ঢাকা: গত ৮ মার্চ মধ্যরাতে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংগামী
মালয়েশীয় ফ্লাইট ৩৭০ বিমানটি ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে
যায়। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে একের পর এর রহস্য বাড়তে থাকে। যতই দিন
গড়াচ্ছে ততই রহস্য ঘণীভূত হচ্ছে বিমানটিকে ঘিরে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিমানটি
কোথাও না কোথাও অবশ্যই আছে এই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই চলছে উদ্ধার অভিযান।
কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার দশদিন পর যখন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান তৎপরতা কমিটি
জানায় যে, বোয়িং৭৭৭ বিমানটি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তখন স্বাভাবিক ভাবেই
একটি প্রশ্ন সবার মধ্যেই উপস্থিত হয়েছে অবধারিত সত্যের মতো। আর তা হলো,
‘যদি বিমানটিকে আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া না যায়?’
এই প্রশ্নটির উত্তর এই মুহূর্তে কেউ জানুক বা না জানুক তাতে কিছুই আসে যায়
না নিখোঁজ হওয়া যাত্রীদের পরিবারের কাছে। তারা শুধু তাদের পরিজনকে ফিরে
পেতে চায় সকল রহস্যের অবসান ঘটিয়ে। বিমানটি খুঁজে পাওয়া না গেলে বিশ্ব
বিমান বাণিজ্য এবং বিমান সেবা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে পৃথিবীর
মানুষ। আর নিশ্চিতভাবেই এই ঘটনা বিমান শিল্পের জন্য বিশাল একটা আঘাত। আর
এটা এমন একটা আঘাত যেখান থেকে শেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ যদি বিমানটি
পাওয়া যেত তাহলেই একমাত্র এর ত্রুটি বিচ্যুতি কিংবা অন্তরালের ঘটনা উদঘাটন
করা যেত।
পৃথিবীর ইতিহাসে বিমান গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কথিত বারমুডা
ট্রায়াঙ্গাল এলাকায় বেশ কয়েকটি বিমান গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইতোপূর্বেই।
১৯৬৫ সালে আর্জেনটিনার একটি সামরিক বিমান মোট ৬৯জন যাত্রীকে নিয়ে গায়েব হয়ে
যায়। সেই থেকে বিমানটির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বিমান দুর্ঘটনা বিষয়ক কর্মকর্তা রিক গিলেসপি বলেন,
‘যখন আমাদের কোনোকিছু হতবুদ্ধি করে দেয়, তখন আমরা চটে যাই এবং ভয়ও পাই। আর
এটা নিয়ন্ত্রন করা আমাদের জন্য কষ্টকর। একটা বিশাল বিমান স্রেফ হাওয়া হয়ে
যাবে এটা কেউ শুনতে চাইবে না।’
গিলেসপির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক জার্নালের সম্পাদক
অ্যান্ড্রু থমাস বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন বিমানের যন্ত্রপাতি অনেক নাজুক।
কিন্তু একটি বিমান নির্মানে অনেক সময় এবং অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষার ভেতর দিয়ে
এর যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। বিশ্বের বিমানগুলোতে যে রাডার ব্যবস্থা চালানো
হয় তা প্রথম উদভাবন করা হয় ১৯৫০ সালে। এবং যা পরবর্তীতে জিপিএস ব্যবস্থার
মধ্য দিয়ে অনেক উন্নত করা হয়।’
ফ্লাইট ৩৭০ বিমানটির জিপিএস ব্যবস্থা নিয়ে রহস্য এখনো শেষ হয়নি।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথ পর্যন্ত জিপিএস সুবিধা
কার্যকর ছিল। পরবর্তীতে যা হঠ্যাত করেই বন্ধ হয়ে যায়। মালয়েশিয়ার এই নিখোঁজ
