Monday, November 4

তালগাছ ঠিক রেখে সংলাপের ডামাডোল!

ঢাকা : তালগাছ ঠিক থাকলে শালিস মানবো। এটি গ্রাম্য প্রবাদ। গ্রামে জমির সীমানা নিয়ে বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হলে স্থানীয় মোল্যা-মাতুব্বরা শালিসী উদ্যেগ গ্রহণ করলে-এ ধরণের গ্রাম্য প্রবাদ সতেজ হয়ে ওঠে। এক পক্ষ বলেন, তালগাছ ঠিক আমার সীমানায় থাকলে শালিসে বসতে রাজি। আরেক পক্ষ বলেন, ওই কচাগাছ আমার জমির ভেতরে দিয়ে মীশাংসা করে দিলে শালিস মানবো। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে-বিবাদমান উভয় পক্ষই তাদের কথা বলার জায়গা খুঁজে পান। খুঁজে পান, গ্রামের মোড়ল-মাতুব্বর। গ্রাম্য ওই প্রবাদটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বহুলালোচিত অন্যতম প্রধান খবরে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই প্রধান তালগাছ ঠিক রেখেই সংলাপে বসার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়াতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে- সংলাপের আহ্বান, আয়োজন, উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা।

আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে বলছেন, সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সর্বদলীয় সরকারের অধীনেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। শুধু প্রধান মন্ত্রীই নন- দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা অনুরূপ বক্তব্য দিচ্ছেন-নিত্যদিন।

এদিকে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট প্রধান ও দলের সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীন ব্যতিত পাতানো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো না। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণতো দূরের কথা বরং প্রতিরোধ ও প্রতিহত করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান ওই দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা- স্ব স্ব বক্তব্য ও অবস্থান থেকে অনড় রয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরে এমন বক্তব্যে দেশে মহাসঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সুশীল শ্রেণি উভয় দলকে সংলাপে বসে সঙ্কট সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে এতদ: বিষয়ের টক’শোতে সরব আলোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু হয়।

গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর সোহওরাওয়ার্দী উদ্যাগে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে দেড় দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, সংলাপের উদ্যোগ নিন; নেচৎ রোববার থেকে সারাদেশে ৬০ ঘন্টার হরতাল।

এ প্রেক্ষিতে গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন। পরে জানাযায়, ওই ফোনটি বিকল ছিলো। এদিন সন্ধ্যার পর সচল টেলিফোনে প্রধান মন্ত্রী ফের ফোন করেন। দুই নেন্ত্রীর টেলিবাগযুদ্ধ ইতোমধ্যে দেশবাসী বিভিন্ন গণমাধ্যমের বদৌলতে অবহিত হয়েছেন। দুই রাজনৈতিক প্রধান- নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আবারো অনড় অবস্থানের বিষয়টি উঠে আসে। খালেদা জিয়ার আল্টিমেটামের সময় পার হওয়ার আগেই প্রধান মন্ত্রী তাকে ফোন করলেও তিনি হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন নি।

এরপর থেকে দেশে অস্থীতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গত রোব, সোম ও মঙ্গলবারের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শেষে ফের হরতাল কর্মসূচি দেয় ১৮ দলীয় জোট। সোমবার থেকে শুরু হওয়া হরতাল চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত। হরতালের কারণে জেএসসি ও জেডিসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করা হয়েছে। সূচি পরিবর্তনের কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীদের মনোবল নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

এদিকে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে- দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল দুই মেরুতে অবস্থান নেয়ার কারণে সামগ্রীকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ। চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে থমকে গেছে অর্থনীতির চাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। ধ্বংসাত্বক উন্মাদনায় মাতছেন রাজনৈতিক তরকারা। পথে পথে, পদে পদে অজানা আশঙ্কা। ফাটছে ককটেল-বোমা। রাজপথে প্রাণ হারাচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। বহু মানুষ আহত হচ্ছেন। যানবাহনে আগুন দেয়া হচ্ছে। ভাংচুর করা হচ্ছে। ফলে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছে গোটা দেশ।

অনেকেই মনে করছেন- সবেতো খেলা শুরু হয়েছে। তাদের মতে, এরপর নাকি বড়ো ধরণের রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা অপেক্ষা করছে। আর এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের দুই নেত্রী ‘তালগাছ ঠিক রেখে’ সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এরপরও গোটা দেশের আপামর জনতা তাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন। সবকিছু ছাপিয়ে দুই নেত্রীর সংলাপের মধ্যদিয়েই দেশের সকল সঙ্কট নিরসন হবে-এটিই জাতির প্রতাশা।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়