ঢাকা
: সমাজতন্ত্র বা শ্রেণীহীন সমাজে বিশ্বাসী তারা। রাজনীতিতে এই বিশ্বাসকে
সামনে রেখে দল পরিচালনা করেন। দলের জন্য নিজেদের ব্যক্তিজীবনও বিসর্জন
দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ঘর-সংসারের পরিবর্তে তারা গড়েছেন ‘পার্টি হাউজ’। কাটান
ব্যাচেলর জীবন । প্রাত্যহিক সব কাজকর্ম করেন নিজ হাতে। তাদের কারও বয়স ৫০,
কারও বা আরও বেশি। বিয়ে করেননি কেউ। সংসার গড়ার চিন্তাও নেই। নেই ব্যক্তিগত
কোন সম্পদও। যাদের নির্ভরশীল আছেন তারা চলেন নিজেদের আয়ে। এই ব্যাচেলর
সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
১৯৮০ সালের ৭ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত দলটি সূচনা থেকে সমাজতন্ত্রের প্রকৃত
নীতি মেনে পরিচালিত হচ্ছে। আর এ নীতির অংশ হিসেবেই ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে
আলাদা থাকছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। বর্তমানে চার সদস্যের কমিটির মাধ্যমে
বাসদ পরিচালিত হচ্ছে। এ চার নেতাই থাকেন দলীয় কার্যালয় ও পার্টি হাউজে।
বিয়ে, সংসারহীন নেতাদের এই দলকে অনেকে চিরকুমার পার্টি হিসেবেও সম্বোধন
করেন। তবে অনেকের জানা নেই তাদের চিরকুমার থাকার পেছনের কারণ। যদিও
ঘর-সংসার করার ক্ষেত্রে দলীয় কোন বাধা নেই। নেতাদের দাবি সংসার জীবন চালাতে
হলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকা প্রয়োজন। যেহেতু ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখার
সুযোগ নেই তাই ঝামেলা এড়াতেই সংসার জীবনের কথা চিন্তা করেন না কেউ। এটি
নেতাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
রাজধানীর ২৩/২ তোপখানা সড়কে ভাড়া বাসায় বাসদের কার্যালয়। তার পাশেই দলের টাকায় কেনা তিন কক্ষের একটি ফ্ল্যাট। এখানে থাকেন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দলের এই আবাসন ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘পার্টি হাউজ’। সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়া এই ফ্ল্যাটে কেউ থাকেন না। তবে প্রয়োজনে দলের লোকজন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করতে যান সেখানে। বাসায় নেই কোন গৃহপরিচারিকা। বিশেষ প্রয়োজনে নেতৃবৃন্দকে সহযোগিতা করেন দলের কর্মীরা। রান্নাবান্নার জন্য কেনাকাটা করেন দলের লোকজনই। নিজ হাতেই রান্নাবান্না করেন নেতারা। মাংস, ভর্তা ও শুঁটকিসহ সব পদের রান্নার কৌশলই রপ্ত করেছেন তারা। ভাল কিছু রান্না হলে তা দলের অন্য নেতবৃন্দকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। তাদের মতে, সংগ্রামী জীবনে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে রয়েছে তাদের দৃঢ় বন্ধন। তা ভ্রাতৃত্বের ও বন্ধুত্বের। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান থাকেন দলের অফিসে। তার আবাসনের জন্য অফিসে রয়েছে আলাদা কক্ষ। ওই কক্ষের সঙ্গে আছে রান্নার কক্ষ। আছে বুকসেলফ। এতে আছে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বই। একটি খাট। একটি টেবিল, কয়েকটি চেয়ার। আসবাবপত্র। ঢাকায় থাকলে তিনি এখানেই থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন দলের কাজে। দলের অফিসে নেতাকর্মীরাই বারবার চা তৈরি করে দেন তাকে। অনেক সময় নিজেই রান্নার কাজ করেন খালেকুজ্জামান। তবে তার অন্য ব্যস্ততা থাকলে সহযোগিতা করেন দলের লোকজন। বাসদের নেতাকর্মীরা জানান, নিজের কাজ নিজে করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। ঢাকার বাইরে গেলে থাকেন দলীয় অফিস বা দলের নেতাদের বাসায়। বাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খালেকুজ্জামান। দলের জন্মলগ্ন থেকেই আছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। তার আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে কনভেনশনের মাধ্যমে গঠিত বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। বাসদের নিয়মানুসারে নিজের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি লিখে দেন দলের নামে। