Wednesday, September 4

সোনাগাজীতে পাউবো’র জমি দখলের পায়তারা


ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডের উত্তর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০ কোটি টাকা মুল্যের ১৩ একর জমি অবৈধভাবে ভূমিহীনদের নামে নথি সৃজন করে জবর দখলের অপচেষ্টা করছে একটি ভূমিদস্যূ ও জালজালিয়াতি চক্র। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসি ও সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।  

পাউবো, ভূমি অফিস ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৬০ এর দশকে সোনাগাজীতে মুহুরী সেচ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হলে মালামাল পরিবহন ও যাতায়াতের রাস্তা, পুল, কালভার্ট মেরামত কল্পে ইট ভাটা নির্মাণের জন্য ১৯৬৭-৬৮ সালে পাউবো সোনাগাজীর মতিগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডের উত্তর রাস্তার পার্শ্বে ১৩ একর ৬৫ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করে। সংশ্লিষ্ট ভূমি এলএ কেইচ নংÑ০৫, ১৯৬৭-৬৮ ইং সালে পাউবো কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে স্থানীয়রা উক্ত জায়গায় মাছ চাষ ও ফসল চাষ করে আসছে। সোনাগাজীবাসি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত জায়গাটি ভূমিদস্যূদের হাতে না দিয়ে উক্ত জায়গায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি মূল্যবান এ জমির উপর এক শ্রেণির কতিপয় ভূমিদস্যূ চক্রের লোলপ দৃষ্টি পড়ে। ভূমিদস্যূ চক্রটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভূমিটি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জেলা প্রশাসকের ০১ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত করে গ্রাস করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে পাউবো কর্তৃপক্ষ ভূমিদস্যূ চক্রটির বিরুদ্ধে সোনাগাজী সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ সময় তারা সংশ্লিষ্ট ভূমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন করেন। ভূমিদস্যূ চক্রটি মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে মামলাটিকে স্থগিত করে রাখে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পূনরায় ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে আর একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু মামলা আদালতের বিচারাধীন থাকা স্বত্ত্বেও সোনাগাজী উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ওই চক্রটি নিজেদেরকে ভূমিহীন দাবী করে সংশ্লিষ্ট জমি নিজেদের নামে নথি সৃজন করতে আবেদন করেন। তবে আবেদনকারীরা ভূমিহীন নয় বলে জানা গেছে।গত ২৫ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভার:) শারমিন আলম উপজেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভা আহবান করেন । সভায় ৩০টি নথির আবেদন উপস্থাপন করা হলে ৩০টি আবেদনের মধ্যে শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের উক্ত ভূমির আবেদনের নথিগুলো সভায় পাশ করা হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ইসমাইল হোসেন সহ একাধিক সদস্য আবেদনকারীরা ভূমিহীন নয় বলে দাবি তুলে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু সভায় উপস্থিত অনেক সদস্যের বক্তব্যের প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে রহস্যজনকভাবে তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি রেজুলেশন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দপ্তরে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। ভূমিহীন আখ্যায়িত করে যাদের নামে নথি সৃজন করার অপচেষ্টা চলছে তাদের মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও রয়েছে বলেও জানা গেছে। যা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী। অতি দ্রুততার সাথে নথিটি পাশের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় জনমমনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। 
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভূমি অফিসের  এক ব্যক্তি জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের বস করতে ভূমিদস্যূ রাজু ৫০ লক্ষ টাকা  খরচ  করেছে বলে জানিয়েছেন। খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় যাদের নামে ভূমি বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে তারা হলেন, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে সাহাব উদ্দিনের নামে ২০ শতক, আজিজুল হকের ছেলে সাহাব উদ্দিনের নামে ২০ শতক, ভাদাদিয়া গ্রামের মৃত আবু আহমেদের স্ত্রী মনিকা আহম্মদের নামে ১ একর, তার ছেলে গোলাম হোসেনের নামে ৭০ শতক, মৃত সুলতান আহাম্মদের ছেলে আবদুল গফুরের নামে ৪০ শতক, মৃত ছাবের আহম্মদের ছেলে রসুল আহাম্মদের নামে ২৪ শতক, মৃত আবদুল ছোবানের ছেলে মোঃ আবুল কাশেমের নামে ৪০ শতক, তার ভাই আবু ইউসুফের নামে ২০ শতক, মৃত নজির আহাম্মদের ছেলে সফি উল্যাহর নামে ২০ শতক, আবদুল মান্নানের ছেলে মোঃ মর্তূজার নামে ২৫শতক, মৃত নুর আহাম্মদের ছেলে জামাল উদ্দিনের নামে ৩০ শতক এবং ভোয়াগ গ্রামের বসির আহাম্মদের ছেলে রুহুল আমিনের নামে  ৩০ শতক। 
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিক উল্যাহ জানান, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে উক্ত বিভাগের ভূমিগুলো গ্রাস করার অপচেষ্টা চলছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে মামলা  করে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়