জলাশয়ে মাছ চাষে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল অ্যাকোয়াকালচার প্রোডাকশন স্ট্যাটিসটিকস ফর দ্য ইয়ার ২০১১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, চাষকৃত মাছ উৎপাদনে (ফিশ অ্যাকোয়াকালচার) চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে সম্প্রসারণ হারও বেশি।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বছরে ১৫ লাখ ২৪ হাজার টন। যা প্রতি বছর গড়ে ১৬ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হচ্ছে। চীনে এর উৎপাদন ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৬২ হাজার টন। আর ভারতে উৎপাদন ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার। ভিয়েতনামে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ও ইন্দোনেশিয়ায় ২৭ লাখ ১৮ হাজার টন উৎপাদন হচ্ছে।
এদিকে দেশে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বাড়ার পেছনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলেদের পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড দেওয়ায় তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মৎস্য জেলা হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। অ্যাকোয়া কালচারের উন্নয়নে এ অঞ্চল মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারির সংখ্যা প্রায় ৯৫০ এবং নার্সারি প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় হ্যাচারি রয়েছে ২০০টি আর নার্সারি সাড়ে তিন হাজারের অধিক।
প্রাথমিকভাবে কয়েকটি জেলায় জেলেদের পরিচয়পত্র দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে তা সব জেলায় সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানান মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, "২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি হেক্টরে মাছের উৎপাদন ৩ থেকে ৪ টনে উন্নীত করা হবে। মাছ চাষ বাড়ানোর জন্য অধিদপ্তর থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে গ্রামীণ এলাকার নারীদেরও মাছ চাষে যুক্ত করা। পাশাপাশি চিংড়ির আবাদ সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৬২ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। যা আগের বছর ছিল প্রায় ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন। এর প্রায় অর্ধেক আসছে জলাশয়ের চাষ থেকে। পুকুর, আধাবদ্ধ জলাশয়, বাঁওড় ও চিংড়ি খামারে উৎপাদন হচ্ছে ৪৮ শতাংশ মাছ। এছাড়া মুক্ত জলাশয় বা নদী ও মোহনা, সুন্দরবন, বিল, কাপ্তাই লেক ও প্লাবনভূমিতে উৎপাদন হচ্ছে ৩৪ শতাংশ। আর সমুদ্র থেকে আসছে ১৮ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, একজন মানুষের বছরে মাছের প্রয়োজন ১৮ কেজি। কিন্তু প্রয়োজনের বিপরীতে মাছ গ্রহণ করছে মাত্র ১৫ দশমিক ৪ কেজি। একজন মানুষের দৈনিক ২ দশমিক ৬ কেজি হিসাবে বাংলাদেশে ১৫ কোটি মানুষের জন্য বছরে মাছের ঘাটতি ৩ লাখ ৯০ হাজার টন। তাই চাষকৃত মাছের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই এ চাহিদা পূরণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, জিডিপিতে মৎস্য এবং প্রাণী ও পোলট্রি খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও কৃষিঋণ বিতরণে মৎস্য খাত উপেক্ষিতই রয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণের মধ্যে মৎস্য খাতে বিতরণ হয়েছে এর মাত্র ১০ শতাংশ।---পরিবর্তন
খবর বিভাগঃ
সর্বশেষ সংবাদ
সাফল্য
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়