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামের ভূঁইয়া পরিবারের সন্তান খালেকুজ্জামান। তার পিতা নুরুজ্জামান ভূঁইয়া ছিলেন পেশায় শিক্ষক। পিতা বেঁচে নেই। মা আছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ খালেকুজ্জামান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে জড়িত হন রাজনীতিতে। ডিগ্রি সম্পন্ন করা হয়নি। ওই সময়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হলেও এখন নিজের কোন সম্পদ নেই। এমনকি বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে অংশগ্রহণ করে উপার্জিত আয়ও দলের ফান্ডে জমা দেন তিনি। অন্যদিকে তার নিজের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সকল ব্যয় নির্বাহ করে দল।
মা-বাবার একমাত্র সন্তান বজলুর রশীদ ফিরোজ। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। যৌবন পেরিয়েছেন। নিজের সংসারের প্রয়োজন অনুভব করেন না ফিরোজ। পুরো দেশটাই তার সংসার। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোই তার আপন স্বজন। তার জন্ম ঢাকার ধামরাই এলাকায়। পিতা মন্তাজ উদ্দিন বেঁচে নেই। মা আছেন। সকল সম্পদ দলের নামে লিখে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পর। তার এবং তার মায়ের যাবতীয় খরচ চলে এখন দলের অর্থে। বজলুর রশীদ ফিরোজ থাকেন ‘পার্টি হাউজে’। মা-ও থাকেন সেখানে। কখনও কখনও দলের নেতাকর্মীদের বাসায়ও থাকেন বজলুর রশীদ ফিরোজের মা। তার মায়ের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দেন দলের লোকজন। এ বিষয়ে বাসদের দপ্তরের দায়িত্ব পালনকারী মাইন উদ্দিন বলেন, ‘ফিরোজ ভাইয়ের মা এখানে (পার্টি হাউজে) থাকলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটার কথা আমাকেই বলেন। আমি তা করে দেই।’ এটি শুধু দল নয় একটি পরিবার- বলে দাবি করেন তিনি। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাসদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ফিরোজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও ডাকসুর সদস্য ছিলেন তিনি। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন ২০০৯ সালে। কর্মব্যস্ততার কারণেই বিয়ে করেন নি বলে জানান বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই বিয়ে করেননি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীও বিয়ে করেননি। এছাড়া, অনেক কারণেই বিয়ে করা হয় না। অনেক গরিব মানুষও বিয়ে করেন না।
জাহেদুল হক মিলু। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। জাসদ ছেড়ে বাসদের প্রতিষ্ঠাতা থেকে আজ পর্যন্ত এই দলের সঙ্গে আছেন তিনি। বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলা সদরে। তিনি আইনজীবী হলেও দলের প্রয়োজন ছাড়া আদালতে যাননি কখনও। দলের প্রয়োজনে দিয়ে যাচ্ছেন শ্রম, সময়। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পরই নিজের সম্পদ দিয়েছেন দলকে। সংগ্রামী জীবনে বউ-সংসার থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি। ‘পার্টি হাউজ’-ই তার নিবাস। বিয়ে সংসার সম্পর্কে বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহেদুল হক মিলু বলেন, রাজনৈতিক অসঙ্গতি যাতে সৃষ্টি না হয় এজন্যই সংসার করা হয়নি। এছাড়া সে রকম কেউ হয়তো আমাদের সামনে আসে নি। তবে ভবিষ্যতে নেতৃবৃন্দ সংসার করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের স্ত্রীরাও দলের জন্য কাজ করবেন।’ সম্পত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পদ থাকার নিয়ম নেই।’
