Monday, September 2

সিটিং বাসের নামে চিটিং

:: আমানুর রহমান ::
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে সিটিং বাস সার্ভিসের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন পরিবহন মালিকরা। প্রতি রুটে তথাকথিত সিটিং সার্ভিস ঘোষণা করে লোকাল বাসের চেয়েও খারাপ পরিবহন সেবা দিচ্ছে এসব সিন্ডিকেট। অথচ বিআরটিএ’র নিয়মে 'সিটিং সার্ভিস' নামে কোনো সার্ভিসের আদৌ অস্তিত্ব নেই।
মোটরযান আইনে 'সিটিং' নামে আলাদা কোনো বাস চলবে এমন চিন্তা করে ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। ভাড়ার তালিকা সব সর্ভিসের ক্ষেত্রেই এক রকম। সিটিং বাস সম্পূর্ণ বাসমালিক সমিতি কিংবা বাস মালিকদের অবৈধ ইচ্ছায় চলছে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।
সিটিং বাসের নামে চিটিং
অথচ রাজধানীতে পরিবহন ব্যবসায়ী সিটিং সার্ভিস, লোকাল সিটিং, গেইটলক এবং দ্রুত সার্ভিসের নামে যাত্রীদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে যাচ্ছে। মোটরযান আইনে উল্লেখ না থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে রাজধানীর মিনিবাস মালিক কর্তৃপক্ষ। মোটরযান আইনে কেবল ৫২ আসনের বাস এবং ২৯ আসনের মিনিবাস এ দুই ধরনের বাসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মালিকরা এ আইনের তোয়াক্কা না করে ট্রাফিক সার্জেন্ট ও বিআরটিএ’র কিছু অসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সকল কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর-গুলিস্তান, গাবতলী-যাত্রাবাড়ি, মিরপুর-আজিমপুরসহ বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিস, লোকাল সিটিং ও গেইটলক মিনিবাস নামে তথাকথিত এসব বাস সার্ভিস চলছে অবাধে। মিরপুর থেকে চয়েজ, সিল্কসিটি, বিকল্প, ইটিসি, ইউনাইটেড, দিশারী, নিউভিশন, সুপার সিটিং, শিকড়সহ বিভিন্ন কোম্পানির মিনিবাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল করছে। এছাড়া রাজধানী থেকে গাজীপুর-কোনাবাড়ির দিকে ছেড়ে যাওয়া গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী, সুপ্রভাত, আজমেরীসহ আরও কয়েকটি পরিবহন একই কায়দায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ আছে।
সিটিং বাসের নামে চিটিংযাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাসের হেলপার ও কন্ট্রাকটারের সাথে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। এসব বাসে উঠে বসলেই তাদের নির্ধারিত ভাড়া দিতেই হবে। এর অন্যথা হলে যাত্রীর সাথে চরম অশোভন আচরণ করে থাকে বাসের হেলপার-ড্রাইভাররা। এমনকি নির্ধারিত জায়গায় না নামিয়ে তার আগে-পিছে নামিয়ে দেয়ারও ঘটনা ঘটে। এমনকি নামানোর সময় কৌশলে তারা যাত্রীকে ফেলে দিতেও দ্বিধা বোধ করে না।
রোববার সকালে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে শিকড় পরিবহনের একটি বাসে অঞ্জনা সিনহা রায় পল্টন আসেন। পল্টনে নামার জন্য বাস চালককে তিনি অনুরোধ করলে কিছুতেই তিনি বাসটি থামচ্ছিলেন না। এদিকে বাসচালক চলন্ত বাস থেকে তাকে নামবার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। একপর্যায় তিনি চলন্ত বাস থেকে নামতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। এতে ঐ যাত্রী হাতে ও পায়ে মারাত্মক ব্যথা পান।
এ নিয়ে সাথে থাকা রঞ্জনা সিনহার ছেলের সঙ্গে বাসচালকের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রঞ্জনা সিনহা। যার নম্বর ৫৩/১-০৯-২০১৩।
এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে।
মিরপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, মিরপুর-মতিঝিল-গুলিস্তান রুটের সব গাড়িই এখন সিটিং করে চালানো হচ্ছে। কাজীপাড়া থেকে আগারগাঁওয়ের যেকোনো জায়গা থেকে কোনো যাত্রী উঠলে তাকে মিরপুর ও পল্লবীর ভাড়া দিতে হয়। আগে শেওড়াপাড়া থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হতো পাঁচ টাকা। কিন্তু এখন সিটিং সার্ভিসের নামে ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এমনকি আগারগাঁও থেকে উঠলেও এই ১৫ টাকাই দিতে হবে।
রাশেদ নামে অন্য এক যাত্রী পরবির্তন ডটকমকে বলেন,"সিন্ডিকেট করে নগরীর সব রুটের মিনিবাসগুলো সিটিং করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বাস মালিকেরা। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। প্রতিবাদ করতে গেলেই গণ্ডগোল বাঁধে।"
এ বিষয়ে জানাতে চাওয়া হলে এনা পরিহনের ম্যানেজার তপন জানান, যাত্রীরা সবসময় দ্রুত গন্তব্যে যেতে চায়। তাদের সুবিধার্থেই সিটিং সার্ভিস করা হয়েছে। বাস মালিকরা টাকা হাতিয়ে নেয় না।
যাত্রীদের সাথে বাস চালকসহ অন্যান্য স্টাফদের দুর্ব্যবহারের বিষয়কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসেব অনুযায়ী,শেওড়াপাড়া থেকে ফার্মগেটের দূরত্ব ৪.৬ কিলোমিটার। মিনিবাসে ভাড়া হওয়ার কথা ৬.৬৭ টাকা। অথচ ৪-৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।
সিটিং বাসের নামে চিটিং
এদিকে যাত্রাবাড়ি-গাবতলী রুটে চলাচলকারী মিনিবাসগুলো হঠাৎ করে লোকাল সিটিং হয়ে গেছে। মিনিবাসগুলোর হঠাৎ সিটিং হওয়ার কারণে বাড়তি ভাড়া গোনার পাশাপাশি সময়মতো বাসে উঠতে না পারার ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়কপরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন,"যাত্রীদের দাবির কারণেই সিটিং বা ডাইরেক্ট সার্ভিস চালু করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনেক সময় মালিকদের পক্ষ থেকে গাড়ি ডাইরেক্ট করা হয়। আবার কখনো কখনো কন্ডাক্টররাই গাড়ি ডাইরেক্ট করে থাকে।"
অন্যদিকে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন,"অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং নির্ধারিত আসন থেকে বাড়তি আসনের বিষয়ে তার জানা নেই।"
তিনি বলেন,"বিআরটিএ’র কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি এ অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে, তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বিশেষ সময়গুলোতে দূরপাল্লার বাসগুলো ভাড়া নিয়ে একরকম নৈরাজ্য শুরু হয় বলে মনে করেন তিনি।---:: আমানুর রহমান ::(পরিবর্তন)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়