বরগুনা: একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় লাশ মনে করে গাড়িতে
করে নিয়ে যাওয়া সেই নাসিমা ফেরদৌস হচ্ছেন দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী
আসনের সদস্য (এমপি)।
রোববার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার মনোনয়ন নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটার মেয়ে নাসিমা ফেরদৌসী মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর
(উত্তর) শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আওয়ামী লীগের টিকিটে তিনি এবার এমপি
হচ্ছেন। গত শনিবার তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
করে রোববার দাখিল করেন।
শরীরে হাজারো স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা আর পঙ্গুত্ব নিয়ে পথচলা এ নারী ২০০৪
সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা মনে হতেই আঁতকে ওঠেন আজও। স্মৃতিচারণ
করে বলেন, ‘লাশের গাড়িতে নড়ে চড়ে না উঠলে আর কোনোদিন হয়তো আর পৃথিবীর আলো
বাতাস দেখা হতো না। হাসপাতালে না নিয়ে নেয়া হতো কবরে। সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে
চলে যেতে হত অকালেই।’ চিরদিনের জন্য নাসিমা হয়ে গেছেন পঙ্গু। হুইল চেয়ার
আর লাঠিই চলাফেরার অবলম্বন। স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় সেই দিন থেকে নেই
স্বস্তির ঘুম।
আওয়ামী লীগ পরিমণ্ডলেই বেড়ে উঠেছেন পাথরঘাটা উপজেলার জালাল উদ্দিনের মেয়ে
নাসিমা। অনিবার্যভাবেই এক সময় নিজেকে জড়িয়ে নেন রাজনীতিতে। ১৯৭৯ সালে মহিলা
আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে শুরু করেন কাজ। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে
ফেরার পর আরো সক্রিয় হয়ে ওঠেন রাজনীতিতে। এক পর্যায়ে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী
স্বামী হারুন অর রশিদকে। এরপর চলে আসেন ঢাকায়।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের সেই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাসিমা ফেরদৌস
বলেন, ‘সেদিন আইভি রহমান, মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে মিছিল করে তিনি দলীয়
কার্যালয়ের সামনে এসেছিলেন। চতুর্দিক থেকে মিছিল আসার পর ট্রাকে দাঁড়িয়ে
শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়
গ্রেনেড হামলা।’
ওই সময়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘চারদিকে ধোঁয়া আর শব্দে একাকার। কিছু বুঝে
ওঠার আগেই চেতনা হারিয়ে ফেলছিলাম। চারদিকে শুধু আগুনের ফুলকি দেখতে
পাচ্ছিলাম।’ এর মধ্যে মনে হচ্ছিল শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে পা। ঝড়ছে রক্ত। চারপাশে সবারই একই অবস্থা। এরপর জ্ঞান
হারিয়ে ফেলেন। আর কিছুই মনে নেই পরের কথা।’
পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে টেনে তোলা হয় লাশের ট্রাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই
তিনি নড়েচড়ে উঠলে পুলিশ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের করিডোরে তাকে ফেলে রাখা হয়। এরপর একজন এসে তার কাছে
আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি ছেলের নম্বর দেন। পরে ছেলের সঙ্গে
যোগাযোগ করে বিষয়টি জানানো হয়।
ঘটনার সময় চিকিৎকরা জানিয়েছিলেন, নাসিমাকে বাঁচাতে অন্তত ১০ ব্যাগ রক্ত
লাগবে। তার ছেলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে ঘুরে রক্তদাতাদের নিয়ে
আসেন। কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। পরদিন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার
অস্ত্রোপচার হয়। শরীর থেকে বের করা হয় কিছু স্প্লিন্টার। এর কিছুদিন পর
নাসিমার পায়ে পচন ধরে। দলীয় খরচে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় দিল্লিতে।
আড়াই মাস পর দেশে ফেরেন। এরপর আরো তিনবার তাকে যেতে হয়েছে দিল্লিতে। কিন্তু
তার পঙ্গুত্ব ঠেকানো যায়নি।
বাংলামেইল২৪ডটকম/
বাংলামেইল২৪ডটকম/
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়