সফিকুল হাসান সোহেল:ঢাকা: বিশ্বের সবচেয়ে র্দুবেদ্য ও রহস্যময়ী বন আমাজনের মাঝেই গড়ে উঠেছে মানাউস। ব্রাজিলের ১২টি স্টেডিয়ামের ভেতর সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামের অবস্থান সেখানে। আর সেখানেই মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বের সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন ইটালী ও ইংল্যান্ড। এর ভেতর ইটালি আবার চারবার এবং ইংল্যান্ড একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিলের পর সর্বোচ্চ ৪বার চ্যাম্পিয়ন আজ্জুরিরা। ফুটবল ম্যাচের আবহে আবহাওয়া ও কন্ডিশনের বড় ব্যাপার হয়ে ওঠাকে ব্যতিক্রমই মানতে হবে। এই কন্ডিশনে মানিয়ে নিতেই এই দুই সেরা দল আজ প্রথমবারের মতো ল্যাটিন আমেরিকান দেশটিতে মুখোমুখি হচ্ছে।
ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জন্য ব্রাজিলের কন্ডিশন যে খুব স্বস্তিদায়ক হবে না, সেটি জানা ছিল সবার। এর মধ্যে সবচেয়ে অস্বস্তিদায়ক আবার মানউস। আমাজন অঞ্চলের মাঝে আমাজোনিয়া স্টেডিয়ামের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা শীতপ্রধান মহাদেশের দেশগুলোর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে নিশ্চিত। ড্রয়ের আগে সবারই তাই প্রার্থনা ছিল, ডি গ্রুপের খেলা অনুষ্ঠিত হবে যে মানাউসে, সেই গ্রুপে যেন না পড়ি। ইংল্যান্ড ক্যাম্প থেকে তো প্রকাশ্যেই বলা হয়েছিল তা। কী দুর্ভাগ্য, সেই ইংল্যান্ডই পড়ে গেল আমাজনের চক্করে। সবচেয়ে রহস্যময়ীর চক্করে। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত চারটায় ম্যাচ শুরু হলেই বোঝা যাবে কন্ডিশন মানিয়ে নেয়ার লড়াইয়ে জিতবে কোন দল।
ইতালি-উরুগুয়ে-ইংল্যান্ড সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের দেখা হয়ে যাচ্ছে প্রথম পর্বেই। এদের মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার অধিকার পাবে কেবল দুটি দল। এবারকার বিশ্বকাপে এটাকে ডেথ গ্রুপ বলা হচ্ছে। দুর্ভাগা ছাড়া নিজেদের আর কী ভাববে পরাশক্তি-ত্রয়। আর গ্রুপের চতুর্থ দল কোস্টা রিকা। ফুটবল-দেবতার অভিশাপ যে কেন তাদের উপর পড়ল, এই ভাবনাতেই শুরু করবে তারা বিশ্বকাপ। এমন গ্রুপে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। ইতালি-ইংল্যান্ডের সর্বশেষ দেখা যেমন দুই বছর আগের ইউরোতে। সেই ম্যাচটি টাইব্রেকার গড়ালেও ১২০ মিনিট জুড়ে আধিপত্য ছিল আজ্জুরিদের। বিশেষ করে আন্দ্রেয়া পিরলো যেভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের জাদুকরী পায়ে ধরে রেখেছিলেন, ইংলিশরা নিশ্চিতভাবেই তা ভোলেনি।
সেই পিরলো আছেন এখনো। আছেন জানলুইজি বুফ্ফন ও দানিয়েল দে রস্সি। আট বছর আগের বিশ্বকাপ জয়ের তিন সেনানী। ইতালির শক্তির বড় এক একটা অংশ এই অভিজ্ঞ তিন জন। তবে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে বুফফন কে তুলছেন না প্রথম ডু অর ডাই ম্যাচে কোচ। সঙ্গে মারিও বালোতেল্লির প্রতিভার দীপ্তিতে উজ্জ্বল বেপরোয়া তারুণ্য। গত বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে তারা বাদ পরলেও ইউরোর ফাইনালে উঠে আবার ইঙ্গিত দিয়েছে কক্ষপথে ফেরার। গত বছরের কনফেডারেশন্স কাপের সেমিফাইনালেও উঠেছিল তারা।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের নিয়তি আটকা পড়ে আছে সেই দ্বিতীয় রাউন্ড আর কোয়ার্টার-ফাইনালেই। বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো-সব টুর্নামেন্টে ফেভারিট হিসেবে শুরু করে দ্রুত বিদায় নেওয়াটা তাদের সাম্প্রতিককালের ইতিহাস। সে কারণেই কিনা, এবার আর ফেভারিটের তকমা জুড়ে নেই তাদের সাথে।
ইতালির মতো অভিজ্ঞতায় আস্থা না রেখে তারুণ্যের জয়গানই রয় হজসনের স্কোয়াডে। গত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ১-৪ গোলে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেওয়া একাদশের তিনজনই কেবল হয়তো আজ থাকবেন প্রথম একাদশে। ওয়েইন রুনি, স্টিভেন জেরার্ড ও গ্লেন জনসন। অ্যাডাম লালানা, রাহিম স্টার্লিং, ড্যানিয়েল স্টারিজ, জর্ডান হেন্ডারসনদের মতো তরুণ খেলোয়াড়রা আজ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি অগ্নিপরীক্ষায়। ব্রাাজিলের পর সবচেয়ে বেশি চার বার বিশ্বকাপ জেতা ইতালি যে তাদের প্রতিপক্ষ।
তারপরও আশার কিন্তু কমতি নেই ইংল্যান্ড ক্যাম্পে। রুনির কণ্ঠে যেমন দিন কয়েক আগে শোনা গেছে আত্মবিশ্বাসী সুর, আমি যতগুলো ইংল্যান্ড স্কোয়াডে খেলেছি, তার মধ্যে এটি সম্ভবত সেরা। ইতালি দলের আত্মবিশ্বাসের পারদ আরো উঁচুতে। পিরলোর কথার তারই প্রতিফলন, বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য আমাদের আছে। গ্রুপ পর্ব কিংবা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ হয়ে যাওয়াটা আমি মেনে নেব না। সব ধাপ পেরিয়ে শিরোপা জেতার শক্তি আছে ইতালির।
সব ধাপ বলতে তো ফাইনাল পর্যন্ত সিঁড়ির সাতটি ধাপ। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো সহজ গ্রুপে পড়া দলগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি ধাপ কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। ইতালির জন্য তা নয়। বরং প্রথম ধাপ থেকেই তাদের খেলতে হবে নকআউট রাউন্ডের মতো। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি সুবিধা আছে তাদের-বিশ্বকাপে কখনোই এই দলটির কাছে হারেনি আজ্জুরি। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে স্লো স্টার্টার হিসেবে একটা তকমা তাদের গায়ে লেগে আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে সেটিও ঝেড়ে ফেলার চ্যালেঞ্জ ইতালির। এখন খেলার মাঠে তার প্রমাণ দিতে হবে আজ্জুরিদের। আর দুই দলের জন্যই অভিন্ন চ্যালেঞ্জ? মানাউসের বিরুদ্ধ আবহাওয়ায় স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারা। সুতরাং দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কারা এগিয়ে যাবে আজকের ম্যাচ সেটাই দেখার বিষয়।
-
খবর বিভাগঃ
খেলাধুলা
ফটো গ্যালারী
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়