ঢাকা: আজ ২২ মার্চ শনিবার বিশ্ব পানি দিবস। ১৯৯৩ সালে
জাতিসংঘ এ দিনটিকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। পানি ও শক্তি
প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এবারের বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে।
এই প্রতিপাদ্যনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কাজ করছে এবং এই কাজ করতে অন্যদেরও প্রভাবিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পানি ও শক্তির প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে কতটুকু সফল হবে এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যেভাবে নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে!
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে নদ-নদীতে পানির চেয়ে বর্জ্যই বেশী। আবার নদীর পানি শুকিয়ে যাবার ফলে কৃষিখাতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। সবমিলে ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। ফলে বাড়ছে নানাধরনের রোগ।
এই প্রতিপাদ্যনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কাজ করছে এবং এই কাজ করতে অন্যদেরও প্রভাবিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পানি ও শক্তির প্রতিপাদ্য বাস্তবায়নে কতটুকু সফল হবে এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যেভাবে নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে!
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে নদ-নদীতে পানির চেয়ে বর্জ্যই বেশী। আবার নদীর পানি শুকিয়ে যাবার ফলে কৃষিখাতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। সবমিলে ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। ফলে বাড়ছে নানাধরনের রোগ।
এদিকে তিস্তা নদীর পানি যে পরিমাণ কমেছে তাতে প্রবাহ শূন্যতে নেমে এসেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে আসন্ন বোরো উৎপাদন কমবে তিনশ কোটি টাকার। এছাড়া রাজধানীর চারদিকে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও বুড়িগঙ্গা নদীতে পানির চেয়ে বর্জ্যই বেশি। এক শ্রেণীর অসচেতন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কারণে গৃহস্থালি বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, নগরবাসীর পয়ঃবর্জ্য, ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য, নৌ-যানের তেল, ময়লাসহ নানা ধরনের বর্জ্যে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীগুলো।
মাত্রাতিরিক্ত দূষণে দিনদিন নদীগুলো তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। পাশাপাশি বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বর্জ্যের সংমিশ্রণে নদীগুলোর পানি কালো, নীল বা লাল রঙ ধারণ করছে। দূষিত ওই নদীর পানি ব্যবহারে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এ চার নদীকে সরকার আগেই ‘প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন’ ঘোষণা করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরীক্ষিত বর্জ্য ১৩টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালুর পানির মান খুবই খারাপ। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাবে, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ এই চার নদীতে আছে প্রায় চারশ’র মতো বর্জ্যমুখ।
বিশ্বব্যাংক বুড়িগঙ্গাকে ‘মরা নদী’ নামে অভিহিত করেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের জন্য ৬০ শতাংশ শিল্পপতিরাই দায়ী। এসব নদী ঘিরে গড়ে উঠেছে হাজারও কারখানা। আর এসবের অধিকাংশে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) না থাকায় কারখানার উৎপন্ন বর্জ্য প্রকাশ্যে বা মাটির নিচ দিয়ে সরাসরি পড়ছে নদীতে।
অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশন পয়ঃসহ নানা রকম বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে। সেদিক থেকে সরকারি সংস্থাগুলো নদী দূষণের জন্য ৩০ শতাংশ দায়ী। বাকি ১০ শতাংশ দূষণ হচ্ছে মানুষের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বিশ্ব পানি দিবসের কোনো তাৎপর্য নেই বললেই চলে।
নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন শিল্প বর্জ্যের কারণে দূষিত নদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শীতলক্ষ্যা। এই নদীতে প্রতিদিন ইউরিয়া সার কারখানার বর্জ্য (এমোনিয়া) এবং বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানার কেমিক্যাল এসে পড়ছে।
বুড়িগঙ্গার মতোই বেহাল দশা তুরাগ নদীর। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি মৌসুমে নদীর পানি থাকে একেবারে কালো। শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্যের সঙ্গে রাজধানীর গৃহস্থালী বর্জ্যের একটি বড় অংশ সরাসরি গিয়ে পড়ে নদীতে। পাশাপাশি আছে পয়ঃবর্জ্য। আর টঙ্গী শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা টেক্সটাইল, লিড ব্যাটারি, পেপার পাল্প, লোহা, রঙ ও রাবার ইত্যাদি শিল্প কলকারখানার বর্জ্য বালু নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে দূষণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। টঙ্গী, বাড্ডা প্রভৃতি অঞ্চলের বর্জ্য চলে যাচ্ছে বালু ও তুরাগ নদীতে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, সমগ্র ঢাকা শহরের ৪০ শতাংশ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় রয়েছে। যদি সমগ্র ঢাকা পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আসে তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। আর ইতিমধ্যে পয়ঃনিষ্কাশনের একটা মাস্টারপ্ল্যান ঢাকা ওয়াসা হাতে নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা.রশীদ-ই-মাহবুব জানান, নদীর দূষিত পানি প্রতিদিনের কাজকর্ম, চাষাবাদ সব জায়গায়ই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কারণে নগরবাসী আক্রান্ত হচ্ছে জন্ডিস, ডায়রিয়া, মূত্রনালি, কিডনি ও চর্মরোগসহ ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ ও অনিরাময়যোগ্য রোগে। এর লক্ষণ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি ও সামাজিকতাসহ সার্বিক বিবেচনায় নদী দূষণ রোধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এর ভয়াবহ পরিণতি অবধারিত বলে মনে করেন তারা।
