Monday, November 10

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা আল্লাহর নির্দেশ


মাওলানা গাজী মোহাম্মাদ সানাউল্লাহ আল্লাহ পাক মানবজাতিকে সমাজের সর্বত্র সুশাসন তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। ন্যায়বিচারক শাসককে তিনি কেয়ামতের দিন তার আরশের নিচে স্থান দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আদল বা ন্যায়বিচারক আল্লাহপাকের অন্যতম গুণবাচক নাম। সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপাদান হলো নৈতিকতা। মানুষ একটি নৈতিক প্রাণী। মানুষকে নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। নৈতিক জবাবদিহিতা মানুষের বৈশিষ্ট্য। মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীর পার্থক্য প্রধানত নৈতিক। জৈবিক দিক মানুষসহ সব জীবেরই রয়েছে কিন্তু নৈতিক দিক শুধু মানুষেরই আছে। এদিক দিয়ে মানুষ অনন্য। সব সমাজে ও সব ধর্মে নৈতিকতার গুরুত্ব স্বীকৃত। সুশাসনের অন্যতম উপাদান ইহসান। সৎ নিয়ত, ন্যায়বিচার, ভালোবাসা, দয়া, ভ্রাতৃত্ব, পাপ ও অপরাধ থেকে মুক্ত থাকা, নিজের বা অন্য কারও ক্ষতি না করা, মানবতাবোধ, দায়িত্ববোধ, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ, সঠিকভাবে কর্ম সম্পাদন ইত্যাদির নাম ইহসান। ইসলাম তাকওয়া ও ইহসানের ভিত্তিতে অত্যন্ত উচ্চমানের এক নৈতিক আদর্শ গড়ে তুলতে চায়। আর তাকওয়া ও ইহসান নৈতিক উৎকর্ষতার উচ্চ স্তরে পৌঁছার প্রকৃষ্ট পথ। ইসলাম সে পথেই মানবজাতিকে আহ্বান জানায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে, 'আল্লাহ তোমাদের আদল ও ইহসানের নির্দেশ দিচ্ছেন।' (সূরা নাহল : ৯০)। সমাজে সুশাসনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক প্রত্যেকের দায়িত্বশীলতা। দায়িত্বমুক্ত স্বাধীনতা বলে কোনো বস্তুর স্বীকৃতি ইসলামে নেই। যেখানে কাজের স্বাধীনতা থাকবে সেখানে কাজের দায়িত্বশীলতাও থাকতে হবে। আর তা না হলে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নিতে বাধ্য। কাজেই স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা অবশ্যই পরস্পর পরিপূরক। ইসলাম চায় মানুষ মানুষের প্রতি ভাই হিসেবে মানবিক আচরণ করুক। কেননা, গোটা মানবজাতিকে আল্লাহ একটি পরিবার থেকে সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, 'হে মানুষ আমরাই তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। বস্তুত আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সে ব্যক্তিই যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নীতিপরায়ণ বা মুত্তাকি।' (সূরা হুজরাত : ১৩)। দুনিয়ার সব মানুষ একই উৎস থেকে সৃষ্ট। কাজেই মানুষ হিসেবে কেউ উৎকৃষ্ট কেউবা নিকৃষ্ট নয়। সবাই সমান। পার্থক্য হতে পারে শুধু বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে সেই সর্বাধিক সম্মানিত। কাজেই মানবজাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা ইসলাম দিয়ে থাকে। বর্ণবাদ, গোত্রবাদ ইত্যাদির কোনো সুযোগ নেই ইসলামে। ইসলাম নৈতিকতার ক্ষেত্রে মানবজাতির এ সাম্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। সুশাসনের আরেকটি মাধ্যম হলো সবকিছুতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। ইসলাম মানুষকে মধ্যমপন্থী হতে নির্দেশ প্রদান করেছে। বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে। অতীতে ইহুদি-খ্রিস্টানরা ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করত। তাই তাদের হুশিয়ার করে দিয়ে আল্লাহ পাক বলেছেন, 'হে কিতাবধারীরা, নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি করো না।' (সূরা নিসা : ১৭১)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর খাঁটি বান্দার পরিচয় দিয়ে বলেছেন, 'যারা খরচ করলে না অপচয় করে, না কার্পণ্য করে বরং দুই সীমার মধ্যবর্তী নীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে।' (সূরা আল ফোরকান : ৬৭)। অর্থাৎ খাঁটি বান্দা হতে হলে যেসব গুণ থাকতে হয় তার অন্যতম হচ্ছে খরচের ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। অপচয় করা যাবে না আবার কৃপণতাও করা যাবে না বরং মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। শুধু খরচের ব্যাপারেই নয়, সব ব্যাপারেই মধ্যম পন্থা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। সুশাসন প্রতিষ্ঠার আরেকটি মাধ্যম হলো দৈহিক, মানসিক ও আত্মিক সবকিছুরই ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ সাধন করতে হবে, এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'তোমার ওপর তোমার রবের (আল্লাহর) হক আছে, তোমার ওপর তোমার নিজের হক আছে, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক আছে। কাজেই প্রত্যেক হকদারের হক আদায় করো।' (সহিহ বোখারি)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়