Monday, March 10

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বস্তিতে থাকে

ঢাকা: ‘আগে বুঝতে পারলে জীবন বাজি রেখে এই বাংলা স্বাধীন করতাম না। রক্ত দিয়ে যে বাংলা স্বাধীন করেছি সেই বাংলার দেখা পাইনি আজো’ কথা গুলো বলছিলেন বর্ষীয়ান মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাঝি(৭৫)। নিজের তরুন বয়সে যে যুদ্ধ তিনি শুরু করেছিলেন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে, আজ জীবনের অন্তিম সময়ে এসেও তাকে লড়াই করতে হচ্ছে নিত্য অভাব আর অনটনের সঙ্গে। 
 
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর নদী ভাঙ্গার কারণে জীবনের শেষ সম্বল হারায় সুলতান মাঝি। সঙ্গে তার অন্ত:সত্বা স্ত্রী। তাকেই নিয়েই ভাগ্যের সন্ধানে শহর ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। ঢাকার মিরপুরের একটি পরিত্যক্ত দোকান নিয়ে শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই আর সংসার জীবন। তবে বেশিদিন এই কাজ করতে হয়নি তাকে। টোলারবাগে চলে আসার পর আনসারের চাকরি পেয়ে যান তিনি। যদিও মাত্র ৬ বছরের মাথায় তার চাকরিও চলে যায়। 
 
এরপর রাজধানীর কল্যানপুর বস্তিতে এসে শুরু হয় তার জীবনের তৃতীয় যুদ্ধ। দুই ছেলে আর এক মেয়ের সংসারে ছেলে মেয়েদের বিয়ে করিয়ে বৃদ্ধ বয়সে কোনরকমে দিন গুজরান করছেন তিনি। ছেলে এবং মেয়ে কেউ দেখতে আসে বৃদ্ধ মা,বাবাকে।
 
তিনি যে দোকানে থাকেন সেখানেই পরিবার নিয়ে রাত কাটাতে হয় তাকে। প্যরালাইসড হয়ে পরে আছেন দোকানের একপাশের চৌকিতে। তার দোকান বলতে সবই আছে কিন্তু নেই কোনো মালামাল। দোকানের অবস্থা এমন কেন জানতে চাইলে সুলতান মাঝি বলেন, আমার চিকিৎসা করার খরচ যোগাতে দোকান খালি হয়ে গেছে।  সরকারের ভাতার দুই হাজার টাকাই এখন ভরসা। 
 
সুলতান মাঝি ক্ষোভ প্রকাশ করে চোখ মুছতে মুছতে বলেন , ‘সরকারের কাছে আমার একটি কথা বলার আছে, সরকার কথায় কথায় বলে আমরা নাকি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমি বস্তিতে থাকি আমার খারাপ লাগে না কিন্তু এই কথাটা শুনলে আমার লজ্জা লাগে । সবাই যখন বলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বস্তিতে থাকে।’
 
কথার মাঝে ক্রন্দনরত সুলতান বলেন, আমি ভিক্ষাও করতে পারি না। সবাই জানে আমি মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু ভিক্ষা ছাড়া আমার আর উপায় নাই। আমার বয়স তখন ৩৩, আমি নতুন বিয়ে করেছি তখনই গন্ডোগোল শুরু। একদিকে নতুন জীবনের হাতছানি অন্যদিকে দেশের ডাক। দেশের ডাকে সারা দিয়ে নতুন বউ রেখে যোগ দিলাম যুদ্ধে। ৯ নং সেক্টরে আব্দুল জলিলে নেতৃত্বে ভোলার বাংলাবাজার, গুন্ডার হাট, দোওলত খাঁসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ করেছিলাম আমি। 
 
একদিন সকাল ৯ টার দিকে আমাদের কাছে খবর আসে আমাদের অবস্থান লক্ষ করে পাকিস্তানি বাহিনী আর কিছু রাজাকার আসছে। আমরা জানতে পারি পাকিস্তানি সেনার একটি কমান্ডো বাহিনী আসছে। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হতে শুরু করি। আমাদের কমান্ডার আব্দুল জলিল ১৭ জনের বাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করে অবস্থান নিতে বলেন। পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমন এমন ভাবে শুরু করে আমারা কল্পনাও করতে পারিনি। কিন্তু কৈাশলগত কারণে আমরা তাদেরকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলি। ফলে তারা এক পাশ দিয়ে পালাতে শুরু করে। এই যুদ্ধে আমাদের তিন জন প্রাণ হারান এবং ৪ থেকে ৫ জন গুলিতে আহত হন। আর পাকিস্তানি বাহিনীর ২১ জন সেনা নিহত হয়।
   
বাংলামেইল২৪ডটকম/

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়