Saturday, December 13

আ.লীগকে বিজয়ের মাসেই বিদায় নিতে হবে


ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আজকে দেশের অবস্থা ভাল নয়। এখন বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসেই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে এই বোঝা সরাতে হবে। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে দলীয়করণ করা হয়নি। সকল প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শনিবার নারায়ণগঞ্জের কাচপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাত খুন নয়, ১১ জন খুন হয়েছেন। তাদের পরিবার ন্যায় বিচার পায়নি। এই খুনের সঙ্গে কারা জড়িত? এর সাথে সরকার ও সরকার দলীয় লোক এবং র‌্যাব জড়িত। তিনি বলেন, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াকে ধরলেই সব কিছু বের হয়ে যাবে। অবিলম্বে জিয়াকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। খুনি হয়ে কেন জিয়া এখনও চাকরিতে বহা্ল আছে? তাকে এখনই চাকরিচ্যুত করে জেলখানায় নিতে হবে। তার বিচার করতে হবে বলেও দাবি জানান খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে দেশের সিভিল প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। ভাল ভাল কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। না হলে ওএসডি করা হয়েছে। কিছু দিন আগেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে। এসব করার জন্য সরকার মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছে। যাতে মেধাবী কর্মকর্তারা প্রশাসনে থাকতে না পারে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে বিশ্ব বেহায়া উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিশ্ব বেহায়াদেরকে দেশ থেকে বিদায় করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থেকেই তা আদায়ের ঘোষণা দেয়া হবে বলেও জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, “১২ মাস সময় দিয়েছি, আলোচনা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার। কিন্ত আপনারা আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেননি। এই অবস্থায় আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই। “দেশবাসী, মা-বোনদের বলব, আমি যখন আহ্বান জানাব, তখন সবাইকে এবার রাস্তায় নেমে আসতে হবে। যেখানে যে অবস্থায় থাকেন, যার ‍যা কিছু আছে, তা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। যতদিন প্রয়োজন রাস্তায় থেকে দাবি আদায় করে ছাড়ব।” বিভিন্ন জেলায় জনসভার পর আগামী জানুয়ারিতে কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী খালেদা জিয়া ইতোপূর্বে বলেছেন, তিনি নিজেই এবার রাজপথে থাকবেন। সরকারকে হুঁশিয়ার করে কাচপুরে ২০ দলের জনসভায় তিনি বলেন, “আবার বলছি. এখনও সময় আছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সরে পড়ুন। নইলে আপনাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ ও খারাপ।” জনসভায় বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তাদের হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে তার পরদিন থেকেই আন্দোলন শুরু হবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখেন তিনি। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে এটা ছিল খালেদা জিয়ার দশম জনসভা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বালুর মাঠে এই জনসভার কারণে মহাসড়কে দুপুর থেকে ছিল যানজট। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা মিছিলে বালুর মাঠ ভরে যাওয়ায় জনসমাগম ছড়িয়ে ছিল মহাসড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায়। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি খচিত কয়েকটি বেলুনও ওড়ানো হয় জনসভাস্থলে। ২০ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত তাদের নেতা মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, এম কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলীর ছবি সম্বলিত বেলুনও ওড়ায়। জনসভার পূর্ব পাশে মঞ্চের পাশেই টানানো ছিল বিশাল ব্যানার, যাতে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত খুনের ঘটনায় নিহত সাতজনের ছবির ওপর বড় অক্ষরে লেখা- ‘এই জুলুমের দৃশ্য দেখার জন্য কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। মানবতার কি নিষ্ঠুর আঘাত হায়েনারদের’। ওই ব্যানারে এক পাশে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের হামলায় নিহত বিশ্বজিত দাস এবং সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা লাশের ছবিও ছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইসহাক বিশেষ মোনাজাত করেন। জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, রাজিব আহসান। জেলা নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রেজাউল করীম, আতাউর রহমান আঙ্গুর, গিয়া্স উদ্দিন আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ, বদরুজ্জামান খসরু, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার আবু জাফর, আজহারুল ইসলাম মান্নান, আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম, এটিএম কামাল, শাহ আলম প্রমুখ। জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান, রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ইয়াছির আরাফাতও বক্তব্য রাখেন জনসভায়। এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সেলিমা রহমান, আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, আমিরুল ইসলাম আলিম, আকরামুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু সভায় ছিলেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়