Tuesday, December 16

পাকিস্তানের সেনা অভিযান ১০০ শিশুসহ নিহত ১৩২


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে মঙ্গলবার তালেবান জঙ্গিদের হামলা এবং সেনাবাহিনীর অভিযানে অন্তত ১০০ স্কুল শিক্ষার্থীসহ ১৩২ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ৬ বন্দুকধারীও নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। দুপুর ১২টার পরপরই গুলি করতে করতে স্কুলের ভেতরে ঢুকে ৫০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে তেহেরিক-ই-তালেবান জঙ্গিরা।নিহত শিক্ষার্ীদে বয়স ছয় থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।বিকাল পাঁচ টার পরই সংকটের অবসান হয়। তেহেরিক-ই-তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি জঙ্গি অভিযানের দায় স্বীকার করেছে। তিনি ফোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে দায় স্বীকার করেন। জানা যায়, পরীক্ষা চলাকালে ভিতরে টুকেই নিষ্পাপ শিশুদের ওপর অতর্কিতে গুলিবর্ষণ করে তালেবান যোদ্ধারা। স্থানীয় লেডি রিডিং হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে অন্তত ১০০ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সেনাসদস্য, স্কুলের নিরাপত্তা প্রহরী এবং শিক্ষকও রয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা স্কুলটির চারপাশে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ অভিযান চালানো হয় বলে জানায় ডন। এই সেনা অভিযানে পাঁচ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছেন। সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, আটকা পড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাইকে বের করে আনা হয়েছে। তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ উমর খোরাসানি জিম্মি করার দায় স্বীকার করে দুপুর দুইটার দিকে বলেন, আমাদের আত্মঘাতি বোমা হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় তাদের সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের মূল টার্গেট সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রতি। তিনি আরও বলেন, এটি একটি প্রতিশোধমূলক হামলা। দেশটির নর্থ ওয়াজিরিস্তানে সেনাবাহিনীর তালেবান বিরোধী আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবেই আমাদের এ হামলা। পুলিশ কর্মকর্তা জাভেদ খান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে বন্দুকধারীরা স্কুলে ঢুকে পড়ে। বিষয়টি টের পেয়ে সেনাবাহিনী কমান্ডো তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে চলে আসে।এক পর্ায়ে সেনাবাহিনী ও বন্ধুকধারীদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। পাকিস্তানি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয়েছে, সেনাবাহিনী ওই স্কুলের চারপাশ ঘিরে রেখেছে এবং শিক্ষার্থীদের বের করে আনছে। সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমপক্ষে ছয় বন্দুকধারী সন্ত্রাসী সেনাবাহিনী চালিত পাবলিক স্কুলে ঢুকেছে। ভেতরে ৫০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। স্কুলের বাস চালক জামসেদ খান বলেছেন, আমরা স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ করে গুলির শব্দ শোনা যায়। এ শব্দ শুনে সবাই চিৎকার শুরু করে ও সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুক্ত হয়ে আসা একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হামলাকারীরা হামলা করেছে। হামলার আধা ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী আসে। তিনি আরও বলেন, আমরা পরীক্ষার হলে ছিলাম। এমন সময় হামলা শুরু হয়। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক সেনা নিয়ন্ত্রিত স্কুলে বর্বর হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। খাইবার পাখতুনখওয়া রাজধানী পেশোয়ারে পৌঁছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে নওয়াজ শরীফ বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করা না পর্যন্ত এই লড়াই, এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এক টুইটে পাকিস্তানের শোকতপ্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে মঙ্গলবার দুপুরে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা হামলা চালায়। একে একে স্কুলের প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে নিষ্পাপ শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে তারা। হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা স্কুলটির চারপাশে অবস্থান নিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকারিবাহিনী। সর্বশেষ পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, এই হামলায় অন্তত ১২৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছেন সেনাসদস্য, স্কুলটির নিরাপত্তাকর্মী এবং শিক্ষকও। অপরদিকে সেনা অভিযানে ৫ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই হামলায় আহত হয়েছে আরও শতাধিক। পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ একশরও বেশি জন জিম্মি আছে স্কুলের ভেতর।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়