ফিচার ডেস্ক,কানাইঘাট নিউজ:
স্মৃতিশক্তি তৈরি হয় এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যাতে জড়িত থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ও বিভিন্ন যোগাযোগ প্রক্রিয়া। সকলের স্মৃতিশক্তি সমান হয় না। কারণ, সবার মস্তিষ্কের গঠন একরকম নয়।তবে কয়েকটি সহজ কৌশলে আপনিও বাড়িয়ে নিতে পারেন আপনার স্মৃতিশক্তি। নিচে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কয়েকটি কলাকৌশল উল্লেখ করা হলো:
১. ব্যায়াম করুন:
ব্যায়াম শুধু আপনার শরীরকেই সচল করে না, এটি আপনার মস্তিষ্ককেও সচল রাখে। স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজন আপনার মস্তিস্কের জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে কিংবা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সচল না থাকলে রক্তবাহী নালীগুলোতে চর্বি জমে। ফলে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবারাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মস্তিষ্কের কোষগুলোও। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সচল রাখুন আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো।
২. মানসিক চাপ কমান:
রাগ, ক্ষোভ বা উদ্বেগ আপনার ব্রেনকে কিছু সময়ের জন্য স্থবির করে দেয়, যা আপনার স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক চাপের মধ্যে বিষন্নতা সবচেয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। বিষণ্ণতা আপনার মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে এবং রক্তে করটিসলের লেভেল বাড়িয়ে দেয়। করটিসেলের লেভেল বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়, বিশেষ করে হিপ্পোক্যাম্পাসের। যেখানে শর্টটার্ম মেমোরি সংরক্ষিত থাকে। তাই বিষণ্ণতাসহ সকল মানসিক চাপ যতদূর সম্ভব কমিয়ে ফেলুন।
৩. পর্যাপ্ত ঘুমান: একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একটা চমৎকার ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। ঘুমের সময় সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যগুলোকে মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করতে থাকে। আর ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মেমোরি পরবর্তী স্মৃতি ধরার জন্য প্রস্তুত হয়। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারেন।
৪. সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো লিখে রাখুন: যে বিষয়গুলো স্মৃতিতে রাখতে চান তা লিখে ফেলার অভ্যাস করুন। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। লেখার সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ে। তাই লিখে রাখুন ডায়রিতে, ইমেইলে বা ব্যক্তিগত ব্লগে।
৫. গান শুনুন: অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন- স্মৃতির সাথে গান শোনার কী সম্পর্ক? গবেষকরা দেখিয়েছেন কিছু সংগীত স্মৃতিশক্তি বাড়াতে উপকারি। ব্যাপারটা এই রকম: কোনো ঘটনার সময় আপনি যদি কোন গান শুনেন তবে পুনরায় সেই গান শোনার সময় সেই ঘটনার আবহের স্মৃতি আপনার মস্তিষ্কে জেগে উঠবে।
৬. পুষ্টিকর খাবার খান: মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে ভিটামিনযুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাজা ফলমূল, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, গমের রুটি প্রভৃতি প্রোটিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। পরিমান মতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন। প্রচুর চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। বিশেষ করে বাসি-দূষিত খাবার খাবেন না। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।
