Sunday, November 16

ঘুরে আসুন তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা


উত্তম সরকার গাইবান্ধা থেকে: বাংলাদেশের শেষ সীমানা পঞ্চগড় জেলা আয়তনে ছোট হলেও ইতিহাস-সমৃদ্ধ আর প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভিত নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠার অনন্য স্থান। দেশের সর্ব উত্তরে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত প্রাচীন উপজেলা তেঁতুলিয়া এবং এই উপজেলার অধীনেই বাংলাদেশের শেষ সীমান্ত সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। পঞ্চগড় জেলা থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪২-৪৫ কিলোমিটার এবং তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট বা বাংলাবান্ধার দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধার জিরো পয়েন্টের দূরত্ব ৫০৩ কিলামিটার আর টেকনাফ থেকে ৯৯২ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া উপজেলা ব্রিটিশ আমল থেকে রাজনৈতিক সীমারেখার কারণে গুরুত্ব বহন করে আসছে। তেঁতুলিয়া থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমান্ত পাওয়া যায়। এখানে একটি নদী আছে। যার নাম মহানন্দা। এই নদী ভারত ও বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করেছে। তেঁতুলিয়া থেকে খুব কাছেই ভারতের দার্জিলিং শহর। নদীর ওপারে ভারতের দার্জিলিং জেলার অধীন শিলিগুড়ি মহকুমা ও ফুলবাড়ী থানা। তেঁতুলিয়ার প্রাচীন ডাকবাংলো থেকে সন্ধ্যাবেলায় দেখা যায় দার্জিলিং শহরের আলোকিত ভুবন, কাঞ্চনজঙ্ঘার পদতলে গড়ে উঠা আলোকিত পাহাড়ের শহর। এখান থেকে শীতকালে স্পষ্ট ফুটে উঠে রূপালি কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রকৃতিপিপাসু সমতলভূমির যেকোনো মানুষ উপভোগ করতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপালি প্রকৃতি। এখান থেকে খুব কাছে ভারতের আন্ডারগ্রাউন্ড সামরিক বিমান ঘাঁটি বাগডোগা। এখানে মহানন্দা নদীর তীরে টিলার ওপর আছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মনোরম একটি ডাকবাংলো, যা বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন এক কালের সাক্ষী। তাছাড়া পাশাপাশি অবস্থান করছে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, যেখান থেকে সহজেই অবলোকন করা যায় ভারতীয় সীমান্তের মানুষ ও বিএসএফের কর্মকা-। নদীর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কিছু মানুষ মাছের বদলে খুঁজছে পাথর। এই নদীটি রতœগর্ভা। প্রচুর পাথর উৎপন্ন হয় এখানে। শুধু নদীতে নয়, সমতল ভূমি খুঁড়লে পাওয়া যায় বিভিন্ন আকৃতির গুণগতমানসম্পন্ন পাথর, যা সারা দেশে পাথর চাহিদার এক বিরাট অংশ পূরণ করে। বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় কিছু শিল্প। যেমন চা, কমলা, মসলা, বিভিন্ন ধরনের খামার ও পাথরশিল্প। উপজেলা সদরে ঢোকার পূর্বে আপনার চোখে পড়বে সড়কের দুই ধারে পাথরের স্তূপ এবং সীমান্তবর্তী এলাকার মূল সড়কের দুই ধারে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কাজী অ্যান্ড কাজী টি কোম্পানি, তেঁতুলিয়া টি কোম্পানিসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র চাষিদের চা বাগান ও এলজিইডির কমলা বাগান, স্কয়ার গ্রুপের মসলা বাগান। ডানদিকে খুব কাছেই ভারতীয় পাহাড়ের অস্তিত্ব, যা সৌন্দর্যপিপাসু যেকোনো মানুষের দৃষ্টি কাড়বেই। বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে দেখা যাবে ভারতীয় কাঁটাতারের ওপারে পাকা রাস্তা, সার্চলাইট ও বিএসএফের অবজার্ভিং টাওয়ার। এই কাঁটাতারের ওপারে যা দেখা যাবে তার সবই ভারতের। ঘুরে আসুন তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা অপরদিকে বাংলাদেশের মানচিত্রের উপরের শেষ অংশটুকু বাংলাবান্ধা, যেটি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর হিসেবে ইতোমধ্যে এটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব বহন করছে। বাংলাদেশের এই জিরো পয়েন্ট আপনাকে খুব কাছ থেকে দুটি রাষ্ট্রের ভূখ-গত বিভক্তি স্পষ্ট করে এবং দুটি দেশের মানচিত্রগত ও রাজনৈতিক পার্থক্য দেখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। বাংলাদেশের ভূখ- যেখানে শেষ, সেখানে শুরু, তার মধ্যবর্তী মাত্র কয়েক গজ জায়গা নোম্যান্স ল্যান্ড। এটিই বৈধভাবে দুই দেশের মানুষের মধ্যে আদান-প্রদান বা যোগাযোগের করিডোর। কিন্তু এখনো ব্যাপকভাবে চালু না হওয়ায় স্থানটি দেখলে মনে হতাশা এসে যেতে পারে। এখান থেকে মাত্র কিছু গজ দূরে ভারতের ‘ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্প’ দেখা যায়। যে কারণে জায়গাটি রাজনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় বলা হচ্ছে। এর কারণ, এখান থেকে নেপালের কাঁকড়ভিটা সীমান্ত মাত্র ৩৫-৪০ কিলোমিটার। ভুটান ও সিকিমের সীমান্তও খুব দূরে নয়, চীনের বর্ডারও ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধায় খুব সহজে সড়ক পথে আসা যায়। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার কোচ (দিবারাত্রি) যাতায়াত করে। ঢাকা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, কেবি এন্টারপ্রাইজ, এবি এন্টারপ্রাইজ, বিআরটিসি কোচ সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি সহজেই তেঁতুলিয়া আসতে পারেন। যাত্রাপথে সময় ব্যয় হবে ৮ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা। খরচ পড়বে জনপ্রতি ২৬০-২৭০ টাকা। রাতযাপনের জন্য বেসরকারি কোনো ব্যবস্থা গড়ে না উঠলেও এখানে সরকারি দুটি রেস্ট হাউজ আছে। একটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সরকারি ডাকবাংলো ও অপরটি জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। ডাকবাংলোগুলোতে অবস্থান করতে হলে আপনাকে পঞ্চগড় জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিস ও জেলা পরিষদ অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করে বুকিং নিতে হবে। ভাড়া একদিন এক রাত জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা। তাছাড়া আপনি ইচ্ছা করলে যেকোনো প্রকার দেশি রান্না বাবুর্চির মাধ্যমে (খরচ দিয়ে) করিয়ে নিতে পারেন। -সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে বাংলাদেশের উত্তরের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। তাছাড়া সীমান্তগত রাজনৈতিক পার্থক্য নিজ ভূখ-ের খুব কাছ থেকে দেখতে চাইলে ঘুরে আসুন ছোট শহর তেঁতুলিয়া ও উপভোগ করুন বাংলাবান্ধা। দেশি পর্যটন শিল্পে এটি হতে পারে অপার সম্ভাবনা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়