জানা গেছে, সরাসরি নদী রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে প্রায় ১৫টি মন্ত্রণালয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজের আওতায় রয়েছে নদীর পানি দূষণ রোধ করা। বিআইডাব্লিউটি এর দায়িত্ব তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। নদীর পানির কর্তৃপক্ষ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তলদেশের কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পাড়ের মালিক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেখানে যেকোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলেই দ্বারস্থ হতে হয় পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের। আর দখলমুক্ত রাখতে প্রয়োজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা। মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীনতার জন্য নদী দখল এবং দূষণ কোনটাই রোধ করা যাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অতি সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্তানুসারে শিল্প ইউনিটে দূষণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য এনফোর্সমেন্ট চালানো হচ্ছে। এর আওতায় গত ৪ বছরে ৫২৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে। ইটিপি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড.মো.শামসুদ্দোহা খন্দকার বলেন, ‘নদী দূষণ রোধে বিআইডব্লিউটি এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর প্রায় চারশ বর্জ্যমুখ চিহ্নিত করেছি। শীতলক্ষ্যার ৩৭টি ও বুড়িগঙ্গার ১৭টি বর্জ্যমুখ সিল করে দিয়েছি। এরপরে যদি কেউ সেই বর্জ্যমুখ ভাঙার চেষ্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে।’
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (দক্ষিণ) প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদী দূষণে আমাদের কোনো দায় নেই। এটা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাজ। নদী দূষণসহ পরিবেশ সুরক্ষায় ওই প্রতিষ্ঠানকেই বিশ্বব্যাংক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে। বুড়িগঙ্গার চারপাশের বেশ কিছু রাস্তা দিয়ে আবর্জনা নদীতে গিয়ে পড়ছে। সেই আবর্জনা সংরক্ষণ করে নদী দূষণ রোধে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান প্রজেক্ট আকারে মন্ত্রণালয়ে জমা দেব।’
এদিকে প্রমত্তা তিস্তা নদী আজ প্রবাহ শূন্য। এবারে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম জমিতে বোরো আবাদ করে ক্ষেতে রেশনিং পদ্ধতিতেও পানি দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বোরো মৌসুমে উৎপাদন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় তিনশ কোটি টাকা। যা কৃষিনির্ভর জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
বাংলামেইল২৪ডটকম এর নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, চলতি বোরো মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় ডালিয়া ডিভিশন ৯ হাজার পাঁচশ হেক্টর, নীলফামারী ডিভিশন ১৬ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুর ডিভিশন ১৮ হাজার হেক্টর ও রংপুর ডিভিশন ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ব্যারেজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখেও তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালে এক ফোটাও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় চার ডিভিশনে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা বোরো চারা রোপণ করেছে। কিন্তু এসব ক্ষেতেও পানি দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিকটন ধান। অর্ধেকের কম জমিতে বোরো চারা রোপণ করায় ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন আশা করা হলেও পানি অভাবে তার ফলনও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবার রহমান জানান, যে পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে তাতেও পানি দেয়া যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন শত শত কৃষক এসে অফিস ঘেরাও করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছেন। কৃষকরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গেছেন সে ভয়ে প্রকল্প এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে না। যেকোনো সময় তারা মারপিট করতে পারে।
পাশাপাশি এবারে বোরো মৌসুমে উৎপাদন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিকটন ধান। যার বাজার মূল্য প্রায় তিনশ কোটি টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিকুল বারী শামিম জানান, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি ছাড়া তিস্তা সেচ প্রকল্পকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব। তিস্তায় পানি প্রবাহ পাওয়া না গেলে এই এলাকা মরু এলাকায় পরিণত হবে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। ভূ-গর্ভের পানিতে মানব শরীরের জন্য আর্সেনিকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বেড়ে যাবে। যা নলকূপ ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-উপরিভাগে এসে মানব স্বাস্থ্যসহ পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে।
বাংলামেইল২৪ডটকম
খবর বিভাগঃ
পরিবেশ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়