Friday, March 28

ছাত্র সমাজের লোক দেখানো কাউন্সিল

ঢাকা: জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব নির্ধারণে লোক দেখানো জাতীয় কাউন্সিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, কমিটিতে কারা থাকছেন তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। এভাবে আগে থেকেই কমিটি ঠিক করে রেখে কাউন্সিল আয়োজন করায় ছাত্র নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবারও অছাত্ররা স্থান পাচ্ছেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর এ কমিটি ঘিরে মোটা অংকের একটা বাণিজ্যও হতে যাচ্ছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তাহলে কেন করা হল ছাত্র সমাজের কাউন্সিল? এমন প্রশ্নই অনেক ছাত্র নেতার।

দীর্ঘ ১০ বছর পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় ছাত্র সমাজের কাউন্সিল। তারপর তিন মাসের কমিটি, কখনও বা ছয় মাসের আহবায়ক কমিটি দিয়েই চলেছে ছাত্র সমাজের কার্যক্রম। ফলে এই দশ বছরে সংগঠনটি যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা তা হয়ে ওঠেনি।

এবারের কাউন্সিলে জেলা কমিটির নেতাদের বক্তব্যে ছিল নানা অভিযোগ। ছিল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ।

রাজশাহী থেকে আসা ছাত্র সমাজের আহবায়ক শাহীনুর রহমান বলেন, ‘জাপার নেতারা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেন। তাদের কাছে আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাই না।’

অপরদিকে জাতীয় সমাজের সদস্য সচিবের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন জেলার নেতাদের দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিভেদ, অসহযোগিতার কারণে কমিটি না হওয়া, কাউন্সিল করতে গিয়ে নেতাদের সহযোগিতা না পাওয়া ও জাপার নেতাদের সমন্বয় হীনতার বিষয়গুলো।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ছাত্র সমাজ সারা দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২২টি আহবায়ক কমিটি দিয়েই চলছে। কমিটি গঠনের কাজ চলছে ৯টিতে।

জাতীয় ছাত্র সমাজের কমিটি য়ে আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়েছে তা মূলত ফুটে ওঠে সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পার্টির চেয়ারম্যানের স্ত্রী রওশন এরশাদের মুখেই।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘ভোটাভোটির মাধ্যমে কমিটি গঠিত হলে বিভেদ দেখা দেয়, অনেকে অসন্তষ্ট হয়। তাই ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন না করে সিলেকশনের মাধ্যমে করাটাই ভালো।’

রওশনের এমন কথায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বলাবলি করতে থাকেন, তাহলে কাউন্সিলে এসে আমাদের কী লাভ হলো? সবই তো মনে হচ্ছে আগে থেকে ঠিকঠাক করা হয়েছে।

এ সময় অছাত্রদের প্রতি ইঙ্গিত করে রওশন বলেন, ‘এখানে অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। তারপরও ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত আছো। তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো- তোমরা ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে জাতীয় পার্টির মূল দলে প্রবেশ করো। তাহলে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং জাতির জন্য কিছু করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও যারা ছাত্র রাজনীতি করো, তোমারা কীভাবে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে?’

সূত্র জানায়, এ কমিটিতে স্থান করে নেয়ার জন্য এবারও অছাত্ররা নানাভাবে লবিং করছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে। অনেকে জাপার নেতাদের বাড়িতে উপঢৌকন পাঠানো শুরু করে সম্মেলন শেষ হওয়ার পর থেকেই।

জেলার ছাত্র নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদের জন্য বিভিন্ন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। অনেকে আবার তাদের কমিটির সদস্য পদ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকায়ও অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

এরশাদের গঠন করে দেয়া সাবজেক্ট কমিটিতে স্থান পাওয়া সেইসব নেতাদের সাথে সর্বদা ফোনে যোগাযোগও রাখছেন। ফলে এবারের কমিটির নেতৃত্ব অছাত্রদের হাতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা অনেকের।

এবার জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মোট ৯ জনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যাকে বলা হচ্ছে সাবজেক্ট কমিটি।

এই সাবজেক্ট কমিটি বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর কমিটির নেতাদের সাথে কথা বলবে এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত করবে কে কে জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন।

এবার এই কমিটি গঠন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মোট ৯ জন ছাত্র নেতাকে। তবে এদের মধ্যে তিন জনই হলো সভাপতি পদ প্রার্থী। বাকি ছয় জনের একজন রয়েছেন জাপার মূল কমিটিতে। পাঁচজন ছাত্র নেতা হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত।

সাবজেক্ট কমিটির নেতারা হলেন- জাতীয় ছাত্র সমাজের সমন্বয়ক শাহ ই আজম, আহবায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান হিমু, সদস্য সচিব সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান, জাপার সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান মিরু, জাপার ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল হামিদ ভাসানী, ছাত্র সমাজের যুগ্ম সম্পাদক নোমান মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি জামাল উদ্দিন, আহবায়ক ফয়সাল আহমেদ দিদার।

এই নয়জন নেতাই নির্ধারণ করবেন কে হবেন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় নেতা। কারা কারা নেতৃত্ব দেবেন ছাত্র সমাজকে।

এবার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হচ্ছে জাতীয় ছাত্র সমাজে। আর এই কমিটিতে ছা্ত্ররা স্থান পাবেন এমন আশা অনেকের। কিন্তু তারপরও যে কি হবে তা কেউই বলতে পারছেন না। কেননা যারা এই কমিটির সদস্য হবেন তাদেরই দায়িত্ব দিলেয়েছেন এরশাদ।

জাপার ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক নোমান মিয়া বলেন, আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দেখি কাকে কাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা যায়। তবে ছাত্রদেরই কমিটিতে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।

জাতীয় ছাত্র সমাজের আহবায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান হিমু বলেন, দলে কেউ যদি অছাত্র থাকে তবে তা আসলে বিবেচনায় এনে রাখা হয়। যদি দলের সিনিয়র নেতা ও কর্মীরা মনে করেন যে তাকে দিয়ে দল বেগবান হবে তাহলে তা করা হয়ে থাকে। তবে এবার আশা করা যাচ্ছে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে কোনো অছাত্র থাকবে না।

বাংলামেইল২৪ডটকম/

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়