Tuesday, October 1

বিএনপিতে হারিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা

ঢাকা : দল থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা থাকলেও এখন তারা বিএনপি থেকে অনেক দূরে। অবশ্য তাদের বড় একটি অংশ মারা গেছেন। তবে জীবিত নেতাদের অধিকাংশই এখন আর দলে নেই। ক্ষোভ-অভিমানে কেউ স্বেচ্ছায় দল থেকে বেরিয়ে গেছেন। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বর্তমানে সেই সময়ের দুই একজন নেতার ঠাঁই হলেও তারা দলে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন ১২ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে জিয়া ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার, শাহ আজিজুর রহমান, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. আমিনা রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. এফ এম ইউসুফ, শেখ রাজ্জাক আলী, অধ্যাপক মো. একরামুল হক, সৈয়দ মহিবুল হাসান, আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী ও সর্বকনিষ্ঠ ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এর মধ্যে বর্তমানে শুধু ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বিএনপির রাজনীতিতে আছেন। অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শেখ রাজ্জাক আলী ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা জীবিত থাকলেও তারা দলের বাইরে। বাকি আটজনের সবাই মারা গেছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাতা ৯ সদস্য হলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবুল হাসানাত, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, জামাল উদ্দিন, আবদুল মোমেন খান, হাবিবুল্লাহ খান ও সাইফুর রহমান। এর মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দলে রয়েছেন। চার নেতা মারা গেছেন। ব্যারিস্টার আবুল হাসানাত, জামাল উদ্দিন ও হাবিবুল্লাহ খান জীবিত থাকলেও দলে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। তাদের কেউ কেউ ক্ষোভ-অভিমানে দলের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন না বলে জানা গেছে। ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মাজারে না যাওয়ার জেরে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। পরে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে দল প্রতিষ্ঠা করে এখন সেটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বর্তমানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্দ হয়ে ১৮ দলের নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। শেখ রাজ্জাক আলী ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নামে দল গঠন করেন। কিন্তু এলডিপিতেও নিষ্ক্রিয় শেখ রাজ্জাক আলী। তিনি এখন কোনো রাজনীতিতে নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপের আমন্ত্রণ না জানানোয় দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে একটি দল গঠন করেন। সম্প্রতি ওই দল থেকেও সরে আসেন। নিজ এলাকা দোহার ও নবাবগঞ্জে বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্যসহ পরবর্তীতে দলের স্থায়ী কমিটিতে ছিলেন চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী। তাকেও একটি 'মামুলি ভুলে' দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যদিও ভুলটি করেছিলেন তার ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী। তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী এরপর দুঃখ প্রকাশ করে কারণ দর্শাও নোটিসের জবাব দিলেও তাকে দলে ফেরত নেওয়া হয়নি। জিয়াউর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠজন তৎকালীন মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদও বিএনপির রাজনীতির বাইরে। জিয়া পরিবারকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন করেন। বর্তমানে তিনি ওই দলের প্রধান। অতীতের ভুলত্রুটির বাইরে এসে তিনি বিএনপিতে যোগ না দিলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রয়েছেন। জিয়াউর রহমানের সময়ে যুব মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপিকা জাহানারা বেগমও বিএনপিতে নেই। বিগত জোট সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা থাকলেও অনিয়মের অভিযোগে পদ ছেড়ে তিনি এলডিপিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে তিনি বিএনএফের কো-কনভেনার। বিএনএফের সদস্য সচিব আরিফ মঈনুদ্দিন জিয়া সরকারের উপমন্ত্রী ছিলেন। জিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হুইপ করীম আব্বাসীও বিএনপিতে নেই। বিএনপির প্রথম যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী। তিনি এখন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) প্রধান। আরেক যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যক্ষ হামিদা আলী বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। এ ছাড়া গত ওয়ান-ইলেভেনে 'কথিত সংস্কারপন্থি' বলে খ্যাত বিএনপির প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দলের বাইরে। রাজশাহীতে ১৬ সেপ্টেম্বর এক জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আর বিভক্তি নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আওয়ামী লীগকে বিদায় দিয়ে দেশ রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে বসতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের এ বক্তব্যে দলের বাইরে থাকা নেতাদের অনেকেই আশান্বিত হয়েছেন।-বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়