Sunday, January 4

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) আজ


ঢাকা: আজ মুসলমানদের আবেগ-অনুরাগ প্রাণোত্সারিত ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে একাকার হওয়া প্রাণ-মন-মনন আকুল করা দিন। আজ উত্সবের রোশনাইঘেরা বারোই রবিউল আউয়াল। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লি­ল আ’লামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগত্কুল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্ল­ামের জন্ম ও ওফাত দিবস। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খৃস্টাব্দের এ দিনে সুবহে সাদেকের সময় জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে ’ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়...। জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন। চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। ‘তৌহিদেরই মুর্শিদ’ অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আ’লামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের উপর নিপীড়ন শুরু করে। শয়তানী চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। মহান আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি একপর্যায়ে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে। রাসূল সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসাবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খৃস্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় সমান্তরালে। ২৩ বছর অক্লান্ত শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কামিয়াবী অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্ল­াহর বাণী শুনিয়ে মানবজাতিকে বলেনঃ ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসাবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পণ্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসাবে স্থান দিয়েছেন। বৃটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইতো। তার আগমনে যে বিপ্ল­বের সূচনা হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের জন্মদিন ও ওফাত দিবস একদিনেই বলেই কথিত আছে। এ বিষয়ে মতভেদ থাকলেও প্রতি বছর ১২ই রবিউল আউয়ালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে পালন করে মুসলিম বিশ্ব। এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে সীরাতুন্নবীর আলোচনা, দরুদ পাঠ, দান-সদকা করে থাকেন। মিষ্টি-খাবার প্রভৃতি তৈরি করে বিতরণ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম প্রেমিকরা অহর্নিশি ভক্তিভরে দরুদ পাঠে মশগুল থাকেন। প্রাণের আবেগমেখে পড়েন : বালাগাল উলা বিকামালিহি/কাশাফাত দুজা বিজামালিহি/হাসুনাত জামিঊ খিসালিহি/সাল্লু আলাইহি ওয়ালিহি...। আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সীরাতের উপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন র‌্যালি বের করবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, “পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আমি প্রিয় দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলিম ভাই-বোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত ও শান্তির দূত হিসাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ জগতে প্রেরণ করেন। তিনি ছিলেন তাওহীদের প্রচারক, রিসালাতের ধারক ও বাহক এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল’। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদীনা সনদ’-এর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন ঘোষণা রয়েছে। সুতরাং ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে তাঁর শিক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ আমাদের সকলের জীবনকে আলোকিত করুক, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর দিবসে মহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, “বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন ওফাতের পবিত্র স্মৃতিবিজড়িত ১২ই রবিউল আউয়াল উপলক্ষে আমি মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য ও দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-কে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সারাজাহানের জন্য রহমত হিসাবে। পাপাচার, অত্যাচার, মিথ্যা, কুসংস্কার ও সংঘাত জর্জরিত পৃথিবীতে তিনি মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অন্ধকার যুগের সকল আঁধার দূর করে সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন। তিনি বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন এবং মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান ও পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং রাসূল (সা:)-এর আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়