চট্টগ্রাম: হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ইজহার-হারুনসহ ১২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ । তাদের অবস্থান জানতে অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ । বিস্ফোরণস্থল কক্ষ থেকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের বিস্ফোরক দল আরও একটি তাজা হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করেছে। সোমবার বিস্ফোরণের পর থেকে মাদ্রাসা ছেড়ে প্রায় সবাই সটকে পড়েছে। ফলে মাদ্রাসায় অঘোষিত ছুটি চলছে। পুলিশ সোমবার দুপুর থেকেই পুরো মাদ্রাসা এলাকায় অবস্থান নিয়ে সর্তক পাহারায় রয়েছেন। মাদ্রাসা ছাত্র শিক্ষক ছাড়া বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই মাদ্রাসায় কোন শিক্ষক বা ছাত্রকে পাওয়া যায়নি। বন্ধ রয়েছে সব ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে মাদ্রাসা গেইটের দাড়োয়ান ও মসজিদের কেয়ার টেকারকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মাদ্রাসাটি বন্ধ করে ছাত্রাবাস খালি করে দেয়ার নির্দেশ দেয়ার কথা বলা হলেও দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন মাদ্রাসা বন্ধ করতে তাদের পক্ষ থেকে কোন ধরণের নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং ঘটনার পর থেকেই ছাত্ররা চলে যান। সোমবার দিনগত রাত দুইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিব (২৫) নামের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। হাবিব ওই মাদ্রাসার মাষ্টার্স সমমানের ইসলামী আইন অনুষদের ফতোয়া বিভাগের ছাত্র। এদিকে একই বিস্ফোরণে আহত নূরুন্নবী (২৮) নামে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. আশরাফুল ইসলাম জানান, নূরুন্নবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার পুরো শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণের পর আহত হাবিব হালিশহর জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গোপনে চিকিৎসা নেওয়ার সময় সোমবার দুপুরে পুলিশের হাতে আটক হয়। তার সঙ্গে সালমান নামে আরও একজন আটক হয়। পরে দু’জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। আহত সালমানের অবস্থা কিছুটা ভাল বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক বাশার। ঘটনার পর আহত চারজন এবং রাতে তল্লাশি চালিয়ে ৫ জনসহ মোট ৯জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে আহত এক ছাত্র মারা যায়। এছাড়া পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তিনটি তাজা হ্যান্ডগ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, ১৮ বোতল এসিড উদ্ধার করে। এদিকে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসার বিস্ফোরণস্থল কক্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের বিস্ফোরক দল আরও একটি তাজা হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তল্লাশির এক পর্যায়ে ওই তাজা হ্যান্ড গ্রেনেডটি উদ্ধার করা হয়। এদিকে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সিএমপি’র খুলশী থানা পুলিশ বিস্ফোরক আইন ও এসিড নিয়ন্ত্রন আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম নেওয়াজ বাদী হয়ে ৮ নম্বর ও ৯ নম্বর দুটি মামলায় মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও মুফতি হারুন ইজহার পিতা-পুত্রকে প্রধান আসামী করে এ মামলা করা হয়। সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো: শহীদুল্লাহ মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিস্ফোরক আইনের মামলায় ( ৮ নম্বর) ১২ জন আসামী এবং এসিড নিয়ন্ত্রন আইন মামলায় ( ৯ নম্বর) ২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত লোকজনকে আসামী করা হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের মামলায় আসামীরা হলেন, মুফতি ইজহারুল ইসলাম, তার পুত্র মুফতি হারুন ইজহার, হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরির কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক তফসির আহমেদ (৫০), হেফজখানা শিক্ষা (আরবি) বিভাগের শিক্ষক মো.এছহাক (৩৩), হাদিস মাধ্যামিক বিভাগের শিক্ষক আব্দুল মান্নান (২৬) এবং কিতাব বিভাগ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (২৪) ও বোর্ডিং সুপার মনির হোসেন (৫৫), বিস্ফোরণ ঘটনায় আহত ছাত্র হাবিব, নুরুন্নবী ও সালমান। এছাড়া এসিড নিয়ন্ত্রন আইন মামলায় পিতা-পুত্র মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও মুফতি হারুণ ইজহারকে আসামী করা হয়। এদিকে সিএমপি’র দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের হলেও মামলার তারিখ দেখানো হয়েছে ঘটনার দিন ৭ অক্টোবর। উল্লেখ্য মাদ্রাসাটির পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও তার ছেলে হারুন ইজহারের বিরুদ্ধে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। এ মাদ্রাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হন মুফতি ইজহারুল ইসলাম এবং তার দু’পুত্র হারুন ইজহার ও মুসা বিন ইজহার।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়