Sunday, March 9

খুনের পর মায়ের অলঙ্কার খুলে নেয়, চিপস খায় ঐশী

ঢাকা: পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানসহ (১৯) চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি (২৭), মিজানুর রহমান রনি (২৫) ও গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি। তবে সুমি নাবালগ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আলাদা চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে ঢাকা সিএমএম আদালতে ডিবির ইন্সপেক্টর মো. আবুয়াল খায়ের ওই চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে ঐশীর বিরুদ্ধে মা-বাবাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা, আলামত গোপন, আলামত নষ্ট, চুরি ও বাবা-মাকে হত্যার জন্য বিষ প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গৃহকর্মী সুমির বিরুদ্ধে তার সামনে কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানোর পরও তা মাহফুজুর ও স্বপ্না রহমানকে না জানানো কিংবা ঘটনার সময় চিৎকার না দেয়া এবং লাশ গোপনে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামি জনির বিরুদ্ধে নেপথ্যে থেকে ঐশীকে তার বাবা-মাকে হত্যায় প্ররোচণা এবং এরপর তাকে দুবাই যাওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করার অভিযোগ আর রনির বিরুদ্ধে খুনের ঘটনা জেনেও ঐশীকে তার দূর সম্পর্কীয় খালা কুলছুমের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐশী অত্যন্ত কৌশলী ও সুচতুর মেয়ে। পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়ায় সে অত্যন্ত আদরের ছিল। একারণে সে ইচ্ছামত চলত। আসাদুজ্জামান জনি এবং মিজানুর রহমান রনির মতো উশৃঙ্খল বন্ধুদের সঙ্গে মিশে পরিবারের বাইরের পরিবেশের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ওই কারণে পরিবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং বাবা-মায়ের শাসন তার প্রতি অমানবিক আচরণ হিসেবে ভাবত।

বন্ধু জনি তাকে দুবাইয়ে ড্যান্স করার প্রস্তাব পায়। দুবাই যাওয়ার জন্য বাবা মাহফুজুর রহমানের কাছে তিরিশ হাজার টাকা চায় ঐশী। বাবা দুবাই যেতে নিষেধ করলে সে ঘটনার একমাস আগে চামেলীবাগের বাসা থেকে বনশ্রীতে বন্ধু জনির সহায়তায় ১৫ দিন সাবলেট ছিল। ওইসময়ই জনিকে নিয়ে বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সুচতুর ঐশী বাবা-মাকে হত্যার পর নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে মা স্বপ্না রহমানের মোবাইল ফোন থেকে বন্ধুর খালার বাড়িতে আশ্রয় চাইতে মিথ্যা কথা বলে বাসা থেকে মালামালসহ পালিয়ে যায়। যে ডেগার জাতীয় ছোরা দিয়ে বাবা-মাকে হত্যা করেছিল এবং যে কাপে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কফি পান করিয়েছিল তা ধীরস্থিরভাবে ধুয়ে হাতের ছাপ নষ্ট করে ফেলে।

এসময় ভাই ওহী যাতে ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না হতে পারে এ জন্য সে মা-বাবাকে হত্যার সময় তাকে বাথরুমে আটকে রাখে। হত্যার পর আলামত রক্ত মুছে, নিজে গোসল করে এবং ওহীকে বাথরুম থেকে বের করে।

খুন করার পর সে অভিজ্ঞ খুনির মতো মায়ের হাতের চুরি ও আংটি খুলে নেয়। গৃহকর্মী সুমিকে দিয়ে আলুর চিপস ভেজে খায়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব আচরণ ঐশীর মানসিক পরিপক্কতার প্রমাণ দেয়।

যেভাবে খুন করে
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট সকালে ঐশী সবার অগোচরে ৬ পাতার ব্রোমাপিজাম ৩ এমজি ঘুমের ওষুধ সংগ্রহ করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবা-মায়ের জন্য কফি তৈরি করে ঘুমের ওষুধ মিশায়। ওই সময় গৃহকর্মী সুমি ওষুধ মিশানোর বিষয়টি দেখে ফেললে ঐশী বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে বলে।

মাগরিবের নামাজের পর মা স্বপ্না রহমান ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখার সময় ঐশী তাকে সেই কফি খেতে দেয়। কিছু সময়ের মধ্যে স্বপ্না  অচেতন হয়ে পড়লে তাকে সোফার ওপর একটি বালিশে শুইয়ে দেয়। এরপর সে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঐশী বাবাকে বাসায় আসার জন্য ফোনে অনুরোধ করে। মেয়ের ফোন পাওয়ার পর বাবা মাহফুজুর রহমান বাসায় চলে আসেন। আসার পর স্ত্রীকে ড্রয়িংরুমে অচেতন অবস্থা দেখে তার কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে মাস্টার বেডরুমে শুইয়ে দেন।

ওহীও মায়ের পাশে গিয়ে ঘুমায়। এরপর মাহফুজুর রহমান রাতের খাবার খান। ভাত খাওয়ার পর ঐশী বাবাকে কফি পানের প্রস্তাব দেয়। মেয়ের হাতে কফি পান করে  কথা বলতে বলতে মেয়ের খাটের উপরই অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি।

এরপর রাত ২টার দিকে ঐশী ডেগার জাতীয় ছোরা নিয়ে মায়ের কক্ষে প্রবেশ করে। সে প্রথমে মায়ের পাঁজরের নিচে ছোরা দিয়ে আঘাত করলে স্বপ্না রহমানের ঘুম ভেঙে যায়। ওই সময় মায়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকা ওহীও জেগে ওঠে। সে চিৎকার করে উঠলে ঐশী তাকে বাথরুমে নিয়ে আটকে রাখে।

এরপর আবার মায়ের কাছে এসে ফের কয়েকবার মাকে ছোরা দিয়ে আঘাত করে। মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গলায়ও ছোরা দিয়ে আঘাত করে। স্বপ্না রহমান মারা যাওয়ার আগে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে খাট থেকে মেঝেতে পড়ে যান।

মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে বাবাকেও ছোরা দিয়ে আঘাত করে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবারও মৃত্যু হয়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর গৃহকর্মী সুমিকে সে জানায়। এরপর সুমির উপস্থিতিতে মায়ের হাত থেকে চুড়ি এবং আংটি খুলে নেয় এবং লাশ সুমির সহায়তায় বাথরুমে নিয়ে লুকায়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর দিন তাদের মেয়ে ঐশী রহমান রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করে।

বাংলামেইল২৪ডটকম/

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়