Monday, November 10

নামাজের পরশে শুদ্ধ হয় জীবন


আল্লামা তাকী উসমানী: প্রতিটি মুসলমানই একথা জানেন, দ্বীনে ইসলামে নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এটি একটি মহিমান্বিত ইবাদত। দ্বীনের অন্যতম স্তম্ভ এটি। এসব কিছুর পাশাপাশি নামাজের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা মানুষের ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধি ও চারিত্রিক উৎকর্ষ অর্জনে মহৌষধের ভূমিকা রাখে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনার কাছে যে প্রত্যাদেশ পাঠানো হয়েছে তা আপনি তেলাওয়াত করুন আর নামাজ আদায় করুন। নিশ্চয় নামাজ যাবতীয় অশ্লীল ও গর্হিত কার্যাবলি থেকে বিরত রাখে। এ আয়াতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নামাজের ওই বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, তা মানুষকে যাবতীয় অসভ্য ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রেখে চারিত্রিকভাবে সভ্য ও পরিশুদ্ধ করে গড়ে তোলে। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নামাজের ভেতর অতিমাত্রার এমন একটি প্রভাবশক্তি রয়েছে, যার প্রতিটি ক্রিয়ায় নামাজির অপরাধ-প্রবণতা ও খারাপ অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, নামাজকে একটি বোঝা মনে করে দায়সারা গোছের মতো আদায় করলে চলবে না; বরং আল কোরআনের ভাষ্যমতে, ইকামাতে সালাত করতে হবে। ইকামাতে সালাতের শাব্দিক অর্থ সরল-সোজাভাবে নামাজ আদায় করা। তবে এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে, নামাজের বাহ্যিক ও ভেতরগত সব ধরনের আদব ও শিষ্টাচার যথাযথভাবে বজায় রেখে ঠিক সেভাবে নামাজ পড়তে সর্বাত্মক চেষ্টা করা যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ পড়েছেন। এর জন্য জরুরি হলো, নামাজের প্রাথমিক শর্তাবলি, সুন্নতগুলো ও আদব-কায়দা সঠিকভাবে শিক্ষা করে সেগুলো পূর্ণভাবে পালন করা। দ্বিতীয়ত যতটুকু বিনয়-ভক্তি, একাগ্রতা ও নিবিষ্টতা সৃষ্টি করা মানুষের সাধ্যে কুলায় তার সবটুকু ভেতরে জাগ্রত করে এমন বিগলিত হয়ে নামাজ আদায় করা যেন আল্লাহর কাছে সরাসরি কোনো আবেদন পেশ করা হচ্ছে। এভাবে নামাজ আদায়কারী সবার অলক্ষ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে ভালো কাজ করার এক অমিত শক্তি লাভ করে। আর অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এক ঐশী প্রেরণা তার ভেতরে সক্রিয় হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে নামাজ আদায় সত্ত্বেও যে ব্যক্তি দুশ্চরিত্র ও দুরাচারে লিপ্ত থাকে, মনে করতে হবে তার নামাজে নিশ্চয় কোনো ত্রুটি রয়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার নামাজ তাকে অশ্লীলতা ও অসততা থেকে বিরত রাখে না তার নামাজের কোনো মূল্যই নেই। আসল কথা হলো, যাবতীয় আদব-কায়দা ও শর্তাবলি পালন করে পূর্ণ ধ্যান-খেয়ালের সঙ্গে নামাজ পড়া হলে এ নামাজই আল্লাহপাকের সঙ্গে ওই ব্যক্তির এক গভীর সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। আল্লাহর সঙ্গে যার এ সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়, সে ধীরে ধীরে পাপের পথ পরিহার করে স্বচ্ছ জীবন গড়ে তুলবে না_ এটা কোনোভাবেই সম্ভবপর ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এক ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে পারলেন, লোকটি রাতের বেলা তাহাজ্জুদ পড়ে আর ভোর বেলা চুরি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অচিরেই নামাজ তাকে এ অপরাধ থেকে ফিরিয়ে আনবে। দেখা গেল, কিছুদিন পরই সে লোকটি চুরি করা ছেড়ে দিয়ে একদম ভালো মানুষ হয়ে গেছে। আজকাল আমরাও দেখতে পাই, কিছু লোক বাহ্যত নামাজের প্রতি খুব নিষ্ঠাবান ও পাবন্দ হওয়া সত্ত্বেও নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে ও অসততায় জড়িত থাকে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বলা যায়, তাদের নামাজে কোথাও না কোথাও কিছুটা ত্রুটি রয়েই গেছে। যদি সেই ত্রুটিটুকু দূর করা যায় তাহলে আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিশ্চয় নামাজ তাকে যাবতীয় অন্যায়-অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। আর এভাবেই এ মহিমান্বিত ইবাদত তার চারিত্রিক পরিশুদ্ধির পরশপাথরে পরিণত হবে। আমরা যেন নামাজের বাহ্যিক ও ভেতরগত সব ধরনের আদব, শিষ্টাচার, সুন্নত ও শর্তগুলো যথাযথভাবে আদায় করে নামাজ পড়তে পারি এবং এর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীণ সফলতা লাভ করতে পারি। আমিন। অনুবাদ : হাসান মুহাম্মাদ শরীফ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়