Monday, November 10

লতিফ সিদ্দিকীর আসনে উপ-নির্বাচন নিয়ে কানাঘুষা


টাঙ্গাইল: সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে নানা সময় নানা কানাঘুষার সৃষ্টি হয়। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাকে নিয়ে কেউ কানাঘুষা করলে তাকে খামোশ করে দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন। ফলে কেউ সাহস পেতোনা তাকে নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করার। তাকে নিয়ে কানাঘুষা করলে কাউকে ফেলে দিতেন মানহানী মামলায়। আবার কেউ শিকার হতেন শারীরিক লাঞ্ছনার। এক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী তার কোনও এক কুকর্মের প্রতিবাদ করায় তাকে মন্ত্রীর লাঠি পেটায় আহত হতে হয়েছে। আবার একাধিক পত্রিকার সম্পাদককে আদলতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে মান হারানো মন্ত্রীর মান ফেরত দিতে। সরকারি-বেসরকারি যায়গা দখল করা থেকে শুরু করে তার নামে রয়েছে আরও হাজারো অভিযোগ রয়েছে। আয়ের উৎসের চেয়ে উপার্জিত সম্পদের পরিমান বেশি হওয়ায় তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে নিজ নির্বাচনী এলাকাতেও। ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানায় তার পিঁছু ছেড়েছেন অনেক ধর্মপ্রাণ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী। সাবেক এই মন্ত্রীর সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের পদ শূণ্য হওয়ার আগেই নির্বাচনী কানাঘুষা চলছে উপ-নির্বাচন নিয়ে। লতিফ সিদ্দিকীর কাছের নেতারাও তার দূরাবস্থার কথা না ভেবে মেতে উঠেছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। দলমত নির্বিশেষে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে কে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি এখনও। লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সবশেষে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়ার পর এই আসনে নির্বাচন হবে এমনটাই ভেবে উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চা দোকান থেকে ঘরের উঠোন পর্যন্ত এ নিয়ে শুরু হয়েছে দৌড়-ঝাঁপ। তবে প্রার্থী হচ্ছেন এমন কয়েকজনের মধ্যে নাম শোনা যাচ্ছে- কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক আবু নাসের, ঢাকা দক্ষিণের প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস ইব্রাহীম মিঞা, কালিহাতী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মোল্লা, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক টাঙ্গাইল শাখার সহ-সভাপতি কুদরত-ই-এলাহী, টাঙ্গাইল জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি সোলায়মান সরকার, কালিহাতী উপজেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল হক (মিঞা)সহ প্রায় ডজন খানেক নেতার। নিজ আঙ্গিকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাধারণ ভোটারদের কাছে টানার জন্য অনেকেই দোয়া চাইছেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকী শিগগিরই সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন কেন্দ্র থেকে এমন সবুজ সংকেত পেয়েই দলীয় মনোনয়ন পেতে আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন এসব নেতারা। যে যার আঙ্গিকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। অন্যদিকে, উপ-নির্বাচন হলে সিদ্দিকী পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মনোনয়ন চাইবেন না। আর চাইলেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন না এটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। এদিকে লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে সংসদ সদস্য পদে থাকলেও উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করেছে। মূলত ৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তারা। এদের মধ্যে রয়েছে কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোজহারুল ইসলাম ঠান্ডু গ্রুপ, জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক আবু নাসের গ্রুপ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারি গ্রুপ ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার মোল্লা গ্রুপ। তবে লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারীরা অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করছেন। আর কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আবু নাসের। অন্যদিকে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভোট নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই। কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোজহারুল ইসলাম ঠাণ্ডু বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি ২১ বছর। এবার জনগণের রায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। যারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা অনেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও না। যোগ্যতার মাপকাঠিতে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে অংশ নেবো। আবু নাসের বলেন, গত নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিতরণসহ অনুদান প্রদান করেছি। বন্যা ও ভাঙ্গনকবলিতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি মনোনয়ন পাওয়ার জোর দাবিদার। গত ২৩ অক্টোবর দৈনিক মজলুমের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা রসিকতা করে তাকে কালিহাতীর আগামী দিনের সাংসদ বলাতে এমপি পদে মনোনয়ন প্রার্থনার ব্যাপারে তার আকাঙ্খা প্রকাশ পায়। সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার মোল্লা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি দলের কাছ থেকে মনোনয়ন আশা করি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়