সৈয়দ হাসান
ঢাকা: আপনার লেখার টেবিল কিংবা জানালার কাচের পাশে টবে
ছোট্ট সুন্দর যে গাছ- সেটি হতে পারে আপনার চেয়ে বুদ্ধিমান। অবাক হচ্ছেন?
একটা সম্ভাব্যতার কথা বলা হচ্ছে মাত্র- ক্ষেত্রবিশেষে এটা সত্যি হতেও পারে।
জার্মানির উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি এমনই কিছু আবিষ্কার আমাদের
সামনে তুলে এনছেন- যেখানে অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে গাছেদের পর্যাপ্ত
বুদ্ধিমত্তার সন্ধান পাওয়া গেছে। বুদ্ধিমত্তার এ জরিপে এগিয়ে আছে বারবেরি
নামের বিশেষ একধরনের কাঁটাযুক্ত জাম গাছ। এ গাছগুলো পরিবেশে ফল আক্রমণকারী
কীটের সংখ্যা বেশি হলে কোন কোন ঋতুতে ফল ছাড়তে পরিকল্পনামাফিক বিলম্ব ঘটায়
অথবা মানুষের মতই ঘটনাকে প্রবাবিলিটির সূত্রে ফেলে বিশেষ প্রতিরক্ষা কৌশল
অবলম্বন করে। সবসময় নয়- বরং বিশেষ বিশেষ সময়ে নেয়া এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
গাছটির স্মৃতি সংরক্ষণের প্রমাণ বহন করছে। স্মৃতি থেকে তথ্য নিয়ে নাড়াচাড়া
করে গাছের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিস্ময়ের জন্ম দেয় বৈকি।
জার্মানির গুটেনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল সম্প্রতি উদ্ভিদের এ ধরনের
বুদ্ধিমত্তার ওপর কাজ করছে। বারবেরির ব্যাপারে এ ফলাফল বেরিয়ে এসেছে মূলত
একই পরিবার ভুক্ত অপর আরেকটি গাছ- ওরিগন আঙুর গাছের ওপর চালানো গবেষণা
থেকে। দেখা যাচ্ছিল ওরিগণের আঙুর রাগোলেটিস মেইজেনি (বৈজ্ঞানিক নাম) নামের
একপ্রকার ফলের মাছির খুবই প্রিয় খাদ্য এবং সেই মাছির ব্যাপারে ওরিগণের
একরকম বিকার নেই বললেই চলে। অথচ কাছাকাছি বারবেরির ফলে সংক্রমণের হার খুবই
কম। গবেষকরা তখন সারা জার্মানি চষে বারবেরির বিভিন্ন প্রজাতির ২০০০ জাম
সংগ্রহ করে এবং প্রাপ্ত ফলাফলকে বিশ্লেষণ করতে থাকে। আর তখন বারবেরির
বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আর কোন সন্দেহ থাকে না। মনে হয় যেন- এ গাছগুলো
রীতিমতো পূর্বের কীট সংক্রমণের স্মৃতি থেকে সম্ভাব্যতার (প্রোবাবিলিটি)
গাণিতিক সূত্র প্রয়োগ করে নিখুঁত হিসেব কষে- তবেই ফল ছাড়ে।
রাগোলেটিস মেইজেনি- এ মাছিটির কাজ হচ্ছে খাওয়া দাওয়ার পর ফলের ভেতর ডিম
পেড়ে যাওয়া- যেখান থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আবারও ফল ও বীজ খেতে শুরু করে- আর
ক্রমেই পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠে বারবেরি ফুটো করে বেরিয়ে আসে। মাছি তো তার
সন্তানের ব্যবস্থা করে নিলো। জাম গাছটি কি তার সামনে এতোটাই অসহায়? ততোটা
নয় যতটা মানুষ ভাবে। বারবেরি গাছের ছবি লক্ষ্য করলে দেখা যায় এটি এর একটি
উপশাখায় দুটি ফল বেরোতে দিয়েছে। এর ফলে একটি সংক্রমিত হলেও অপরটির বেঁচে
যাওয়ার একটা ফিফটি-ফিফটি সম্ভাবনা থাকে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে- জীবদ্দশায় ফল
দেয়ার মোট সময়ের চার ভাগের তিনভাগ সময়ে বারবেরি এ প্রতিক্ষার আশ্রয় নেয়।
একইসঙ্গে দেখা যায়- একটা ফলে যদি একটাই বীজ থাকে- আর সেই বীজ যদি সংক্রমিত
হতে থাকে- তাহলে সেই দফা মাত্র ৫ শতাংশ ফলে বারবেরি একটি বীজকে পরিপক্ব হতে
দেয়। গণিতের একটি বিশেষ শাখা- সম্ভাব্যতা-র ওপর গাছের এমন দখল বিস্মিত
করেছে বিজ্ঞানীদের।
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়