পাকিস্তানের শাসন শোষণের বিরুদ্ধে যখন বাংলার আপামর মানুষ ফুঁসে উঠছিল, একটি কালজয়ী গণঅভ্যুত্থান যখন উঁকি ঝুঁকি মারছে, ঠিক তেমন একটি সময়ে শিল্পী-সংগ্রামী, বিশিষ্ট সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, কৃষক নেতা সত্যেন সেনের নেতৃত্বে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সত্যেন সেনের সাথে উদীচী প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্তসহ সেই সময়ে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্ররা।
এদিকে উদীচী’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকেই নানা রঙে রঙ্গীন শোভাযাত্রা। এছাড়াও উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করেছেগণসঙ্গীত, পথনাটক, আবৃত্তি ও নৃত্য।
সেই থেকে আজও
জন্মলগ্ন থেকেই উদীচী নানা দুঃখ-দুর্দশা এবং অধিকার সম্পর্কে মানুষকে গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সচেতন করে আসছে। উদীচীর গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বারবার ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে কৃষকের ভাতের দাবি, শ্রমিকের শ্রমের ন্যায্য দাবির কথা।
আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরোধীতা করার পাশাপাশি দেশীয় দখলদার-মজুতদার-মুনাফাখোর, কালোবাজারীরা যখনই বিনষ্ট করতে চেয়েছে দেশের সম্মান, আপন স্বার্থে বিকিয়ে দিতে চেয়েছে দেশের সম্পদ তখনও তার বিরুদ্ধে গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী উদীচী’র শিল্পীরা গেয়ে উঠেছে গণসঙ্গীত। উজ্জীবিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে স্বার্থান্বেষী মহল। বিভিন্ন সময়ে দেশের তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ পাচার, সাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থার অসারতাকে ব্যঙ্গ করে বারবারই সোচ্চার হয়েছে উদীচী।
গণসঙ্গীতের আরও বেশি বিস্তার ঘটানো, গণসঙ্গীত যাতে আরো বেশি শ্রমজীবী মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারে, তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শিল্পীরা যাতে এসকল বঞ্চিত-নিপীড়িত-শোষিত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে সে লক্ষ্যে উদীচী ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে। গণসঙ্গীতকে স্বতন্ত্র একটি ধারা হিসেবে টিকিয়ে রাখতেও নানা ধারাবাহিক উদ্যোগ নিয়ে চলেছে উদীচী।
শুধু গণসঙ্গীত নয়, বাংলাদেশের পথনাটকের ক্ষেত্রেও উদীচীই পথিকৃৎ। ১৯৬৯’র ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে দেশবাসীকে জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে উদীচী ঢাকা নগর ও শ্রমিক অঞ্চলে ‘শপথ নিলাম’ নামে পথনাটক পরিবেশন করে।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে এই পথনাটক মঞ্চস্থ হয় এবং গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এরপরই জহির রায়হানের “পোস্টার” গল্পের নাট্যরূপ দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ অন্যান্য স্থানে পথনাটক মঞ্চস্থ করা হয়।
রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি ঝড়-ঝঞ্ঝা-দৈব-দুর্বিপাকে, আন্দোলনে-সংগ্রামে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে উদীচী। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাইফেল হাতে সরাসরি যুদ্ধে নামে উদীচীর শিল্পীকর্মীরা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা অস্ত্র জমা দিয়ে আবার হাতে তুলে নেয় ঢোল, করতাল, হারমোনিয়াম, তবলা, নাটকের পাণ্ডুলিপি। দেশ গড়ার সংগ্রামে আর সবার মত শরীক হয় উদীচীর শিল্পীকর্মীরাও।---কামাল শাহরিয়ার
ডিনিউজ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়