৭. অন্যকে শেখান: নিজে যা শিখতে চাচ্ছেন তা একবার শিখে নিয়ে অন্যকে শেখান। অন্যজনকে শেখাতে গিয়ে দেখবেন আপনার জানার ঘাটতিগুলো ধরতে পারছে। আবার চর্চাও হবে আরেক জনকে শেখানোর মাধ্যমে। নতুন কিছু বিষয়ে আপনার কোনো চিন্তা আরেকজনের সঙ্গে শেয়ারও করতে পারেন। তাহলে আপনার স্মৃতিতে তা স্থায়ী হবে। লোকটাকে দেখা মাত্রই বিষয়টি আপনার স্মৃতিতে আসবে।
চর্চা আর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব কিছু অর্জন সম্ভব। একটু চেষ্টা করলেই বাড়িয়ে নিতে পারেন স্মৃতিশক্তি, মনে রাখার ক্ষমতা। সুস্থ থাকুন।
৮. শেখায় মনোযোগ দিন: আপনার স্মৃতিতে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি মস্তিষ্কে লেখা হতে হবে আর যদি যথেষ্ট মনোযোগ না দেন, মস্তিষ্কে লেখার কাজটি হবে না। মস্তিষ্কের যথাযথ স্থানে একটি তথ্যেও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় আট সেকেন্ড সময় লাগে। তাই বহু কর্ম একসঙ্গে করতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয়, এটি পরিহার করতে হবে। আপনার শেখার ধরন বুঝুন এবং সেভাবে শিখুন।
অধিকাংশ মানুষ দেখে শেখে, তারা উত্তমভাবে শেখে পড়ে পড়ে অথবা যা দেখার তা দেখে দেখে। কিন্তু কেউ কেউ আছে, তারা ভালো শেখে শুনে শুনে, যদি তারা ক্লাসের লেকচার অডিও বা ভিডিও রেকর্ড করে বারবার শোনে বা দেখে, তাহলে ভালো মনে রাখতে পারে। যত বেশি সেন্স ব্যবহার করা যায় ব্যবহার করুন।
৯. তথ্যকে সংগঠিত করুন: বিষয়গুলো লিখুন, জটিল বিষয়গুলোর নোট নিন এবং পরে ক্যাটাগরি অনুযায়ী পুনর্বিন্যাস করুন। চেষ্টা করে এর ব্যাখ্যা বের করুন। অধিকতর জটিল বিষয়গুলোর মৌলিক ধারণার ওপর জোর দিন, বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না।
জটিল বিষয়টি অন্যকে নিজের ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা অর্জন করুন। বারবার তথ্যের রিহার্সেল করুন এবং অতিরিক্ত শিখুন। যেদিন বিষয়টি শিখলেন, সেটি আবার ঝালাই করুন এবং মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে আবার ঝালাই করুন।
১০. স্মৃতিশক্তি-সহায়ক পদ্ধতি অবলম্বন করুন: এ পদ্ধতিতে কোনো বস্তু মনে রাখার জন্য একটি সূত্র (ক্লু) হিসেবে কাজ করে। যেমন ছবি, বাক্য বা শব্দ। ছড়া বা গানের আকারেও কোনো বিষয়বস্তু মনে রাখা যায়। কৌতূকের উদ্রেক করে (জোকস) এমন সব বিষয়ের মাধ্যমেও কঠিন বিষয়বস্তু মনে রাখা যেতে পারে।
Thursday, November 27
এ সম্পর্কিত আরও খবর
ব্রেইন ভালো রাখবে এই ৫ খাবার দুর্দান্ত স্মৃতিশক্তি কে না চায়? ফাংশনাল ফুড মৌলিক পুষ্টির বাইরেও স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়। এ ধর
শীতকালে ত্বকের যত্নে করণীয় দেশে শীতের মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে। আর এর প্রভাবে সারাদেশে কমতে শুরু করেছে দিন ও রাতের তাপমা
১৯৫৫ - বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয় আজ মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং। ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বাংলা। ২ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি। আজ গ্র
জুমার দিন যে দোয়া পাঠে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এই দিনে এমন কিছু সময় আছে যখন আল্লাহ তার বান্দা
শীতে এই ফেসপ্যাকেই হবে ত্বকের বাজিমাত শহরের হাওয়ায় শীত শীত ভাব। তার সঙ্গে হাত-পায়ের চামড়ায় টান ধরছে। খড়ি ফুটে উঠছে গায়ে। শীতকালে ত্
কানাইঘাটে জেলা প্রশাসকের দেওয়া বক্তব্য সর্বমহলে প্রশংসিতনিজস্ব প্রতিবেদক:কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন দফতরের প্রধান, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সুধীজনদের সাথে ম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়