বিমানটির জিপিএস ব্যবস্থা ছিল অনেক পুরোনো আমলের। কারণ একটা বিমান
নির্মানে যা খরচ হয় তার পাশাপাশি প্রায় একই পরিমান অর্থ খরচ হয় রাডার ও
জিপিএস ব্যবস্থাপনায়। তাই অনেক বিমান কোম্পানিই খরচ কমানোর জন্য আগেকার
জিপিএস সুবিধা গ্রহন করে বিমানে। স্রেফ একটি বিমানে উন্নতমানের জিপিএস
সুবিধা কার্যকর করতেই খরচ হয় ৮০ বিলিয়ন ডলার।
এবার বিমানটি যদি না পাওয়া যায় এই প্রশ্নের সম্ভ্যাব্য উত্তর খুঁজতে শুরু
করা যাক। বিমানটি খুঁজে পাওয়া না গেলে এর দায় দায়িত্ব পড়বে সোজা আদালতের
ওপর। কারণ যেহেতু বিমানটির ধ্বংসাবশেষের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই
নির্দিষ্ট করে কোনো পক্ষের ওপরই এর দায় দায়িত্ব চাপানো সম্ভব হবে না।
আন্তর্জাতিক আইনে নিখোঁজ বিমান সম্পর্কিত কোনো দিক নির্দেশনা নেই।
এবিষয়ে আন্তর্জাতিক বিমান ব্যবস্থাপনা আইনজ্ঞ ব্রেইন হ্যাভেল বলেন, ‘কোনো
বিমান যদি সম্পূর্ণ নিখোঁজ হয়ে যায় বা অদৃশ্য হয়ে যায় সে ব্যাপরে
আন্তর্জাতিক বিমানচালনা সংগঠন বা আইন কিছুই করতে পারে না। কারণ বিমানটিকে
বর্তমানে হাজির করার মতো কোনো উপাদান আমাদের হাতে নেই।’ এবিষয়ে আরো একজন
বিশেষজ্ঞ কেভিন তোসো বলেন, ‘কোনো মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী যে বিষয়টি
তা হলো তার কোনো আত্মীয় স্বজনের নিশ্চিন্তকরন যে তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি
মারা গেছেন। এই নূন্যতম তথ্যের ভিত্তিতেও আইন কার্যকর হতে পারে। কিন্তু
এক্ষেত্রে কোনো তথ্যই নেই কারো হাতে। আর তাই এটা খুবই কঠিন।’
তোসো অবশ্য মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেভাবে
বিষয়টির ওপর রং চড়াচ্ছে তাতে নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনদের ব্যথা আরো বাড়ছে।’
এয়ারহার্ট প্রথম নারী বৈমানিক যিনি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন।
প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে সহকর্মী ফ্রেড নোনানকে নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়
স্রেফ গায়েব হয়ে যায় তার বিমান। আজ প্রায় সাত দশক পরেও মানুষ এয়ারহার্টের
রহস্যজনক অন্তর্ধাণ নিয়ে চিন্তিত। সেসময় অনেকেই অনেক কথা বলেছেন
এয়ারহার্টের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নিয়ে। এরমধ্যে সবচেয়ে চালু কথাটি ছিল,
এয়ারহার্ট তার বিমানের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বিমানটি নিয়ে কোনো এক নির্জন
স্থানে নেমে পরেন এবং পরবর্তীতে নিজের নাম ঠিকানা পাল্টে যুক্তরাষ্ট্রে
ফিরে আসেন। যদিও এই কথার বাস্তব ভিত্তি আজো পাওয়া যায়নি।
প্রায় চব্বিশটি দেশের অনুসন্ধানী দল ফ্লাইট ৩৭০’র অনুসন্ধানে কাজ করছে।
কিন্তু কোথাও বিমানটির নাম নিশানার দেখাও পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো সমুদ্র
সৈকতে নেই বিমানটির ধ্বংসস্তুপের চিহ্ন। যদি কোনো সূত্র নাই থাকে তাহলে
বিমান আরোহীদের অনেককেই কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনলাইন
দেখিয়েছিল, তা আজো প্রশ্নের উদ্রেক করে মানুষের মনে। যদি বিমানটি শেষমেষ
উদ্ধার নাই হয়ে থাকে তাহলে কি পৃথিবীর ইতিহাসে আরো একটি অমীমাংসিত রহস্যের
জন্ম দিলো ফ্লাইট ৩৭০।
বাংলামেইল২৪ডটকম/
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়