Thursday, March 20

কতোটা নিরাপদ আকাশ ভ্রমণ

ঢাকা: মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের খবরাখবর আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু রহস্যের জট খুলতে যতোই সময় যাচ্ছে ততোই একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় গত দুই দশক ধরে মানুষ বেশ অহমিকার সঙ্গে বলে আসছিল ভূমিতে তো বটেই আকাশপথেও আর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না। কিন্তু ২৩৯ আরোহী নিয়ে মালয়েশিয়ার বিমান উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা সে অহমিকা ধূলিস্যাৎ করে দিল বলা যায়। আকাশ পথে ভ্রমণ তাহলে কতোটা নিরাপদ?
 
অবশ্য ২০ বছর আগেও ইউরোপের বাইরে আকাশপথের দুর্ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে তেমন গেুরুত্ব পেত না।কারণ তখন দুর্ঘটনাগুলো খুব ঘন ঘন ঘটতো ফলে ধরেই নেয়া হতো এটা অলঙ্ঘনীয় যে ভ্রমণের জন্য আমাদের একটু মূল্য দিতেই হবে!
 
ওই সময় বিমান পরিবহন শিল্পের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছিলেন, যাত্রীবাহী বিমান কোম্পানি এবং বিমানের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে কিন্তু সেভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০১০ সালে প্রতি সপ্তাহে একটি করে বিমান ভূপতিত হবে। ফলে পুরো শিল্পটিই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। মানুষ জীবন ঝুঁকি নিয়ে আকাশপথে ভ্রমণ করতে অনাগ্রহী হবে- এ বিষয়টি বিমান পরিবহন শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে বিবেচিত হবে।
 
আসলে বাস্তবতা হচ্ছে বিশ শতকে এসে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত বিমান পরিবহন পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতোটাই উন্নত হয়েছে যে আকাশপথের দুর্ঘটনা এখন বিরল ঘটনা। একারণেই মালয়েশিয়ার বিমানটি নিয়ে গণমাধ্যমের এতো আগ্রহ। আফ্রিকা ও সাবেক কমিউনিস্ট কিছু দেশের আকাশপথ এখনো তুলনামূলক অনিরাপদ রয়ে গেছে এমন অভিযোগ থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়।
 
আকাশপথে ভ্রমণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার এ উন্নতি একদিনে হয়নি। দিনের পর দিন নানা অভিজ্ঞতার আলোকে এ উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। পরিবহন শিল্পে নিরাপত্তা উন্নয়নের কাজটি হয়েছে নানা পরীক্ষা এবং ভুলের ফলশ্রুতিতে। দুর্ঘটনা সব সময়ই নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই প্রমাণ করেছে; আর এখান থেকে শিক্ষ নেয়া হয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের চাপের মুখেই মূলত বিমান পরিবহন ব্যবস্থায় নিরাপত্তার বিষয়টি অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
 
নতুন প্রযুক্তির বিমানগুলো পুরনোগুলোর চেয়ে সব দিক থেকেই অধিক নিরাপদ। আগে বিমান বিধ্বস্ত হতো একাধিক ত্রুটির কারণে: ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া; ব্যবহৃত ধাতব অংশের ক্লান্তি এবং নেভিগেশন সিস্টেমের ত্রুটির কারণেই বিমান ভূপতিত হতো। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং পাখির কারণে বিমান পরিবহন যখন চরম হুমকিতে তথন নতুন বিমানগুলোতে এই বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হলো। 
 
তবে ১৯৭০ থেকে আশির দশক পর্যন্ত ছিনতাই বিমান দুর্ঘটনার একটি বড় ইস্যু হিসেবে আবির্ভুত হয়। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। এই ঘটনাগুলো কিন্তু বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে। শুধু প্রযুক্তি যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে কতোটা সক্ষম তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ।
 
নতুন প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পাইলটের ভুল করার আশঙ্কা অনেকখানি কমিয়ে দিয়েছে। আগে এই কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ভালো প্রশিক্ষণ একজন দক্ষ পাইলট প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন চৌকস পাইলট বড় ধরনের অনেক বিপর্যয় ঠেকিয়ে দিতে পারেন। যেমন: ২০০৯ সালে ইউএস এয়ারওয়েজ এয়ারবাসটিকে নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে নিরাপদে ল্যান্ড করানোর প্রধান কৃতিত্বটা পাইলটের। আর ১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্যের একটি বাণিজ্যিক বিমান দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়। কারিগরি ত্রুটি ও পাইলটের ভুল এই দুয়ে মিলে এরকম একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
 
আজকাল রেলগাড়িরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক উন্নত করা হয়েছে। ২০০২ সালে এ শিল্পে নজিরবিহীন একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আর তেমন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ১৯৮০’র দশকেই সারা বিশ্বে ১৭টি বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয় কমপক্ষে ৮৮ জন।
 
প্রযুক্তির উন্নয়ন, দুর্ঘটনার ব্যাপারে গণমাধ্যমের তীক্ষ্ণ ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবসার খাতিরেই পরিবহন কোম্পানিগুলো নিরাপত্তার দিকে বেশি বেশি নজর দেয়া আমাদের আশাবাদী করে তোলে। এর জন্য সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আর একারণেই বিমান ও ট্রেন যাত্রা আগের চেয়ে অনেকখানি নিরাপদ হয়েছে। কিন্তু তারপরও মানতেই হয়, কোনো পথেই ভ্রমণ কখনো ১০০ ভাগ নিরাপদ বলা যাবে না।
 
বাংলামেইল২৪ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়