একই ভাবে দিনাতিপাত করেন বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন। বাবা-মা আছেন। আছেন তিন ভাই ও চার বোন। তারা সবাই সংসার জীবন কাটাচ্ছেন। তবে ব্যতিক্রম রতন এখনও ব্যাচেলর। দলকে নিয়ে এবং দেশের মানুষকে নিয়েই তার সকল স্বপ্ন। জন্ম রংপুর সদরে। লেখাপড়া করেছেন রংপুরে। পরে ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এ নেতা বলেন, সামাজিক শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা রাজনীতি করি। আমরা মনে করি যত দিন শোষণমুক্ত সমাজ হবে না তত দিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। ব্যক্তিগত সম্পতির বদলে সামাজিক সম্পত্তির ধারণায় আমরা বিশ্বাস করি তাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাসদ নেতাদের নেই। সংসার জীবনের ক্ষেত্রে দলীয় কোন বাধা-নিষেধ না থাকলেও নেতারা স্বেচ্ছায়ই সংসার জীবন থেকে দূরে থাকেন। এটি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। - মানবজমিন
রাজধানীর ২৩/২ তোপখানা সড়কে ভাড়া বাসায় বাসদের কার্যালয়। তার পাশেই দলের টাকায় কেনা তিন কক্ষের একটি ফ্ল্যাট। এখানে থাকেন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দলের এই আবাসন ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘পার্টি হাউজ’। সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশ। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়া এই ফ্ল্যাটে কেউ থাকেন না। তবে প্রয়োজনে দলের লোকজন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করতে যান সেখানে। বাসায় নেই কোন গৃহপরিচারিকা। বিশেষ প্রয়োজনে নেতৃবৃন্দকে সহযোগিতা করেন দলের কর্মীরা। রান্নাবান্নার জন্য কেনাকাটা করেন দলের লোকজনই। নিজ হাতেই রান্নাবান্না করেন নেতারা। মাংস, ভর্তা ও শুঁটকিসহ সব পদের রান্নার কৌশলই রপ্ত করেছেন তারা। ভাল কিছু রান্না হলে তা দলের অন্য নেতবৃন্দকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। তাদের মতে, সংগ্রামী জীবনে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে রয়েছে তাদের দৃঢ় বন্ধন। তা ভ্রাতৃত্বের ও বন্ধুত্বের। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান থাকেন দলের অফিসে। তার আবাসনের জন্য অফিসে রয়েছে আলাদা কক্ষ। ওই কক্ষের সঙ্গে আছে রান্নার কক্ষ। আছে বুকসেলফ। এতে আছে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বই। একটি খাট। একটি টেবিল, কয়েকটি চেয়ার। আসবাবপত্র। ঢাকায় থাকলে তিনি এখানেই থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন দলের কাজে। দলের অফিসে নেতাকর্মীরাই বারবার চা তৈরি করে দেন তাকে। অনেক সময় নিজেই রান্নার কাজ করেন খালেকুজ্জামান। তবে তার অন্য ব্যস্ততা থাকলে সহযোগিতা করেন দলের লোকজন। বাসদের নেতাকর্মীরা জানান, নিজের কাজ নিজে করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। ঢাকার বাইরে গেলে থাকেন দলীয় অফিস বা দলের নেতাদের বাসায়। বাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খালেকুজ্জামান। দলের জন্মলগ্ন থেকেই আছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। তার আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে কনভেনশনের মাধ্যমে গঠিত বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। বাসদের নিয়মানুসারে নিজের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি লিখে দেন দলের নামে। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামের ভূঁইয়া পরিবারের সন্তান খালেকুজ্জামান। তার পিতা নুরুজ্জামান ভূঁইয়া ছিলেন পেশায় শিক্ষক। পিতা বেঁচে নেই। মা আছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ খালেকুজ্জামান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে জড়িত হন রাজনীতিতে। ডিগ্রি সম্পন্ন করা হয়নি। ওই সময়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হলেও এখন নিজের কোন সম্পদ নেই। এমনকি বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে অংশগ্রহণ করে উপার্জিত আয়ও দলের ফান্ডে জমা দেন তিনি। অন্যদিকে তার নিজের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সকল ব্যয় নির্বাহ করে দল।
