Tuesday, September 24

বুধবার স্কুলছাত্রী স্বপ্নার বিয়ে


চাটমোহর (পাবনা): পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর সেন্ট রীটাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী সংগীতা ইসলাম স্বপ্না’র বিয়ে বুধবার। আজ মঙ্গলবার তার গায়ে হলুদ। যে বয়সে বান্ধবীদের সাথে স্কুলে যাবার কথা, সবার সাথে আনন্দ আড্ডায় মেতে থাকার কথা সেই বয়সে তাকে যেতে হচ্ছে শ্বশুড়বাড়ি নামক অজানা এক পরিবেশে। জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী স্বপ্নার বয়স ১৩ বছর ১১ মাস। বাল্যবিয়ের মাধ্যমে স্বপ্নার লেখাপড়া করে বড় হবার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ভাদরা গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও নারজিনা বেগমের চার মেয়ের মধ্যে সবার বড় স্বপ্না ৫ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিল। এছাড়া ৮ম শ্রেণীতে জিপিএ ৪.৮৬ পায় সে। স্কুল ও গ্রামে একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। স্বপ্নার ছোট আরও তিন বোন রয়েছে। এক বোন রতœা ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ও তার ছোট স্বর্না ২য় শ্রেণীতে পড়ে। তার বাবা শফিকুল ইসলাম মুরগীর খামার করে সংসার চালান।
ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী স্বপ্নার জন্ম তারিখ ০৪-১০-১৯৯৯ ইং। নিবন্ধন নং ১৮৫৫। নিবন্ধনের তারিখ ২০-০৪-২০০৭ ইং। চাপ সৃষ্টি করে স্বপ্নার সম্মতি নিয়ে তার পরিবার এই বাল্যবিয়ের আয়োজন করেছে বলে জানা গেছে। পাত্র একই উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে জনি। পেশায় মুদিখানার দোকানদার। 
এবিষয়ে মথুরাপুর সেন্ট রীটাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরী মনিকা রিবেরু জানান, স্বপ্নাকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানিয়েছে পরিবারের পীরাপীরিতে এই বিয়েতে মত দিয়েছে। তার বাবা-মাও জানিয়েছেন মেয়ের মত নিয়েই তারা বিয়ের আয়োজন করেছেন। এখানে আমাদের কি করার আছে। স্বপ্না মেধাবী ছাত্রী উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষিকা বলেন,  তারপরও আমরা বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়ে রেখেছি। 
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক বাল্যবিয়ে বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ওই স্কুলছাত্রীর বয়স বাড়িয়ে নতুন জন্ম নিবন্ধন দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান ইতিপূর্বেও তার ইউনিয়নের একাধিক বাল্যবিয়ে দেয়ায় সহায়তা করেছেন। তার সদিচ্ছার অভাবেই মথুরাপুর ইউনিয়নে একের পর এক বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে।
এবিষয়ে মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার আজিজুল হক স্কুলছাত্রী স্বপ্নাকে চেনেননা দাবি করে বলেন, বিয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আমি পরিষদ থেকে মেয়েটির বয়স বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন দেই নাই।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন না বলে এই প্রতিনিধি কাছে স্কুলছাত্রীর নাম ঠিকানা নিয়ে বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সাথে কথা বলে বিয়ে বন্ধের পদক্ষেপ নিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাল্যবিয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে স্কুলছাত্রী স্বপ্না মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানায়, আমি বিয়েতে রাজী ছিলাম না। বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল না। আমি তো লেখাপড়া করতে চেয়েছিলাম। সবার চাপে বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়েছি। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানে না স্বপ্না। এখন বিয়ে বন্ধ করে আর কি হবে।
স্বপ্নার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিয়ে বন্ধ করার সুযোগ নেই। ছেলেপক্ষের কোনো যৌতুক দাবি নেই। বিয়েতে তারা ৭০ জন লোক আসবে। তাছাড়া বিয়ের পর আমার মেয়েকে পড়াবে এমন শর্তেই বিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাল্যবিয়ের কুফল ও বাল্যবিয়ে দেবার শাস্তি সম্পর্কেও তিনি জানেন না বলে জানান। মেয়ের বিয়ে দেবার বয়স হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়