Saturday, September 14

যশোরের পল্লীতে অদৃশ্য সাপ !


যশোর: অদৃশ্য সাপ আতংকে দিন কাটাচ্ছেন যশোর জেলার বাঘারপাড়ার উপজেলার এক গ্রামের সাড়ে তিন হাজার মানুষ। শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন  বয়সের সহা¯্রাধিক মানুষকে সাপে কামড়িছে স্থানীয়রা জানান। অনেককেই কামড়িয়েছে একাধিকবার। একজনকে কামড়িয়েছে ১৭ বার। এ আতংকে বন্ধ হয়ে গেছে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তবে এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র একজনের। সকলেই স্থানীয় ওঝার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। 
বাঘারপাড়া উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে ধলগ্রাম ইউনিয়নের আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস। গত ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এ গ্রামের মৃত আবুল হাসানের ১০ বছরের ছেলে মারুফকে সাপে কামড়ায়। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ওঝা দিয়ে চিকিৎসা। অবস্থার অবনতি হলে রাত দুইটার দিকে মারুফ নিয়ে আসা হয় বাঘারপাড়া হাসপাতালে। হাসপাতালে পৌছালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষলা করেন। এরপর থেকে প্রায় প্রতি দিনই ১০ থেকে ২০ জনকে সাপে কামড়ানো শুরু করে। 
শনিবার সকাল দশটার দিকে এ গ্রামে পৌঁছে রাস্তার পাশেই এক বাড়িতে  চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনে সে বাড়িতে ঢোকা হয়। সেখানে দেখা যায়, সাপে কামড়ানো পৌনে দুই বছরের এক শিশুকে চিকাৎসা দিচ্ছে একজন ওঝা। শিশুটির নাম পূজা শিকদার। তার বাবার নাম প্রদীপ শিকদার। ভয়ে ও যন্ত্রনায় শিশুটি চিৎকার করছে। পূজার মা তাকে চেপে ধরে আছে। বাবা তালের পাখা দিয়ে বাতাস করছে। সত্তরউর্ধো বয়সের ওঝা বিজন বিশ্বাস পুজাকে ঝাড় ফুঁক করছে। অন্য আরেকজন পায়ের আঙ্গুলে দড়ি বেঁধে টানাটানি করছে। এ প্রকৃয়া চলে প্রায় ২০ মিনিট। এক পর্যায়ে ওঝা বিজন বিশ্বাস উঠে দাড়িয়ে বলে আর বিষ নেই। ওকে ছেড়ে দেও। ছেড়ে দেওয়ার পরপরই পূজার কান্না থেমে যায়। পূজার চিকিৎসা শেষ হতে না হতেই হাজির হয় সাপে কামড়ানো আরেকজন। তার নাম অনিতা বিশ্বাস (৪০)। সে এ গ্রামের অজিত বিশ্বাসের স্ত্রী। বৃদ্ধ ওঝা বিজন বিশ্বাস ক্লান্ত। এ কারণে হাজির হন আরেক ওঝা। তার নাম বিজন বিশ্বাস (৫৬)। তিনি শুরু করেন অনিতা বিশ্বাসকে ঝাড় ফুক। ১০ মিনিট পরেই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এর আসে আন্দুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র শাকিলসহ বেশ কয়েকজন। সকলকে একইভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। 
ওঝা শ্রীবাস বিশ্বাস ও বিজন বিশ্বাস জানান, তারা গত ১০/১২ দিনে দুই থেকে আড়াইশত সাপে কামড়ানো মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছেন। 
অনেকেই জানান এদের দু’জন থেকে ভাল ওঝা হচ্ছে হেনা বেগম। সেখানে ভীড় হচ্ছে বেশি। সেখানেও গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। একেরপর একজনকে চিকিৎসা দিচ্ছে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি গত কয়েকদিনে পাঁচ শতাধিক সাপে কামড়ানো মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে দিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাপের হাত থেকে কেউই রেহাই পচ্ছে না। 
সময় তখন সকাল সাড়ে এগারটা। এ সময় হাজির হন বাঘারপাড়া সাস্থ্য কপ্লেক্্েরর ডাক্তার হারুনর রশিদ। তার সাথে ছিলেন একজন স্বাস্থ্য সহকারী। ডাক্তার আসার কথা শুনে সেখানে জড়ো হয় ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ। ডাক্তার সাপে কামড়ানো বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলেন এবং সাপে কামড়ানো স্থান দেখেন। 
এ সময় ডা. হারুনর রশিদ জানান, ক্ষত স্থান দেখে মনে হয়না সাপে কামড়িয়েছে। কেউ সাপ দেখেছে কিনা জানতে চাইলে কেউই বলেননি তারা সাপ দেখেছে। সাপে কামড়ানো কয়েজন মানুষ ক্ষত চিহ্নও দেখাতে পারেনি। ডাক্তার এ সময় উপস্থিতিদের প্রশ্ন করেন দুই বা তিন দিন আগে একজন মানুষকে সাপে কামড়ালে কি ক্ষত স্থান মিলিয়ে যায়? কেউই এর উত্তর দেননি। ডাক্তার এ সময় সকলের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা সবাই মানষিক আতংকে ভুগছেন। পিঁপড়ায় কামড়ালেও আপনারা ভাবছেন সাপে কামড়িয়েছে। উপস্থিত সকলেই তখন ডাক্তারের সাথে হট্রগোল শুরু করে দেয়। তাদের সবার দাবি এ ঘটনা অদৃশ্য সাপের কারণে হচ্ছে। ডাক্তার দুই একজন রোগিকে হাসপালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে সকলেই বলে ওঠেন তারা গ্রামে বসেই চিকিৎসা পাচ্ছে। হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। এ সব কথা হচ্ছিল আন্দুলবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠে। এ মাদ্রসার সুপার মাও. ওলিয়ার রহমান বলেন এ বিষয়টি একটি বালা। আমাকেও সাপে কামড়িয়েছে। আল্লা এ গ্রামে অদৃশ্য সাপ পাঠিয়েছে। এ থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য তারা গ্রামের সব মসজিদেই দোয়া অনুষ্ঠান হয়েছে। নোয়াপাড়া পীর বাড়ির খাদেম গোলাম মোন্তফা সাহেব গত মঙ্গলবার এ গ্রামে এসে সব দিকে বন্ধ দিয়ে গেছে। তিনি দিয়ে গেছেন নীল ও কালো সুতা, মাটি, তেল পড়া। এ গুলো ব্যবহার করলে বালা আসতে আসতে চলে যাবে। মাদ্রসা মাঠে কথা হয় আন্দুল বাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের সাথে। তার বক্তব্য ও মাদ্রসা সুপারের বক্তব্যর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি জানান তার বিদ্যালয়ে গত সোমবার ৪ জন, মঙ্গলবার ১২ জন ও বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে ২৭ জন ছাত্র ছাত্রীকে কামড়িয়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই এ দিন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে বসেই জানাযায় ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও একই কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনে কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাফুজুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, তার বিদ্যালয়ে বেলা ১১ টার দিকে ছাত্রী কমানরুমে চিল্লাপাল্লা শুরু হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় কয়েক জনকে সাপে কামড়িয়েছে। এ কারনে তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়