Saturday, November 8

পরপর ৮টি সন্তানকে হত্যা করলেন মা


কানিউজ ডেস্ক : যৌন মিলনের সময় জন্মনিয়ন্ত্র পদ্ধতি ব্যবহারে অনিচ্ছুক, আবার সন্তানও নিতে চান না। ফলে এক ফরাসি মা গর্ভে ধারণের পর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই একে একে খুন করেছেন তার ৮ নবজাতক সন্তানকে। ফ্রান্সের বাসিন্দা ডমিনিক কট্রেজ নামের ওই মা পেশায় একজন নার্স! ৫০ বছর বয়সী ওই নার্স স্বীকার করেছেন ১০ বছর আগে তিনি এই হত্যাযজ্ঞ ঘটান। যৌন মিলনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাননি বলেই তিনি এমনটা করেছেন বলে জানান ডমিনিক। আর ডাক্তারের কাছে গিয়ে কন্ট্রাসেপ্টিভও লাগাতেও আগ্রহী ছিলেন না তিনি। আর এ অপরাধে আদালত তাকে বিচারের সম্মুখীন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের ইতিহাসে শিশু হত্যার মতো অপরাধের ক্ষেত্রে এটি এক বিরল ও সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। অথচ ওই নারী তার এই অপরাধ ১০ বছর আগে সংঘটিত হওয়ার অজুহাতে বিচার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন ‘সীমাবদ্ধতা সংবিধি’ অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য তাকে বিচারের মুখোমখি করার সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কিন্তু আদালত রুল জারি করেছে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কারণ নবজাতক শিশুদেরকে হত্যার পর তাদের লাশ গুম করে ফেলায় এটা প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে ১০ বছর আগেই ওই হত্যাকান্ডগুলো ঘটেছিল। এই নারকীয় হত্যাকান্ডের কথা প্রথম ফাঁস হয় চার বছর আগে। যখন উত্তর ফ্রান্সের ভিলিয়ার্স-সুর-তার্ত্রে নামক গ্রামের একটি বাড়ির নতুন মালিক তাদের বাড়ির বাগানে একটি পুকুর খননের সময় মানুষের হাড়গোড় বেরিয়ে আসে। ওইসময় তারা দুটি শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার করেন। ১৯৯১ সালে কট্রেজ পরিবার ওই বাড়িটি ছাড়ার পর থেকে শুরু করেই উদ্ধারকৃত শিশুদের দেহাবশেষগুলো সেখানে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পরপরই বাড়িটির নতুন মালিক পুলিশে খবর দেয়। এরপরপরই ডমিনিক কট্রেজ এবং তার স্বামী পিয়েরে ম্যারি কট্রেজের খোঁজে নামে পুলিশ। আগের বাড়ি থেকে মাত্র আধা মাইল দুরে আরেকটি বাড়ি থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। আটকের পর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের পুরোনো বাড়ির বাগানে তল্লাশি চলিয়ে আরও ছয়টি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১০ সালে পাবলিক প্রসিকিউটর এরিক ভেইলেন্ট মামলার প্রাথমিক শুনানিতে বর্ননা করেন, দৃষ্টিকটুভাবে স্থুল স্বাস্থ্যের অধিকারী কট্রেজ কীভাবে তার বিশাল বপুর আড়ালে নিজের গর্ভবতী হয়ে পড়ার বিষয়টি লুকিয়ে রাখতেন। এরিক বলেন, ‘তিনি এতোটাই মোটা ছিলেন যে বাইরে থেকে দেখে কারও পক্ষে বুঝার উপায় ছিল না যে তিনি গর্ভবতী। ফলে পরপর আটবার গর্ভধারনের পরও আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা কিছুই বুঝতে পারেননি!’ জিজ্ঞাসাবাদে কট্রেজ বলেন, তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়ার পরও কোনও সন্তান চাচ্ছিলেন না। অথচ যৌন মিলনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেও আগ্রহী ছিলেন না তিনি। ফলে প্রতিবারই তিনি গোপনে সন্তান জন্মদানের পরপরই নবজাতক শিশুটিকে হত্যা করে লাশ গুম করতেন। তবে তার স্বামী পিয়েরে ম্যারি কট্রেজ (৪৮) নিজ স্ত্রীর এই নারকীয় হত্যাকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেন তার স্ত্রীর বারবার গর্ভবতী হয়ে পড়া বা নবজাতক শিশুদের হত্যার ব্যাপারে তার কিছুই জানা ছিল না। অবশ্য ওই স্বামীকেও নিজ স্ত্রীর এ জঘন্য হত্যাকান্ডের অপরাধ গোপন করার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে। উল্লেখ্য, এই দম্পতির দুটি মেয়ে সন্তান বেঁচে আছেন। এরা হলেন, ভার্জিনি (২২) ও অ্যামেলিন (২৩)। অ্যামেলিন জানান, তার মা নানী হিসেবে তার সন্তদানদের প্রতি খুবই সদয় ছিলেন। তিনি বলেন, নানী হিসেবে তার মা খুবই দয়ালু ও স্নেহময়ী ছিলেন।’ ফলে তাদের মা এ ধরনের নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে এটা তদের বিশ্বাসই হচ্ছে না। অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে মামলার শুনানিতে ডমিনিক কট্রেজ এর আইনজীবি ম্যারি-হেলেন কার্লিয়ার বলেন, ‘আমার মক্কেল তার ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতা স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু তার বিশ্বাস যে, আইনগতভাবে তাকে শাস্তি দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেছে।’ তবে আদালত তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা করেছে যে, তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং তাকে সাজাও ভোগ করতে হবে। আগামী বছর তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ডমিনিক কট্রেজ নিজের ৮ নবজাতককে হত্যার এই নারকীয় ঘটনা ঘটান। ফ্রান্সে এই ধরনের নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১০ সালে সেইলিন লিসেজ (৩৮) নামে এক মাকে নিজের ৬ নবজাতককে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগে ১৫ বছরের জেল দেওয়া হয়। হত্যার পর লাশগুলো ঘরের সিলিংয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন ওই পাষন্ড মা। ২০০৯ সালে ভেরোনিক কোরজোল্ট নামে আরেক মাকে তার তিন নবজাতককে হত্যার অপরাধে ৮ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়। ভেরোনিক তার এক সন্তানের লাশ পুঁড়িয়ে ফেলেছিলেন আর বাকী দুইজনের লাশ ফ্রিজে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়