মা-বাবার একমাত্র সন্তান বজলুর রশীদ ফিরোজ। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। যৌবন পেরিয়েছেন। নিজের সংসারের প্রয়োজন অনুভব করেন না ফিরোজ। পুরো দেশটাই তার সংসার। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোই তার আপন স্বজন। তার জন্ম ঢাকার ধামরাই এলাকায়। পিতা মন্তাজ উদ্দিন বেঁচে নেই। মা আছেন। সকল সম্পদ দলের নামে লিখে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পর। তার এবং তার মায়ের যাবতীয় খরচ চলে এখন দলের অর্থে। বজলুর রশীদ ফিরোজ থাকেন ‘পার্টি হাউজে’। মা-ও থাকেন সেখানে। কখনও কখনও দলের নেতাকর্মীদের বাসায়ও থাকেন বজলুর রশীদ ফিরোজের মা। তার মায়ের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দেন দলের লোকজন। এ বিষয়ে বাসদের দপ্তরের দায়িত্ব পালনকারী মাইন উদ্দিন বলেন, ‘ফিরোজ ভাইয়ের মা এখানে (পার্টি হাউজে) থাকলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটার কথা আমাকেই বলেন। আমি তা করে দেই।’ এটি শুধু দল নয় একটি পরিবার- বলে দাবি করেন তিনি। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাসদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ফিরোজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও ডাকসুর সদস্য ছিলেন তিনি। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন ২০০৯ সালে। কর্মব্যস্ততার কারণেই বিয়ে করেন নি বলে জানান বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই বিয়ে করেননি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীও বিয়ে করেননি। এছাড়া, অনেক কারণেই বিয়ে করা হয় না। অনেক গরিব মানুষও বিয়ে করেন না।
জাহেদুল হক মিলু। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। জাসদ ছেড়ে বাসদের প্রতিষ্ঠাতা থেকে আজ পর্যন্ত এই দলের সঙ্গে আছেন তিনি। বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলা সদরে। তিনি আইনজীবী হলেও দলের প্রয়োজন ছাড়া আদালতে যাননি কখনও। দলের প্রয়োজনে দিয়ে যাচ্ছেন শ্রম, সময়। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পরই নিজের সম্পদ দিয়েছেন দলকে। সংগ্রামী জীবনে বউ-সংসার থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি। ‘পার্টি হাউজ’-ই তার নিবাস। বিয়ে সংসার সম্পর্কে বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহেদুল হক মিলু বলেন, রাজনৈতিক অসঙ্গতি যাতে সৃষ্টি না হয় এজন্যই সংসার করা হয়নি। এছাড়া সে রকম কেউ হয়তো আমাদের সামনে আসে নি। তবে ভবিষ্যতে নেতৃবৃন্দ সংসার করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের স্ত্রীরাও দলের জন্য কাজ করবেন।’ সম্পত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পদ থাকার নিয়ম নেই।’
একই ভাবে দিনাতিপাত করেন বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন। বাবা-মা আছেন। আছেন তিন ভাই ও চার বোন। তারা সবাই সংসার জীবন কাটাচ্ছেন। তবে ব্যতিক্রম রতন এখনও ব্যাচেলর। দলকে নিয়ে এবং দেশের মানুষকে নিয়েই তার সকল স্বপ্ন। জন্ম রংপুর সদরে। লেখাপড়া করেছেন রংপুরে। পরে ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এ নেতা বলেন, সামাজিক শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা রাজনীতি করি। আমরা মনে করি যত দিন শোষণমুক্ত সমাজ হবে না তত দিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। ব্যক্তিগত সম্পতির বদলে সামাজিক সম্পত্তির ধারণায় আমরা বিশ্বাস করি তাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাসদ নেতাদের নেই। সংসার জীবনের ক্ষেত্রে দলীয় কোন বাধা-নিষেধ না থাকলেও নেতারা স্বেচ্ছায়ই সংসার জীবন থেকে দূরে থাকেন। এটি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। - মানবজমিন
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়