Monday, March 3

বিদ্রোহীদের জন্য আ.লীগের দরজা বন্ধ

ঢাকা: গত ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অংশ নেন। তাদের কেউ কেউ পরাজিত হলেও অনেকেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তারা এখন দলে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধ সেধেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের নীতি নির্ধারকরা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনেও অনেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার দায়ে   বহিষ্কার হয়েছেন। যদিও তারা ভেবেছিলেন অন্তত জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হলে দল তাদের বুকে টেনে নেবে। কিন্তু বিধিবাম! তাদের ব্যাপারে দল থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বরং উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ায় অনেকেই বহিষ্কার হয়েছেন।

জানা গেছে, দলের নির্দেশ উপক্ষো করে দশম জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিনই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো না কোনো নেতার দরজায় নক করছেন তারা। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় দলের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো অবস্থানও নিতে পারছেন না তারা।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন ১৬ জন। এদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এ তালিকায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পদক হাজী সেলিম, ইউসুফ হারুনসহ বেশ কয়েকজন দাপুটে নেতাও
রয়েছেন। এদের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুই-তিনজনকে বহিষ্কার করা হলেও বাকিদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আওয়ামী লীগ। এসব এমপিদের বেশির ভাগই দলের বিভিন্ন পদে থেকে নিজ নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে তারা এখন মূল দলে ফিরতে পারছেন না। পারছেন না দলীয় পরিচয় দিতে। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সংসদ সদস্য হলেও দলের এমন অবস্থানের কারণে বাঘা বাঘা নেতারাও ঘরে বসে কড়িকাঠ গুণছেন। এমনকি নিজ এলাকাতেও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ফলে দলীয় প্রতীক নিয়ে পরাজিত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে দ্বৈতনীতি নিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে দলের হাইকমান্ড থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিজয়ী হয়ে আসা সংসদ সদস্যদের দশম সংসদে স্বতন্ত্র আসনেই থাকতে হবে। তাদের আওয়ামী লীগে আর ফিরিয়ে নেয়া হবে না। এছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবেই সংসদে কথা বলতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা দলের নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদেরকে দলে রাখা হবে কি হবে না এ নিয়ে এখনও কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত আওয়ামী লীগের দরজা তাদের জন্য বন্ধ। আর যে সব বিদ্রোহী প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের স্বতন্ত্র সংসদদের আসনেই থাকতে হবে। আর উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা নির্বাচিত হলেও দলীয় কোনো পরিচয় দিতে পারবে না। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়াও বহিষ্কার করা হতে পারে।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের প্রভাবশালী নেতারা মনে করেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে। সরকারের সমালোচনা করবে। সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দুটি সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে  স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা অংশ
নিতে চাইলেও শেখ হাসিনা না চাওয়ায় তারা অংশ নিতে পারেননি। এ কারণেই এসব সংসদরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে ধর্ণা দিলেও কোনো পাত্তা পাননি তারা।

এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস্কান্দার মির্জা বাচ্চু, কোষাধ্যক্ষ শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার আফাজ সরকার, ফয়জুর রহমান ফকির, মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সভাপতি জালাল উদ্দিন আহমেদ, মহিলা সম্পাদিকা সালেহা ইসলাম ও নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার রুহুল আমিন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হলো। এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীতা ও সমর্থনের দায়ে অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এই দলে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের জায়গা হবে না। তাদের যোগ্যতা রয়েছে। যোগ্যতার বলে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও জয় লাভ করেছেন। অতএব সংসদেও যোগ্যতা অনুযায়ী কথা বলতে হবে। তাদের অন্তত ৫ বছর সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবেই থাকতে হবে।’ আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে আনা হবে কি হবে না এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নুহ-উল আলম লেলিন বলেন, ‘দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে বিজয়ী হয়ে আসা সংসদ সদস্যদের দশম সংসদে স্বতন্ত্র আসনেই থাকতে হবে। কারণ তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এই মুহূর্তে বিদ্রোহী প্রার্থীদের আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংসদে তাদেরকে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবেই থাকতে হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতীয় দশম সংসদ নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে আপাতত আওয়ামী লীগে ফেরানো সম্ভব হবে না। তাদের স্বতন্ত্র হয়েই থাকতে হবে। উপজেলা নির্বাচনেও য়ারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে স্থানীয় পর্যায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ বহিষ্কার করা হবে।’

যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়নি তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের নেতৃত্বে দশম জাতীয় সংসদের ১৬ স্বতন্ত্র এমপি নতুন জোট গঠন করেন। এতে ১২ স্বতন্ত্র সংসদ উপস্থিত ছিলেন। আর বাকি ৪ জনও জোটে থাকার সম্মতি জানিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন নওগাঁ-৩ আসনের ছলিম উদ্দিন তরফদার, মেহেরপুর-২ আসনের মকবুল হোসেন, ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকী, পিরোজপুর-৩ আসনের রুস্তম আলী ফরাজী, ঢাকা-৭ আসনের হাজী মো. সেলিম, নরসিংদী-৩ আসনের সিরাজুল ইসলাম মোস্তফা, নরসিংদী-৭ আসনের কামরুল আশরাফ খান, ফরিদপুর-৪ আসনের মজিবুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার-২ আসনের আবদুল মতিন, কুমিল্লা-৪ আসনের রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, ফেনী-৩ আসনের রহিম উল্লাহ ও পার্বত্য রাঙ্গামাটির সংসদ ঊষাতন তালুকদার।

ওই বৈঠকে হাজী মো. সেলিমকে সভাপতি, কুমিল্লা-৪-এর রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে সদস্য সচিব এবং পিরোজপুর-৩-এর রুস্তম আলী ফরাজী ও নরসিংদী-২-এর কামরুল আশরাফ খানকে সহসভাপতি করে স্বতন্ত্র জোটের চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলামেইল২৪ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়