ১৯৩৮ সালে ইহুদি-বিরোধী প্রচারণার দায়ে একটি নাৎসি গ্রুপকে অভিযুক্ত করার পর থেকে আর কখনো এই বিধিটি প্রয়োগ করা হয়নি।
২০১৪ সালে রাশিয়ার এমপিরা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেবার বিরুদ্ধে একটি নতুন আইন পাস করে। 'পুসি রায়ট' নামে একটি পপ গ্রুপ গির্জার ভেতরে রাজনৈতিক প্রতিবাদ জানানোর পর ওই আইন পাস হয়।
গ্রিসে একজন প্রয়াত ধর্মযাজককে নিয়ে ফেসবুকে বিদ্রূপ করায় এক ব্যক্তির ১০ মাসের কারাদন্ড হয়।
আয়ারল্যান্ডে ২০০৯ সালে ব্লাসফেমি আইন করার পর এখনো তা নিয়ে একটি গণভোট করা না হওয়াতে বেশ কিছু গোষ্ঠী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।
মাল্টায় ২০১২ সালে পাবলিক ব্লাসফেমির অভিযোগে মোট ৯৯ জনকে জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদন্ড পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়া হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বলছে, ধর্মীয় অবমাননার ইস্যুটি সৌদি আরবের এক অনুরোধের প্রেক্ষপটে মার্চ মাসে একটি অধিবেশনে তোলা হবে।
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়